News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:৫১, ৯ জুন ২০২০
আপডেট: ১৫:৫৬, ১ অক্টোবর ২০২০

বসু পরবর্তী ভারতীয় বাঙ্গালী নেতৃত্ব, যারা পারেননি, পেরেছেন বা চেষ্টা করেছেন

বসু পরবর্তী ভারতীয় বাঙ্গালী নেতৃত্ব, যারা পারেননি, পেরেছেন বা চেষ্টা করেছেন

১৯৩৯ সালে সুভাষ চন্দ্র বসু কংগ্রেস হাইকমান্ডের চাপে কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব ছেড়ে দিতে বাধ্য হবার পর আর কোন বাঙ্গালী কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। অথচ বিদেশী হিসেবে পাদপ্রদীপ থেকে দূরে থাকায় আমার অসম্পূর্ণ জ্ঞানে বলতে পারি, ১৯৪৭ সালের পর থেকে কমপক্ষে ৫ বাঙ্গালী কংগ্রেস নেতা বিভিন্ন সময়ে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। এরা হচ্ছেন- বিধান চন্দ্র রায়, অতূল্য ঘোষ, সিদ্ধার্থ শংকর রায় (দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের দৌহিত্র), আবুল বরকত আতাউল গণি খান চৌধুরী, এবং প্রণব মুখার্জী। অনেকে এর বাইরে অজিত পাঁজা আর প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সীর কথাও বলতে পারেন, তবে তাঁদের রাজনৈতিক কাঁধ সম্পর্কে আমার ধারণা কম।

প্রণব মুখার্জীর পর পশ্চিমবঙ্গে কোন পার্টি থেকেই কেন্দ্রীয় স্তরে ওঠার মতো নেতৃত্ব এখন আর নেই।

১৯৭৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টানা মুখ্যামন্ত্রীত্ব করেছেন কমিউনিস্ট পার্টির বরিষ্ঠ নেতা জ্যোতি বসু। আমার ধারণা তিনি বিশ্বে যেকোন জাতীয় বা প্রাদেশিক স্তরে গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতাসীন হওয়া কমিউনিস্ট প্রশাসকদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ছিলেন। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের একাধিপত্য কমতে শুরু করে। ক্ষমতায় যেতে প্রাদেশিক দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

১৯৯৬ সালে এমনেই ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছা কয়েকটি ছোট দল ও কমিউনিস্ট পার্টির জোট ইউনাইটেড ফ্রন্ট কার্যত অবিসংবাদিতভাবে জ্যোতি বসুকে তাদের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করেছিলো। এধরণের খুচরা দল সমৃদ্ধ জোটে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য এহেন ঐক্যমত্য দেখা যায়না। জ্যোতি বসুর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়া সময়ের ব্যাপার ছিলো। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বাঁধ সাধে বসুর নিজ দল সিপিএম। পাঞ্জাবের হরকিষাণ সিং সুরজিতের নেতৃত্বাধীন পলিটব্যুরো জ্যোতি বসুর উপর প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দেয়। নিষ্ফল বেদনায় জ্যোতি বসু বলেন, তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেয়া কমিউনিস্ট পার্টির মহাভ্রান্তি।

পশ্চিমবঙ্গের গদিনশীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর উত্থানেও কেন্দ্রের সাথে বিদ্রোহের ইতিহাস আছে। তিনি কংগ্রেস থেকেই রাজনীতি শুরু করেন। দ্রুত কংগ্রেসে তাঁর উত্থান ঘটছিলো। অল্প বয়সেই তিনি কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে চলে যান। আশির দশকের মাঝামাঝি তিনি কংগ্রেসের যুব শাখার প্রেসিডেন্ট অব্ধি হয়ে পড়েন। পরে তিনিও কংগ্রেসে টিকতে পারেননি। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস থেকে বের হয়ে গঠন করেন তৃণমূল কংগ্রেস।

এখন পর্যন্ত ভারতে বাঙ্গালীদের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি একজন প্রেসিডেন্ট আর একজন লোকসভা স্পীকার (সোমনাথ চ্যাটার্জী)।

তবে ভারতের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে ওজনদার ছিলেন এই পদে আসীন একমাত্র বাঙ্গালী প্রণব মুখার্জী। তিনি দফায় দফায় পররাষ্ট্র, অর্থ এবং প্রতিরক্ষা দফতর সামলেছেন। ২০০৪ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মুখার্জী ছিলেন সংসদ নেতা অর্থাৎ লোকসভার নেতা। এই পদে প্রধানমন্ত্রীগণ ছাড়া এতোটা দিন একমাত্র তিনিই ছিলেন।

তিনি আশা করেছিলেন, ২০০৪ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন, আর মনমোহন সিং হবেন প্রেসিডেন্ট। পরে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের অধীন গুরুত্বপূর্ণ পোর্টফলিও পান তিনি। কিন্তু ততোদিনে তিনি রাজনৈতিকভাবে হাতী হয়ে গেছেন।যেখানে তাঁর লাগে কলার বাগান, সেখানে তাঁকে দুধের বালতি ধরিয়ে দিলেই কি আর মন ভরে? তাই আক্ষেপ করে প্রণব বাবু নিজের বইয়ে লিখেছেন, হিন্দী জানেন না বলেই তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়লো, হুবহু একই অভিযোগ করেছিলেন দাক্ষিণাত্যের কে কামরাজ। জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর সময় কামরাজ ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি। তিনি অহিন্দীভাষী নেতাদের একটি অতীব প্রভাবশালী গ্রুপের নেতৃত্ব দিলেও তাঁর বা তাঁর সিন্ডিকেটের অন্য কারো পক্ষে প্রধানমন্ত্রী হওয়া সম্ভব হয়নি। দুর্বল হলেও উত্তর ভারতীয় হবার সুবাদে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৬৬ সালে শাস্ত্রীর আকস্মিক মৃত্যুর পর কামরাজকেই অহিন্দীভাষী নেতারা প্রধানমন্ত্রীত্বের দাবী ঘোষণা করতে চাপ দিলে তিনিও আক্ষেপ করে প্রণব মুখার্জীর মতোই বলেছিলেন যে, তিনি হিন্দী জানেন না...।

(সুভাষ চন্দ্র বসুর মাথার এই টুপিটা আমার বেশ পছন্দ। বিশেষত এর জমিনের নকশার আইডিয়াটা। আজাদ হিন্দ ফৌজ শুরু করে সামরিক উর্দি ও টুপি পরিধান করলেও তার আগে সুভাষ বসুর স্টাইলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিলো এই টুপি। এমন টুপি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও পড়তে দেখা গেছে। তবে এই ডিজাইনটি পরে আর জনপ্রিয়তা পায়নি। আমি এখানে বলতেই পারি, নেহরুর খদ্দরের কিস্তি টুপির কাছে বসুর এই নকশি টুপিও হেরে গেছে। নচেৎ এটা ভারতের রাজনীতিবিদদের বারোয়ারী ফ্যাশনে স্থায়িত্ব পেতো।)

নিউজবাংলাদেশ.কম/এএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়