News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১৯ মার্চ ২০২০
আপডেট: ০৩:২৪, ১৩ এপ্রিল ২০২০

জন্মমাসেই চলে গেলেন কিংবদন্তী লোকগবেষক ড. আশরাফ সিদ্দিকী

জন্মমাসেই চলে গেলেন কিংবদন্তী লোকগবেষক ড. আশরাফ সিদ্দিকী

‘তালেব মাস্টার’ বা ‘গলির ধারের ছেলেটি’ কে না পড়েছে! সেই কালজয়ী লেখক আশরাফ সিদ্দিকী আর নেই। বাংলার লোকসাহিত্য, কবিতা, গল্পের অগ্রসৈনিক গেলেন পরলোকে। জন্মমাস মার্চের ১৯ তারিখে নিলেন চিরবিদায়। ‘করোনা’ কেলেংকারির ডামাডোলে ঘটালেন নীরব সমাধিযাত্রা।

বাংলাদেশে পঞ্চাশ দশকের লেখক হিসেবে সমধিক পরিচিত। যদিও ১৯৪৭ পর্যন্ত শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে পড়েছেন। জীবদ্দশায় রবীন্দ্রনাথ তরুণ আশরাফের কবিতা পড়েছিলেন। ইতিবাচক বললেও আশরাফ সিদ্দিকী অন্য শাখায় অধিকতর আলোকিত। বাংলার লোকসাহিত্যকর্মে তিনি শীর্ষ প্রতিনিধিত্বকারী। এই লোকসাহিত্য বিষয়েই পিএইচডি করেন অ্যামেরিকা থেকে। ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ে, ১৯৬৬ সালে। দ্বিতীয়বারের মতো মাস্টার্সও করেন সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে। সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা: লোকসাহিত্য, কিংবদন্তীর বাংলা, বাংলার মুখ ইত্যাদি।

গল্পকার হিসেবেও সাহিত্যে স্থায়ী আসন পেয়েছেন। ‘গলির ধারের ছেলেটি’' সরকারি শিক্ষালয়ে পাঠ্য হয়। ‘ডুমুরের ফুল’ নামে চলচ্চিত্রায়িত করেন সুপরিচালক সুভাষ দত্ত। একাধিক জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয় সাহিত্যপ্রধান চলচ্চিত্রটি।

নিজেও অসংখ্য পদক-পুরস্কারে ভূষিত লেখক আশরাফ সিদ্দিকী। ১৯৬৮-তে বাংলা একাডেমি, ১৯৮৮-তে একুশে পদক। ১৯৯৯-তে পান লোকশিল্পী ‘আব্বাসউদ্দীন সম্মাননা’। বৃহত্তর রংপুরের নীলফামারীর ডোমারে গিয়েছিলেন। আব্বাসউদ্দীনের শ্বশুরালয়ে গিয়ে বিমুগ্ধ হন। স্থানীয় ‘আব্বাসউদ্দীন একাডেমি’ সম্মানিত করে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে আরেকজন কৃতবিদ্য পদক পান। তিনি ‘এলজিইডি-খ্যাত’ প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক। প্রধান আতিথ্যে আব্বাসউদ্দীনের কৃতীপুত্র মুস্তাফা জামান আব্বাসী। সভাপতিত্ব করেন সংগঠন সভাপতি আইনুল ইসলাম সাহেব। কথা ও কবিতায় উদ্বোধন করি আমি (সালেম সুলেরী)।

ঢাকা ফিরেই ড. আশরাফ সিদ্দিকী মুগ্ধতাসূচক কবিতা লেখেন। দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত কবিতাটির শিরোনাম-- ‘ডোমার ভ্রমণ’। আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল মধুরতর। ১৯৮৪-৮৫-তে আমি দৈনিক জনতা’র ফিচার ইনচার্জ। লোকসাহিত্য বিষয়ক অনেক প্রবন্ধ এনে ছেপেছিলাম। থাকতেন ধানমন্ডির ১৪ নম্বর সড়কের বাড়িতে। তিনি তখন জগন্নাথ কলেজ (পরে বিশ্ববিদ্যালয়)-এ অধ্যক্ষ। ১৯৭৬ থেকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন। তবে অধ্যাপনা করেছেন ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলে। নব্বইয়ের দশকে ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’য় চেয়ারম্যান হয়েছিলেন।

১৯৫১-তে বিয়ে করেন টাঙ্গাইলের অধ্যাপক সাঈদা সিদ্দিকীকে। সন্তানদের হাতে প্রতিষ্ঠিত সুখ্যাত পোশাক বিপণী ‘ক্যাটস-আই’। পাঁচ সন্তানের প্রত্যেকেই শিক্ষিত, সুপ্রতিষ্ঠিত। যথা- সাঈদ সিদ্দিকী, নাহিদ আলম,

রিফাত আহমদ, রিয়াদ সিদ্দিকী। কন্যা তাসমিন সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনারত। 

ড. আশরাফ সিদ্দিকীর জন্ম নানাবাড়ি টাঙ্গাইলে। ১৯২৭-এর পয়লা মার্চ কালিহাতি উপজেলার নাগবাড়িতে। পিতা ময়মনসিংহের আব্দুস সাত্তার সিদ্দিকী। বাবা জনপ্রতিনিধি, মা সমীরণনেসা ছিলেন স্বভাব কবি।

জন্মমাসেই ‘গলির ধারের ছেলেটি’র মৃত্যুপথযাত্রার সারথী হলেন। ৯৩ বছর বয়েসে বনানীর বাসা থেকে জানালেন বিদায়বার্তা। বিদেহী আত্মার স্বর্গীয় প্রশান্তি আমাদের একান্ত কাম্য। শোকাহত পরিবার ও নিকটজনদের প্রতি সহৃদয় সমবেদনা। বাংলা সাহিত্যে অবশ্য-নমস্য-নাম ড. আশরাফ সিদ্দিকীর। 

♦ নিউইয়র্ক, মার্চ ২০২০

salemsuleri.ss@gmail.com

নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়