অবসর নিয়ে বিসিবি’র চাপে হৃদয় ভেঙ্গেছে মাশরাফির
২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকেই মাশরাফি বিন মর্তুজার অবসর নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদ মাধ্যম, সমর্থক এমনকি খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) মাশরাফিকে আকারে-ইঙ্গিতে অবসর নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর না নিলেও ওয়ানডে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এতদিন এসব নিয়ে চুপ থাকলেও অবশেষে মুখ খুললেন দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল এই দলনেতা।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ম্যানেজমেন্ট দল থেকে বাদ দিতে এবং অবসর গ্রহণে বাধ্য করার জন্য চাপ দিয়েছিল মাশরাফিকে। আর এতে ‘কষ্ট’ পেয়েছেন বলে স্বীকার করলেন তিনি। মূলত গত বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে না উঠতে পারার পর থেকেই এই চাপের সূত্রপাত। তারপরও খেলা চালিয়ে গেছেন ঠিকই, কিন্তু গত মার্চে অধিনায়ক হিসেবে নিজের শেষ সিরিজ খেলে ফেলেছেন তিনি।
৮৭ ম্যাচে ৪৯ জয়। জেতার হার ৫৬.৩২ শতাংশ। এত সাফল্যের পরও মাশরাফিকে অবসর নেওয়ার চাপ সইতে হচ্ছে। গত মাসে জাতীয় দলের বোলিং কোচ ওটিস গিবসন তো সরাসরি বলেই দিয়েছেন যে, মাশরাফিকে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর ২০২৩ বিশ্বকাপ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখেন না তিনি। তাই দেশসেরা এই পেসারকে অবসর নিতে বলেছেন গিবসন। জাতীয় দলের জন্য এত কিছু করার পরও এমন আচরণে হতাশ হয়েছেন ম্যাশ।
‘ক্রিকবাজ’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাশরাফি বলেন, ‘সত্যি বলতে কি মনে হচ্ছে সবার মধ্যে আমাকে বিদায় করে দেওয়ার তাড়া দেখা যাচ্ছে এবং এটা খুব যন্ত্রণাদায়ক। প্রথমত, আমাকে বিদায় জানানোর জন্য তাদের একটা বিদায়ী ম্যাচ আয়োজন করা উচিত ছিল এবং এটা কোনো সাধারণ ম্যাচ নয়- সাধারণ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ এক ব্যাপার এবং তাড়াহুড়ো করে একটা বিশেষ ম্যাচ আয়োজন আলাদা ব্যাপার। দ্বিতীয়ত তারা ওই ম্যাচের জন্য ২ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তুতি নিয়েছিল। এইদিক থেকে এটাকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলা যায় না, কারণ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের খেলোয়াড়রা যথেষ্ট বেতন পায় না।’
২০১৯ বিশ্বকাপের পর নিজের ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন মাশরাফি। তখন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। বিসিবি প্রধানও তাতে সম্মতি জানিয়েছিলেন। আলোচনা সেখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ওই আলোচনায় উপস্থিত না থাকা অনেকে মিডিয়াতে অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করেন।
মাশরাফি বলেন, ‘তারা আমার বেতন নিয়ে কথা বলেছে, তাদের প্রশ্ন কোনো রিটার্ন ছাড়াই কেন বোর্ড আমাকে বেতন দেবে? আমি কি তাহলে ১৮ বছর শুধু টাকার চিন্তা করে খেলেছি? আমি যদি টাকার কথা চিন্তা করতাম, তাহলে আমার হাতে তখন অনেক সুযোগ ছিল। আমি টাকার জন্য ক্রিকেট খেলিনি। শুধু তাই না, তারা গুজব ছড়ায় বিশ্বকাপে নাকি বাংলাদেশ দল সাড়ে ৯ জন খেলোয়াড় নিয়ে খেলেছে। আপনার কি মনে হয়, এটা আমার প্রাপ্য?’
‘হয়তো বোর্ড আমাকে ভালোভাবে বিদায় জানাতে চেয়েছিল কিন্তু আপনাকে আমার ব্যাপারটাও ভেবে দেখতে হবে। আমার শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়া নিয়েও কথা হলো। আমি ইনজুরিতে না পড়লে আমি শ্রীলঙ্কা সফরে যেতাম,’ যোগ করেন তিনি।
‘হঠাৎ করেই আমাকে বিদায় করে দেওয়ার তাড়া শুরু হয়ে গেল। আমি শুধু এটাই জানি আমি ক্রিকেটের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছি, যদিও আমার ভেতরটা ফেটে যাচ্ছিল এবং হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। টাকাই যদি সব হতো, আমি অনেক কিছুই করতে পারতাম, যখন ইনজুরির কারণে আমার ক্যারিয়ার শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল। এমনকি আমি ইন্ডিয়ান সুপার লিগেও (আইসিএল) খেলতে যাইনি, অথচ সেখানে খেলার জন্য ৮ কোটি টাকা অফার করা হয়েছিল। আমি তা করিনি। আমি জীবন দিয়ে ক্রিকেট খেলেছি এবং হয়তো আমি কিংবদন্তি খেলোয়াড় হতে পারিনি, কিন্তু যোগ্য সম্মানটা তো আমার প্রাপ্য।’
নিউজবাংলাদেশ.কম/এসএস/কেএইচ