গণপরিষদ সদস্য মমতাজ বেগম আর নেই
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর গঠিত গণপরিষদের সদস্য জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক মমতাজ বেগম মারা গেছেন।
জাতীয় মহিলা সংস্থার পরিচালক জি এম রফিকুল ইসলাম জানান, শনিবার রাত ১২টার দিকে ঢাকার ভুতের গলিতে নিজের বাসায় মারা যান মমতাজ বেগম। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
রফিকুল ইসলাম বলেন, তার বয়স হয়ে গিয়েছিল, লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটতেন। কয়েক দিন ধরেই তার জ্বর ছিল, শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। তবে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় তার মধ্যে সংক্রমণ পাওয়া যায়নি বলে জাতীয় মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মাকসূরা নূর জানান।
রোববার জোহরের নামাজের পর ভুতের গলি জামে মসজিদে জানাজা শেষে ঢাকায় মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে বলে জানান মাকসূরা।
১৯৭০ এর নির্বাচনে যে সাতজন নারী জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, মমতাজ বেগম তাদেরই একজন। পরে তিনি গণপরিষদের সদস্য এবং প্রথম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য হন।
এই মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন এক সময়।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বার্তায় বলেছেন, “জাতীয় মহিলা সংস্থার সাবেক এ প্রতিভাধর চেয়ারম্যান স্বীয় কর্মের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।”
মমতাজ বেগম ১৯৬৭ সালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পড়ছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তখন স্নাতকের ছাত্রী। তারা একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।
কুমিল্লা মহিলা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সহ সভাপতি মমতাজ মুক্তিযুদ্ধের সময় আগরতলায় অস্ত্র চালনা এবং যুদ্ধ পরিচালনার ওপর প্রশিক্ষণ নেন৷ পরে নিজেও বিভিন্ন স্থানে অন্যদের প্রশিক্ষণ দেন।
সে সময় ‘মহিলা সংঘ' নামে একটি সেবা সংগঠনের মাধ্যমে শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ এবং উদ্বুদ্ধকরণের কাজেও তিনি যুক্ত ছিলেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাতির পিতার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ও নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনের জন্য ‘নারী পুনর্বাসন বোর্ড’ গঠিত হলে মমতাজ বেগম সেই বোর্ডের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশে নারী আন্দোলন ও নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকার জন্য বেগম রোকেয়া পদকে ভূষিত হয়েছেন মমতাজ।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য মমতাজ ২০০৯ সালের মার্চে জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। আমৃত্যু তিনি সেই দায়িত্বে ছিলেন।
অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমানের স্ত্রী মমতাজ বেগম নিজেও একজন আইনজীবী ছিলেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন তিনি।
মমতাজ বেগমের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “তিনি ছিলেন একজন সফল রাজনীতিবিদ ও আলোকিত মানুষ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি তৈরির কাজে এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্থায়ী সরকারের ভিতরে থেকে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা অর্জনে অসামান্য অবদান রেখেছেন এই বীর নারী।
বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পরও থেমে যাননি মমতাজ বেগম৷ আমৃত্যু চালিয়ে গেছেন দেশ ও জাতি গড়ার কাজ৷ বাংলার নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং সমাজে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।”
মমতাজ বেগমের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এক বিবৃতিতে বলেন, “অধ্যাপক মমতাজ বেগম অ্যাডভোকেট ছিলেন একজন মহিয়সী নারী। তিনি ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ঊণসত্তরের গণঅভ্যুত্থানসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুব কাছে থেকে রাজনীতি করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান জাতি গৌরবের সাথে স্মরণ করবে।”
সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদও অধ্যাপক মমতাজ বেগমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি