শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টাইগারদের সিরিজ জয়ে রেকর্ড
ক্রিকেট পরাশক্তি ভারত-পাকিস্তান,দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের মত বড় দলগুলোর বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের রেকর্ড থাকলেও বাদ ছিল অস্ট্রেলিয়া,ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা। সাকিব-তামিমরা বেশ কয়েকবার লঙ্কানদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও জিততে পারেনি। অবশেষে টাইগাররা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবার ঐতিহাসিক ওয়ানডে সিরিজ জয়ের রেকর্ড গড়ল।
ঐতিহাসিক এই সিরিজ জয়ের মধ্যদিয়ে আইসিসি সুপার লিগে ৮ ম্যাচে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে এখন টাইগাররা। আইসিসি সুপার লিগে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষ আটে থাকা দলগুলো আগামী বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। এই তালিকায় ৯ ম্যাচ ৪০ পয়েন্ট নিয়ে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় স্থানে আছে।
মঙ্গলবার মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বৃষ্টি আইনে লঙ্কানদের ১০৩ রানে হারিয়ে সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ মে। টাইগারদের দেয়া ২৪৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ২৪ রানে অভিষিক্ত শরিফুলের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম শিকার কন লঙ্কান ক্যাপ্টেন কুশল পেরেরা। ব্যক্তিগত ১৪ রান করে তামিম ইকবালের তালুবন্দি হন তিনি। ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকা লঙ্কানদের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৪ রান করে মোস্তাফিজের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
মোস্তাফিজ ও মিরাজের অসাধারণ বোলিংয়ে দলীয় ১০৬ রানে ৬ উইকেটে হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। পাথুম নিসানকা ২০, কুশল মেন্ডিস ১৫, ধনঞ্জায়া ডি সিলভা ১০ ও আশেন বান্দারা ১৫ রান করে বিদায় নেন। টাইগারদের ভয়ঙ্কর বোলিংয়ের সামনে লঙ্কানদের আর কোন ব্যাটস্যান দাঁড়াতেই পারেনি। ৩৬.২ ওভারে ১২২ রানে ৯ উইকেটে হারায়। ইনিংসের ৩৮তম ওভারে বৃষ্টি হানায় খেলা বন্ধ।
শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ তখন ৯ উইকেটে ১২৬। টাইগারদের শিবিরে তখন শ্রীলঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথমবার ওয়ানডে ক্রিকেটে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের অপেক্ষা নিয়ে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা! ফলে বৃষ্টি আইন (ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথড) ৪০ ওভারে শ্রীলঙ্কার লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৪৫। অর্থাত শেষ ১২ বলে জিততে শ্রীলঙ্কার করতে হবে ১১৯ রান। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৪১ রানেই থামতে হয় লঙ্কানদের। ইসুরু উদানা ১৮ ও দুশমন্ত চামেরা ৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
বল হাতে মোস্তাফিজুর রহমান ৬ ওভারে ১৬ রানে শিকার করেন তিন উইকেট। এছাড়া মেহেদী হাসান মিরাজ ১০ ওভারে ৩৮ রানে নেন তিন উইকেট। এছাড়া সাকিব আল হাসান নেন দুটি উইকেট। অভিষিক্ত শরিফুল ৫ ওভারে ১৭ রানে একটি উইকেট শিকার করেন।
এর আগে মিরপুর টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিতে ৪৮.১ ওভারে ২৪৬ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা। এদিন দলের বিপর্যয়ে একপ্রান্ত আগলে রেখে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন মুশফিকুর রহিম। অভিজ্ঞ ডানহাতি ব্যাটসম্যানের এটি অষ্টম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। মুশফিক তার সেঞ্চুরির ইনিংসটি মাত্র ৬ চারে সাজিয়েছেন। বল খেলেছেন ১১৪টি।
শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিক আউট হওয়ার আগে ১২৫ রান করেন। ১২৭ বলে ১০ বাউন্ডারিতে নিজের ইনিংটি সাঁজান তিনি। অবশ্য এদিন ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ফিরে যান তামিম ইকবাল। ইনিংসের প্রথম ওভারে ৩টি চারে ১৩ রান করা আক্রমণাত্মক তামিম দ্বিতীয় ওভারে আসা দুশমন্থ চামেরার প্রথম বলেই এলবির ফাঁদে পড়েন। একই ওভারের চতুর্থ বলে ব্যক্তিগত শূন্য রানে এলবি হয়ে মাঠ ছাড়েন সাকিব।
তামিম-সাকিবের দ্রুত বিদায়ের পর মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন লিটন দাস। তবে ১২তম ওভারে এসে ধৈর্য হারান এই ওপেনার। লক্ষণ সান্দাকানের সাধারণ মানের বলটি শর্টে ফিল্ডিং করা ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে তুলে দেন। ৪২ বলে ২টি চারে ২৫ রান করেছেন লিটন।
লিটন বিদায় নেওয়ার পর মুশফিককে সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হন মোসাদ্দেক।
সান্দাকানের বলে লেগ সাইডে খোঁচা দিতে গিয়ে উইকেটরক্ষক কুশল পেরেরার তালুবন্দি হন মোসাদ্দেক (১০)। ৭৪ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর মুশফিকের সঙ্গে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৮৭ রান যোগ করেন মাহমুদউল্লাহ। তবে ৫৮ বলে ব্যক্তিগত ৪১ রানে স্কুপ করতে গিয়ে সান্দাকানের শিকার হন তিনি। ব্যাটিংয়ে থাকা মুশফিক অবশ্য ব্যাক টু ব্যাক হাফসেঞ্চুরির দেখা পান। রিয়াদের বিদায়ের পর আরও একবার বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। পরপর দুই ওভারের ব্যবধানে বিদায় নেন আফিফ হোসেন ধ্রুব (১০) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (০)।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি