ইংলিশ জাত্যাভিমান মাড়িয়ে কোয়ার্টারে বাংলাদেশ
ঢাকা: সমর্থকদের অপেক্ষা বাড়ালো না বাংলাদেশ। সোমবার অ্যাডিলেড ওভালে সামর্থ্য প্রমাণের ম্যাচে ঠিকই জ্বলে উঠলো এগারো টাইগার।
বিশ্বকাপে দেশের পক্ষে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের প্রথম ও ঐতিহাসিক এক সেঞ্চুরির পর রুবেল হোসেনের আগুনে বোলিংয়ের ‘ফাঁদে পড়া’ ইংল্যান্ডকে মহাযজ্ঞ থেকে ছুটি দিয়েছে মাশরাফি মুর্তজা বাহিনী। জয় পেয়েছে ১৫ রানের ব্যবধানে। চলতি টুর্নামেন্টে টানা দ্বিতীয় এই জয়ে ২০০৭ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লেখালো টাইগাররা।
বাংলাদেশের প্রতি নাক উঁচু ইংলিশ কিংবা অস্ট্রেলিয়ান অভিজাতদের প্রধান অভিযোগ চূড়ান্ত মঞ্চে জ্বলে উঠতে পারে না লাল-সবুজ পতাকাধারীরা। জিম্বাবুয়ে ব্যতীত র্যাংকিংয়ের সেরা আট দলের বিপক্ষেও প্রত্যাশিত সাফল্য নেই তাদের। ক্রিকেটের কুলীন তারা। কারণ, দীর্ঘ পরিক্রমার সাফল্য বিবেচনায় বাংলাদেশ অনেকটা আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর চৌহদ্দিতে বাক্সবন্দি। কিন্তু এই কথাটা যে পুরো ‘ফ্লুক’ তা জাত্যাভিমানী ইংলিশদের হাতে হাতে প্রমাণ করে দিলো বাংলাদেশ।
বাঁচন-মরণ ম্যাচের ‘লাইফ-লাইন’ নিয়ে অ্যাডিলেড ওভালে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড উভয়েই। সাকিব-তামিমদের জন্য অবশ্য দ্বিতীয় একটা সুযোগ ছিল। কিন্তু ইংলিশদের জন্য আক্ষরিক অর্থেই ছিল ‘শ্বাস’ ধরে রাখার ম্যাচ। সেই ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে আট রান তুলতে না তুলতেই সাজঘরে ফেরেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল (২) ও ইমরুল কায়েস (২)। তৃতীয় উইকেট জুটিতে সৌম্য সরকার ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৮৬ রান যোগে বিপদ কিছুটা সামলে নেন।
৯৪ রানে গিয়ে আরেকটা ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ২০.২ ওভারে যখন সৌম্য সরকার ক্রিস জর্ডানের বলে জস বাটলারের হাতে ক্যাচ দেন। ৪০ রানে থামেন বামহাতি প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটসম্যান। পাঁচ রানের ব্যবধানে দ্রুত ফেরেন সাকিব আল হাসান (২)। মঈন আলির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন দেশসেরা ক্রিকেটার। পঞ্চম উইকেটে গিয়ে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে আবার প্রতিরোধ গড়েন মাহমুদুল্লাহ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি আর দেশের হয়ে বিশ্বকাপে প্রথম ১০০ পেরুনো ইনিংস খেলানোর দিনে পঞ্চম উইকেটে ১৪১ রান যোগ করেন তারা।
শেষে ১০৩ রানে গিয়ে থামেন মাহমুদুল্লাহ। ১৩৮ বলে দুই ছয় ও সাত চারে ইনিংস সাজান তিনি। ৪৬ ওভারের চতুর্থ বলে ক্রিস ওকসের সরাসরি থ্রোতে আউট হন আংসাং এই হিরো। এরপর ৭৭ বলে ৮৯ রান করা মুশফিকুর রহিমও স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। এতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ২৭৫ রান তোলে বাংলাদেশ। ১৪ রান করেন সাব্বির রহমান। মাশরাফি মুর্তজা ৬ আর আরাফাত সানি ৩ রানে অপরাজিত থাকেন।
২৭৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ভালো শুরুর প্রত্যয় দেখায় ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার মঈন আলি ও ইয়ান বেল। কিন্তু রানিং বিটুইন দ্য উইকেটের সময় বেলের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির কারণে ১৯ রান করে থামতে হয় মঈন অলিকে। সৌম্য সরকারের থ্রো থেকে স্টাম্পিং করেন মুশফিক। অস্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে ৪৩ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর দলীয় ৯৭ রানের মাথায় ফেরেন অ্যালেক্স হেলস। ব্যক্তিগত ২৭ রান করে মাশরাফি মুর্তজার শিকার হন তিনি। কিন্তু আরেক প্রান্ত আগলে ঠিকই দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন বেল। তখন ম্যাচ অনেকটাই ঝুঁকে পড়তে থাকে ইংল্যান্ডের দিকে।
এ অবস্থায় তিন বলের ব্যবধানে বেল ও ইয়ন মর্গানকে ফিরিয়ে ম্যাচের রঙ বদলে দেন রুবেল হোসেন। ৮২ বলে ৭ চারের সাহায্যে ৬৩ রান করে আউট হন বেল। কিন্তু জেমস টেইলর দ্রুত আউট হওয়ার পর জোস বাটলার ও ক্রিস ওকসের সপ্তম উইকেট জুটি কঠিন পরীক্ষা নেয় বাংলাদেশের। হারের জন্য চোখ রাঙানিও দেখাচ্ছিল। সেই অবস্থায় দম-বন্ধ অবস্থায় থাকা কোটি কোটি বাংলাদেশি সমর্থককে আবারো জাগিয়ে তোলেন পেসার তাসকিন আহমেদ। বাংলাদেশি বোলারদের দুঃস্বপ্ন উপহার দিতে থাকা বাটলারকে ৬৫ রানে মুশফিকের ক্যাচ বানান তিনি।
৪৫.৫ ওভারে দলীয় ২৩৮ রানে বাটলারের সেই আউটের পর রান আউট হন জর্ডান। সাকিব আল হাসানের থ্রোতে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় তাকে। কিন্তু আরেক প্রান্তে ঠিকই প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ক্রিস ওকস। তবে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয় ইংলিশদের। ২৬০ রানে থামতে হয় ইংল্যান্ডকে। ফলে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয় মর্গান বাহিনীর। আর নক আউটের শর্ত পূরণ করে বাংলাদেশ, নাম লেখায় পরের রাউন্ডে। যাতে মাতাল আনন্দের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে গোটা উপমহাদেশে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফকে/কেজেএইচ
নিউজবাংলাদেশ.কম