পাকিস্তানের নাটকীয় জয়
ঢাকা: পাকিস্তান কেন ক্রিকেটের অঅনুমেয় শক্তি আর দক্ষিণ আফ্রিকা কেন ক্রিকেটের ‘চোকার্স’- অকল্যান্ডের দ্বৈরথে তা আরেকবার প্রমাণ হলো। অবশেষে ইডেন পার্কে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ‘বিশ্বকাপ কুফা’ কাটাল পাকরা।
ক্রিকেট মহাযজ্ঞে আগের তিন দ্বৈরথে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মলিন বদনে মাঠ ছাড়ার পর নিজেদের চতুর্থ মহারণে জয়ের দেখা পেল ১৯৯২ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। শনিবার পেন্ডুলামের মতো এপাশ-ওপাশ করা ম্যাচে স্নায়ুর পরীক্ষা দিয়ে ডিএলএফ মেথডে ২৯ রানে ম্যাচ জিতে নিয়েছে মিসবাহ উল হক বাহিনী। ৪৭ ওভারের ম্যাচে প্রতিপক্ষকে ২৩২ রানের টার্গেট দিয়ে ২০২ রানেই মুড়িয়ে দিয়েছে মোহাম্মদ ইরফান, ওয়াহাব রিয়াজ ও রাহাত আলির সমন্বয়ে গড়া পাক পেস ব্যাটারি। বোলারদের ম্যাচে বিশ্বকাপ অভিষেকে ছয় ছয়টি ক্যাচ তালুবন্দি করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন পাক উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান সরফরাজ আহমেদ।
ইডেন পার্কে মাঠে নামার আগে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় বাধা ভাবা হচ্ছিল আফ্রিকান ‘গ্লাডিয়েটর্স’ এবি ডি ভিলিয়ার্সকে। পাক অধিনায়ক মিসবাহ উল হক এক প্রকার মেনেও নিয়েছিলেন তা। ময়দানি লড়াইয়ে মাঠে নামার আগে প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে দরাজ সার্টিফিকেটও দিয়েছিলেন ৪০ বছর বয়সী পাঞ্জাবী প্রতিভা। বিনা সঙ্কোচে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘এবি এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাটসম্যান। অবিংসবাদিত সেরাও।’
মিসবাহ যে ঠিক ছিলেন, ২২ গজে তা প্রমাণ করেছেন ভিলিয়ার্স। পাকিস্তানের ছুঁড়ে দেয়া ২৩২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ১৬ ওভারে ৭৭ রানে পাঁচ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তখন দলকে কক্ষপথে ফেরানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন প্রিটোরিয়ার ব্যাটিং মায়েস্ত্রাই। বিরুপ পরিবেশে ৫৮ বলে ৭৭ রানের ক্যামিও এক ইনিংস খেলে পাকিস্তানকে আরেকটি হারের হুমকিও দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু জয় থেকে মাত্র ৩২ রান দূরে থাকতে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ভিলিয়ার্স আউট হলে ইমরান তাহির আর কুলিয়ে উঠতে পারেননি। সেজন্য জয়ের তীর দেখতে দেখতে ২৯ রানের জন্য হার মানতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ইনিংসের তখনো ১৩.৩ ওভার বাকিই। এদিন ভিলিয়ার্সের ৭৭ রান ছাড়া হাশিম আমলার ব্যাট থেকে ৩৮, ডু প্লেসিসের থেকে ২৭ ও ডেল স্টেইন করেন ১৬ রান। পাকিস্তানের পক্ষে দেশটির তিন পেসার প্রত্যেকেই তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন। একটি উইকেট পান সোহাইল খান।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে আত্মবিশ্বাসী সূচনাই পায় পাকিস্তান। উদ্বোধনী জুটিতে ৩০ রানের অবস্থানের পর দ্বিতীয় উইকেটে ভালো কিছুর প্রত্যয় দেখাচ্ছিলেন ‘ব্যাড প্যাচে’র কবলে থাকা ইউনিস খান। কিন্তু সপ্তদশ ওভারের চতুর্থ বলে দারুণ খেলতে থাকা সরফরাজ আহমেদের বিদায়ের পর কিছুটা এলোমেলো হয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। ৩৭ রানেই থেমে যান ইউনিস। দ্রুত ফিরে যান শোয়েব মকসুদ (৮) ও উমর আকমলরা (১৩)। এরপর যথারীতি হাল ধরেন মিসবাহ। ৮৬ বল মোকাবেলা করে ৫৬ রান করে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি উপহার দেন তিনি। ২২ রান আসে শহীদ আফ্রিদির ব্যাট থেকে। গতি দানব ডেল স্টেইন ১০ ওভার বল করে মাত্র ৩০ রান দিয়ে তিনটি উইকেট শিকার করেন। দুটি করে উইকেট পেয়েছেন কাইল অ্যাবট ও মরনে মরকেল। ইমরান তাহির আর ডি ভিলিয়ার্সও পেয়েছেন একটি করে উইকেটের দেখা। প্রসঙ্গত, শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আরাধ্য এই জয়ের পর ‘বি’ গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করল পাকিস্তান। পাঁচ ম্যাচে ছয় পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার পর তিন নম্বরে উঠে এসেছে তারা। এরপর টেবিলের চার ও পাঁচে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ড। তার পরের দুটি স্থান জিম্বাবুয়ে ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের। অবশ্য ‘বি’ গ্রুপ থেকে এখন পর্যন্ত কেবলমাত্র ভারতই পরের রাউন্ড নিশ্চিত করতে পেরেছে। আর আমিরাত ছাড়া বাকি পাঁচ দলের জন্য কোয়ার্টার এখনো উন্মুক্তই।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফকে/এজে
নিউজবাংলাদেশ.কম