শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকা
ঢাকা: ৩৬ দশমিক ২ ওভারে শ্রীলঙ্কার নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে কুমার সাঙ্গাকারা আউট হতেই গুমরে উঠল সিডনির আকাশ। এসসিজিতে ঝিরঝিরিয়ে নামল বৃষ্টি। তখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত এক কমেডিয়ানের তাৎক্ষণিক টুইট, “আবার বৃষ্টি! তিন ওভারে ৮১২ রান করতে হবে প্রোটিয়াদের!!”
না, শেষ পর্যন্ত সেরকম কিছু হয়নি। অতীত বাধা হতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকার। ফের চোকও করেনি তারা। বুধবার নিজেদের সপ্তম বিশ্বকাপ অভিযানে নকআউট পর্বে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বুধবার বিশ্বকাপের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপের রানার্সআপ শ্রীলঙ্কাকে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে তারা। আর প্রথম দল হিসেবে নাম লিখেয়েছে একাদশতম বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে।
তিনে তিন হার? না পুনরুত্থান? প্রথমে ভারত, পরে পাকিস্তান। এরপর কি এশিয়ার আরেক প্রতিনিধি শ্রীলঙ্কার শিকার হবে এবিডি বাহিনী? বুধবার সিডনিতে ২০১৫ বিশ্বকাপে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের আগে এমন নানা সমীকরণের কথা ভাসছিল বাতাসে। এর জবাবে প্রোটিয়া অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স খুব জোর দিয়েই বলেছিলেন, কালকে (বুধবার) চোক করব না আমরা। কথা রেখেছেন ডি ভিলিয়ার্স। কথা রেখেছে তার দলও। আর বুঝিয়ে দিয়েছে কেন এই বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট ভাবা হচ্ছে তাদের।
এদিন সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অতীত অভিজ্ঞতা তেমনভাবে কাজে লাগাতে পারেননি লঙ্কানরা। টানা দুই বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট দলটি টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম পাঁচ ওভারের মধ্যেই দুই ওপেনার কুশল পেরেরা (৩) ও তিলকারত্মে দিলশানকে (০) হারায় তারা। স্কোরবোর্ডে তখন সবেমাত্র ৪ রান। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুরন্ত ফর্মে থাকার কুমার সাঙ্গাকারাকে নিয়ে এই চাপ দারুণভাবে সামলে নিয়েছিলেন লাহিরু থিরিমান্নে। কিন্তু ইনিংসের ২০তম ওভারে ইমরান তাহিরের বল কী মনে করে যেন স্ট্রেইট ড্রাইভ খেলতে খেলেন থিরিমান্নে? বল সোজা বোলারের হাতে। লঙ্কার ৬৫ রানের তৃতীয় উইকেট জুটির পতন।
দলীয় ৬৯ রানে থিরিমান্নের এই আউটের পর আর কখনো খেলায় ফিরতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় তারা। এক প্রান্ত অবশ্য আগলে রেখেছিলেন ‘সুপার হিউম্যান’ সাঙ্গা। যিনি আগের চার ম্যাচেই সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। কিন্তু সতীর্থরা যদি একটুও সমর্থন দিতে না পারেন তাহলে একা কী আর করতে পারেন তিনি? পারেননি সাঙ্গাও। ওয়ানডেতে জীবনের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমে ১৫৩ মিনিট ক্রিজে থেকে ৯৬ বল মোকাবেলায় ৪৫ রানের লড়াকু ইনিংস উপহার দেন লঙ্কান কিংবদন্তি। মরনে মরকেলকে উচিয়ে মারতে গিয়ে ডেভিড মিলারের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।
এরপর আর খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি শ্রীলঙ্কার ইনিংস। ৩৭.২ ওভারে ১৩৩ রানে অলআউট হয়েছে তারা। সাঙ্গাকারা ৪৫, থিরিমান্নে ৪১ ও ম্যাথুস ১৯ রান করেন। ৯৬ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের পক্ষে আর কোন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। স্পিন ঘূর্ণিতে এই বিশ্বকাপের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক তুলে নেন জেপি ডুমিনি। নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে চারটি উইকেট নিয়েছেন ইমরান তাহির। ডেল স্টেইন, কাইল অ্যাবট ও মরনে মরকেল একটি করে শিকার ঝুঁলিতে ভরেন।
১৩৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬.৪ ওভারে ৪০ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ার পর বিচ্ছিন্ন হন দক্ষিণ আফ্রিকা ওপেনার হাশিম আমলা। ২৩ বলে ১৬ রান করে নুয়ান কুলাসেকারার হাতে ক্যাচ দেন শুশ্রুমণ্ডিত এই খেলোয়াড়। লাসিথ মালিঙ্গার বলে আউট হন তিনি। তবে প্রোটিয়াদের আরেক ওপেনার কুইন্টন ডি কক ওয়ান ডাউনে নামা ফ্যাফ ডু প্লেসিসকে নিয়ে বাকি পথটা আনায়েসেই পাড়ি দেন। ইনিংসের ১৯২ বল বাকি থাকতেই অর্থাৎ, মাত্র ১৮ ওভার ব্যাট করেই ৯ উইকেটের জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৭৮* রান আসে ডি ককের ব্যাটে, ডু প্লেসিস অপরাজিত থাকেন ২০ রানে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফকে
নিউজবাংলাদেশ.কম