আমাদের স্বল্পশিক্ষা ও সংক্ষিপ্ত ‘বঙ্গবন্ধু’
[ শোকাবহ ১৫ আগস্ট, মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা]
ফারুক আফিনদী
বঙ্গবন্ধু এমন একটি নাম যা উচ্চারণ করতে গেলে দেশপ্রেমিক নাগরিক মাত্রই মনে সমীহ, শ্রদ্ধা সর্বোপরি একটি বিস্ময় জাগবে এবং জাগে। কখনো কখনো এই ভক্তিটুকু শ্রদ্ধাটুকু দলমত নির্বিশেষে লক্ষ্য করা যায় না, তা নয়। বাংলাদেশ মানে নগর নয়, বাংলাদেশ মানে ৬৮ হাজার গ্রাম। বাংলার গ্রামে গ্রামে সাধারণ্যে বঙ্গবন্ধু এক মহানায়ক, সেখানে কোনও দল নেই মত নেই, দল-মত রয়েছে রাজনীতিতে, নির্বাচনে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এসব কিছুর ঊর্ধ্বে।
বঙ্গবন্ধুর পুরো নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতি এককথায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালিকে ‘বঙ্গবন্ধু’ বলে ডাকে। কেউ ‘শেখ মুজিব’ বলেন, কেউ ‘মুজিব’। ‘শেখ মুজিব’, ‘মুজিব’ যে নামই বলি না কেন, ‘মুজিব’ মুজিবই। এতে জাতির পিতার প্রতি এতটুকুন অশ্রদ্ধা হয় না কখনো। কেন না মুজিব মানে একটা জাতি, মুজিব রাষ্ট্রের ভিত্তি।
একটি শিক্ষিত সমৃদ্ধ দেশ গঠনের স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর। কিন্তু সব কিছু এলোমেলো করে দিলো ১৫ আগস্ট। কুশিক্ষা অশিক্ষার ছায়া যেন ঢেকে ফেলছে আমাদের। আমরা যেন অজ্ঞতার ভেতরে থেকে অসচেতনভাবে অসম্মান করে চলেছি জাতির পিতাকে। এ কাজটা কোনো অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী নয়, করছি শিক্ষিতদেরই একটা শ্রেণি। এ হচ্ছে গণমাধ্যম- জাতির কথিত বিবেক।
কোনো নামে সংক্ষিপ্তকরণ নতুন কোনো প্রবণতা নয়। সংক্ষিপ্ত হয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম। এ রেওয়াজ বহুদিনের এবং এটা সময়ের সাথে প্রতিনিয়ত খাপ খাইয়ে চলে।
কিন্তু এর ধারাবাহিকতায় গণমাধ্যমের কিছু অর্ধশিক্ষিত কর্মী যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম অসম্মানকরভাবে সংক্ষিপ্ত করছে সেটা তারা নিজেরা জানতেও পারছে না।
বঙ্গবন্ধুর নামে দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, স্থাপনা রয়েছে। সংগঠন রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত নামকরণ বিএসএমএমইউ (ইংরেজি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি’ নাম অনুযায়ী)। ইংরেজিতে সংক্ষিপ্তকরণ কখনো উদ্ভট বা বিদঘুটে হওয়ার অবকাশ নেই। কিন্তু বাংলায় যথেষ্ট পরিমাণে এই সুযোগ রয়েছে। বিএসএমএমইউকে যদি বাংলা নাম অনুসারে সংক্ষেপ করা হয় বশেমুবি, যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সংক্ষিপ্ত রূপ হবে বশেমু, তাহলে বঙ্গবন্ধুর প্রতি অসম্মান জানানো হবে না?
বঙ্গবন্ধুর নামে গোপালগঞ্জে স্থাপন করা হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যান নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটির সংক্ষিপ্ত নামরূপ চালু থাকলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সংক্ষিপ্তকরণ হয়নি। কিন্তু বেশ কয়েকবছর ধরে দেখা যাচ্ছে গণমাধ্যমে একে সংক্ষেপে লেখা হচ্ছে বশেমুরবিপ্রবি, যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে সংক্ষিপ্ত রূপ করা হয়েছে বশেমুর। ‘বশেমুরবিপ্রবি’ নামটা শুনতেই কেমন যেন একটা অস্বস্থি তৈরি হয়। উদ্ভট ও বিদঘুটে মনে হয়। সংক্ষিপ্তকরণেরও একটা সীমা থাকে। বশেমুরবিপ্রবি’র উচ্চারণ শাবিপ্রবি’র (শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) মতো সঙ্গত দৈর্ঘ্যের নয়। দেখা যেতে পারে কয়েকবার উচ্চারণ করে- বশেমুরবিপ্রবি বশেমুরবিপ্রবি...। উচ্চারণ সাবলীল তো নয়ই, বরং এর মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি স্বল্পশিক্ষাপ্রসূত অসম্মানই প্রকাশ পায়, অবমাননাই প্রকাশ পায়।
বিশ্বাস করি যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামটি একটু বেশিই দীর্ঘ। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া এর বিস্তার ও অস্তিত্ব। এ নামের কোনো সংক্ষেপ চলে না। হতে পারে অংশবিশেষ- বঙ্গবন্ধু বা শেখ মুজিব।
এখন রাষ্ট্রের উচিত হবে সরকারিভাবে ‘বশেমুরবিপ্রবি’ জাতীয় বিদঘুটে সংক্ষিপ্তকরণ বন্ধ করা। বশেমুরবিপ্রবি উচ্চারণ যতটা উদ্ভট লাগে এর চেয়ে বরং ‘বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ বললে অনেক সাবলীল মনে হয়। এতে শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতি থাকে সমহিমায়।
ঢাকা ১৫ আগস্ট ২০২০
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ