ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে লাভ কি কিছু হবে?
কাউকে মারতে, মেরে ফেলতে ঠিক কতজন দুর্বৃত্তের প্রয়োজন? আবরারকে মেরেছিল ১৯ জন। মদ্যপ অবস্থায় মারের মাত্রাটা বেশি হয়ে গেছে। শেষে আবরার মারাই গেলো। হয় তো খুনের পরিকল্পনাই ছিল ছাত্রলীগের দুর্বৃত্তদের। কিন্তু তাকে খুন করতে কি এতগুলো লোকের দরকার ছিল? ছিল না। মেরে ফেলতে ঠিক কতজন লোকের প্রয়োজন সেটা ঠিক করে বলা যায় না। হয়তো দুয়েকজন হলেও চলে।
শিক্ষাঙ্গনে কাউকে শায়েস্তা করতে বা আবরারের মতো পিটিয়ে মেরে ফেলতে চার বা পাঁচজন হলেই চলে। কিন্তু পেছনে একটা শক্তি থাকতে হয়। সে শক্তি দলীয় ক্ষমতা বা সাংগঠনিক জনবল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সেই সুবিধাটা রয়েছে বলেই তারা আবরারের মতো একজন মেধাবী ছাত্রকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পেরেছে। বুয়েটের এই ঘটনায় সব দোষ চাপলো ছাত্র রাজনীতির ওপর। সবাই ভেউ ভেউ করে বলতে লাগলো- ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা হোক। ফলে হলোও তাই। বুয়েটের জ্ঞানী কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দিলো। প্রশ্ন হলো, এতে কি রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাবে? এর ফলে ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিক সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে হয় তো। এতে রাজনীতি কমবে না সামান্যও।
ক্যাম্পাসে একটা রাজনৈতিক বলয় তৈরি হতে কী লাগে। একই রাজনৈতিক বিশ্বাসের একটা দল বা গোষ্ঠী মিলিত হতে তো আর কোনো বাধা নেই, আড্ডায় বিধিনিষেধ নেই। নিষেধাজ্ঞার ফলে বুয়েটে আর মিছিল থাকলো না মিটিং থাকলো না। কিন্তু আড্ডা আড্ডার জায়গায় থাকবে। আর সে আড্ডায় থাকবে নিজ নিজ রাজনৈতিক দলের আলোচনা। রাজনৈতিক এই যোগাযোগ অনানুষ্ঠানিকভাবে থেকে যাবে হলে হলে। ব্যাচে ব্যাচে। একইভাবে তাদের আন্তঃযোগাযোগও সামান্যতম বিঘ্নিত হবে না।
ছাত্রলীগ বা অন্য কোনো সংগঠনের কারো ওপর কোনো আঘাত(?) এলে এক প্রান্তের হল থেকে অন্য প্রান্তের হলে কিভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং অ্যাকশনে যেতেও কাল বিলম্ব হবে না। আবারারের মতো অন্য কাউকে ‘শায়েস্তা’ করতে চাইলেও একই পন্থায় এগোবে। শুধু এখানে কোনো ছাত্রলীগ থাকবে না। সব ঘটনা আগের মতোই ঘটে যাবে। কিন্তু দোষটা আর ছাত্রলীগের ওপর চাপানো যাবে না।
তাই, একটু তলিয়ে চিন্তা করে দেখা যায়, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করায় ছাত্রলীগের বরং লাভই হলো। এতে সংগঠন ‘নিষ্কলুষ’ থাকবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ