আফ্রিকার স্বপ্ন ভেঙে ফাইনালে নিউজিল্যান্ড
ঢাকা: দুই দলের সামনেই ছিল ‘চোকার্স’ তকমা মুছে ফেলার লড়াই। দুই দলের সামনেই ছিল প্রথমবার ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার হাতছানি। নতুন করে ইতিহাস লেখার বিরাট সুযোগ। হাতে পাওয়া সেই সুযোগ দারুণভাবে লুফে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। মঙ্গলবার অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪ উইকেটে পরাস্ত করেছে তারা। এক্স ফ্যাক্টর ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের ব্যাটিং সাইক্লোনের পর গ্রান্ট এলিয়টের দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে নাম লিখিয়েছে ব্লাক ক্যাপস শিবির।
বিশ্বকাপ জুড়ে নিউজিল্যান্ডে একটা বিজ্ঞাপন খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম তার দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলছেন, “আমার নিউজিল্যান্ড, স্বপ্ন দেখলে বিরাট স্বপ্ন দেখো।” নিজেদের তাতিয়ে নেয়ার এই মন্ত্রের সাথে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের বিনোদনদায়ী প্যাকেজে ফের কিস্তিমাত বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকদের। এই বিশ্বকাপে টানা আট করে ফেললো কিউইরা। তাতে করে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসরে আরেকবার সেমিফাইনালের বৃত্তেই বৃত্তবন্দি হয়ে থাকতে হলো দক্ষিণ আফ্রিকানদের। আরো চার বছরের জন্য অধরা থাকলো তাদের বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলার স্বপ্ন।
ইনিংসের মাঝ বিরতিতে বারবার অনেকে নিউজিল্যান্ডের কাঁধে বৃষ্টি আইনের বোঝার কথা বলছিলেন। অনেকে আবার বিষয়টিকে ব্লাক ক্যাপসদের জন্য শাপেবর হওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবেও দেখছিলেন। কিন্তু এতোকিছুর পরও ৪৩ ওভারে ২৯৮ রান তোলা সহজ কোনো বিষয় নয়। সেজন্য দুর্দান্ত ছন্দে থাকার পরও নিউজিল্যান্ড ভক্তদের মনে ভয়ের একটা চোরাস্রোত বইছিল! হ্যাঁ, ঠিক তাই। তবে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের শুরুতেই স্বাগতিক সমর্থকদের যাবতীয় ভয় আর উৎকণ্ঠা এক নিমিষেই উড়িয়ে দিয়েছেন একজন ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম। চার-ছয়ের মালা গেঁথে ডেল স্টেইন-ভারনন ফিলান্ডারদের পাড়ার বোলারদের পর্যায়ে নামিয়ে আনেন কিউই ওপেনার। আর দলের সবার মাঝে আত্মবিশ্বাসের টনিকটাও সঞ্চারিত করেন।
২৯৮ রান তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে মার্টিন গাপটিলকে নিয়ে মাত্র ৩৭ বল মোকাবেলায় ৭১ রান যোগ করেন ম্যাককুলাম। ২৬ বল খেলে চার ছক্কা ও আট চারে ৫৯ রান করেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। ইনিংসের সপ্তম ওভারের প্রথম বলে মরনে মরকেল ফেরান তাকে। ১০ রান বাদে দ্রুত ফিরে যান কেন উইলিয়ামসন। আস্থা দেখানোর পরও রস টেলর ৩০ রান করে আউট হন। ১৮তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ১২৮ রানের মাথায়। আগের ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো মার্টিন গাপটিল রান আউটের ফাঁদে কাটা পড়েন। তবে ১৪৯ রানে চার উইকেট হারানোর পরও জয় পেতে কোনো সমস্যা হয়নি কিউইদের।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে গ্রান্ট এলিয়ট ও কোরি অ্যান্ডারসনের ১০৩ রানের অবস্থানে ধীরে ধীরে জয়ের কাঙ্ক্ষিত বন্দরের দিকে ছোটে নিউজিল্যান্ড। এলিয়ট ও অ্যান্ডারসন দু জনেই দুটি অর্ধশতক তুলে নেন। অ্যান্ডারসন ৫৭ বলে ৫৮, অন্যদিকে এলিয়ট ৭৩ বলে ৮৪ রান করেন। শেষে ছক্কা হাঁকিয়ে কিউইদের ইনিংসে ফিনিশিং টাসও দেন এলিয়ট। ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে। দক্ষিণ আফ্রিকার মরনে মরকেল ৩টি ও জেপি ডুমিনি একটি উইকেট শিকার করেন।
এর আগে মঙ্গলবার অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম সেমিফাইনালে পরিসর কমা ম্যাচে নির্ধারিত ৪৩ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৮১ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। পরে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ২৯৮। এদিন টস জিতে ব্যাটিং নেয়া দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা সুখকর হয়নি। ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই ট্রেন্ট বোল্টের বলে বোল্ড হন হাশিম আমলা (১০)। স্কোরবোর্ডে তখন ২১ রান। ১০ রান বাদে সেই বোল্টেরই দ্বিতীয় শিকার আরেক ওপেনার কুইন্টন ডি কক (১৪)।
তৃতীয় উইকেটে ফ্যাফ ডু প্লেসিস ও রিলে রুশো সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন। তারা দুজন বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত স্কোরবোর্ডে ৮৩ রান যোগ করেন। রুশো ৩৯ রান করে কোরি অ্যান্ডারসনের শিকার হন। ২৭ ওভারের প্রথম বলে দলীয় ১১৪ রানের সময়। এরপর ফ্যাফ ডু প্লেসিস ও ডি ভিলিয়ার্স দলকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করেন। চতুর্থ উইকেটে ১২.১ ওভার ব্যাট করে দলকে ১০৩ রান উপহার দেন তারা। এরমাঝে খেলার ৩৮তম ওভারে বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয়। দলের রান তখন ৩ উইকেটে ২১৬। বৃষ্টির পর এক রানের ব্যবধানে ডু প্লেসিস আউট হন। ব্যক্তিগত ৮২ রান করে।
কিন্তু বৃষ্টির পর আচমকাই খেলার গতিপথ অনেকটাই বদলে যায়। কেননা দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ থাকায় ওভার কমিয়ে দেয়া হয়। যা দক্ষিণ আফ্রিকার বড় রান সংগ্রহের পথে বাধা তৈরি করে। এই অবস্থায় ডেভিড মিলার দুর্দান্ত ব্যাটিং করে তার দলকে ভালো একটা সংগ্রহ উপহার দেন। ১৮ বলে ৪৯ রান করেন তিনি। ৪৫ বলে ৬৫ রান করে অপরাজিত থাকেন ভিলিয়ার্স। জেপি ডুমিনির ব্যাট থেকে এসেছে ৬ রান। নিউজিল্যান্ডের কোরি অ্যান্ডারসন তিনটি ও ট্রেন্ট বোল্ট দুটি উইকেট শিকার করেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফকে
নিউজবাংলাদেশ.কম