পদত্যাগ করলেন গভর্নর আতিউর রহমান
ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বিতর্কের প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাওয়ার আগে ড. আতিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আমি পদত্যাগ করলে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভালো হয়, দেশের ভালো হয়, তাহলে পদত্যাগ করতে আমার দ্বিধা নাই। আমি পদত্যাগপত্র লিখে বসে আছি। প্রধানমন্ত্রী বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি পদত্যাগ করব।”
এর আগে সোমবার ড. আতিউর রহমান ভারত থেকে দেশে ফিরলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তলব করা হয়। তিনি দেশে ফিরেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান।
সোমবার বিকেল ৪টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে নামেন এই অর্থনীতিবিদ। ওই সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি তিনি। পরে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সঙ্গে দেখা করার কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তা স্থগিত করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি করে নেওয়ার খবর প্রকাশ হলে দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিদেশের গণ্যমাধ্যমেও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদে পরিণত হয়।
এ টাকার একটি অংশ শ্রীলংকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ দাবি করলে শ্রীলংকা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেশটির গণমাধ্যমকে জানান, তথ্যটি ঠিক নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের খোয়া যাওয়া টাকা শ্রীলংকা থেকে উদ্ধার করা হয়নি।
ফিলিপাইনের ডেইলি ইনকোয়ারারে ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে চুরির তথ্য উঠে এলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচনার ঝড় ওঠে।
তদন্তে জানা যায়, ৪ ফেব্রুয়ারি সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে হ্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই অর্থ ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকে সরিয়ে ফেলা হয়।
শ্রীলঙ্কার একটি ব্যাংকে আরো ২০ মিলিয়ন ডলার সরানো হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক শুরুতেই বিষয়টি টের পেলেও কর্মকর্তারা তা গোপন করেন। খবরটি অর্থমন্ত্রী মুহিতকে এক মাস পর পত্রিকা পড়ে জানতে হয়।
অর্থ লোপাটের বিষয়টি চেপে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে তা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে তাকে ‘অযোগ্যতা’ আখ্যায়িত করে মুহিত বলেছেন, “এই ‘স্পর্ধার’ জন্য ‘অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যাও হাজির করেছেন ড. আতিউর। ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, “এ কথা ঠিক যে দেশের স্বার্থে অর্থ চুরি যাওয়ার বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে একটু পরে জানিয়েছিলাম। তবে দেশের স্বার্থেই সেটা আমি করেছি। কারণ সঙ্গে সঙ্গে জানাজানি হয়ে গেলে আরও সাইবার অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা ছিল।”
একেম একটি বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির মধ্যে বিদেশে যাওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “ভারতে আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ একটি সভা ছিল, যেখানে সংস্থাটির এমডি ক্রিস্টিন ল্যাগার্ড, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। সভার গুরুত্ব বিবেচনা করেই আমি সেখানে গিয়েছিলাম। আর এখন ডিজিটাল যুগ, সব সময়ই আমি অনলাইনে খবর রেখেছি, কাজ করেছি।”
এদিকে, রিজার্ভ চুরি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমানকে সদস্য নিয়োগ দেয় সরকার।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ
সংশ্লিষ্ট লেখা:
রিজার্ভ লুটের ঘটনায় কয়েকটি প্রশ্ন
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ফজলে কবির
এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশে দাঁড়ানো জরুরি!
বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলা সিআইডিতে
আতিউরের পদত্যাগ সৎ সাহসের বিরল দৃষ্টান্ত: প্রধানমন্ত্রী
ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগের সচিব ওএসডি
রিজার্ভ চুরি পদত্যাগী গভর্নর আতিউর রহমানের লিখিত বক্তব্য
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২ ডেপুটি গভর্নরকে অব্যাহতি
‘রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফেডারেল রিজার্ভই দায়ী’
রিজার্ভ চুরি: অজ্ঞাত আসামি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলা
রিজার্ভ চুরি তদন্তে শাবেক গভর্নরের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের কমিটি
নিউজবাংলাদেশ.কম