ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়: সৌরভ গাঙ্গুলী
ভারতের দৈনিক আজকাল ভারতের সাবেক কাপ্তান বাঙালি বাবু সৌরভ গাঙ্গুলীর একটি ইন্টারভিউ ছেপেছে। মঙ্গলবার অনলাইনে দেয়া ওই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সাংবাদিক দেবাশিস দত্ত। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকে পাঠানো ওই ইন্টারভিউতে সৌরভ ২০০৭ সালে ক্যারিবীয় বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে ভারতের বিদায় আর এবারের বিশ্বকাপে আগামী ১৯ মার্চে কোয়ার্টার ফাইনালের নক আউট পর্বে ভারতের ফের বাংলাদেশের মুখোমুখি হওয়া প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের কাছে ভারতের ওই শোচনীয় হারকে অনেক ক্রিকেট বোদ্ধা ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা অঘটন বলে মনে করেন। এখানে সৌরভের সাক্ষাৎকারটি তুলে দেয়া হলো নিউজবাংলাদেশের পাঠকদের জন্য
“কী হবে পুরনো কাদা ঘেঁটে? মন খারাপ করতে চাই না। জীবনে যত ম্যাচ হেরেছি, তার মধ্যে ওই ম্যাচটাও থাকবে। আমি রান পেয়েও ভারত হেরেছিল, এমন ঘটনা তো কম নেই। তবু, ২০০৭ বিশ্বকাপে পোর্ট অফ স্পেনের কুইন্স পার্ক ওভালে হারার ব্যাপারটা মনে পড়লেই কষ্ট পাই। মন খারাপ হয়ে যায়।”
গোটা দিন টেলিফোন বন্ধ ছিল, অকল্যান্ড থেকে মেলবোর্ন উড়ে যাওয়ার কারণে। সন্ধ্যায় মেলবোর্ন বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর যখন অস্ট্রেলিয়ার টেলিফোন সুইচ অন করলেন, তখনই কথা হল সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে।
সৌরভ: এখন শুধু এ শহর, ও শহর করতে হবে। একা আছি, সময় কাটতে চায় না। তার চেয়ে বরং একঘেঁয়েমি কাটানোর জন্য অ্যাডিলেড, অকল্যান্ড ও মেলবোর্নে উড়ে বেড়ানো ভালো। ৩০ মার্চ রাতে কলকাতায় ফিরব। তার আগে শুধুই চরকি পাক।
প্রশ্ন: ১৯ মার্চ ভারত বনাম বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে ধারাভাষ্য কক্ষে থাকছেন তো?
সৌরভ: হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই। ভারতের সব ম্যাচে ধারাভাষ্য দেব। বলেছে চারটে কোয়ার্টার ফাইনালেই মাঠে হাজির থাকতে৷। আমি চাইছি, দুটি ম্যাচ। কিন্তু ওরা নাছোড়বান্দা মনোভাব দেখাচ্ছে। দেখি, যদি অন্তত একটা ম্যাচেও রেহাই পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ তো প্রচণ্ড উদ্দীপ্ত হয়ে আছে?
সৌরভ: থাকুক। ভালোই তো। কিন্তু তারা ভারতকে হারাতে পারবে না।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ শিবির কিন্তু প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী...
সৌরভ: হোক। কিন্তু এই ভারত দলের যা ওজন তাতে ধোনিদের হারার কথা নয়।
প্রশ্ন: ২০০৭ সালে ত্রিনিদাদেও তো হারার কথা ছিল না...
সৌরভ: বলছি তো, ওটা একটা অঘটন। তবে আমি চাই না ওই পুরনো ম্যাচে ফিরে যেতে।
প্রশ্ন: আপনি ৬৬ রান করেছিলেন। ভারত তুলেছিল ১৯১। আপনার স্কোর ছিল সর্বোচ্চ। যুবরাজ সিং ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (৪৭) রান সংগ্রাহক...
সৌরভ: এসব অতীত। ৮ বছর আগের ওই ম্যাচের সঙ্গে এবার ১৯ মার্চ কোয়ার্টার ফাইনালের কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ তো ওই ম্যাচের কথা বলে উদ্দীপ্ত করতে পারে নিজেদের...
সৌরভ: করতেই পারে। কে আটকাচ্ছে ওদের?
প্রশ্ন: আবার ওই ৮ বছর আগে ফিরতে চাইছি। বাংলাদেশের কাছে সেবার হারের মূল কারণ কী কী?
সৌরভ: অনেক কারণ ছিল, যা এখন বলতে চাই না।
প্রশ্ন: আপনারা সেদিন পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারেননি!
সৌরভ: উইকেটটা ভালো ছিল না। একটা কারণের কথা যদি বলতে হয়, তাহলে তা হবে ব্যাটিং-ব্যর্থতা। তা না হলে ১৯১ রানে আমাদের মতো দল অল আউট হয়ে যায়?
প্রশ্ন: আঙুল উঠেছিল মন্থর গতিতে রান তোলার দিকেও...
সৌরভ: উল্টো দিক থেকে যেভাবে উইকেট পড়ছিল একের পর এক, তাতে তো এক দিক আগলে রাখাও জরুরি ছিল। এটা যদি অভিযোগকারীরা বুঝেও না বুঝতে চায় তাহলে আমার কিছু বলার নেই।
প্রশ্ন: তখনকার কোচ গ্রেগ চ্যাপেল কিন্তু আঙুল তুলেছিলেন আপনার দিকেও?
সৌরভ: আমি শুনতে চাইছি না। কোনও বিতর্ক তৈরি করতে চাইছি না।
প্রশ্ন: ব্রায়ান লারা কিন্তু আপনার ৬৬ রানের ইনিংসের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন, ওটাই ছিল সঠিক পদ্ধতি...
সৌরভ: তাই? তবুও আমি কিছু বলব না এ প্রসঙ্গে। ছেড়ে দিন, প্লিজ।
প্রশ্ন: এবারও পরিস্থিতি প্রায় একই রকম। ভারত হেরে গেলে দেশে ফিরে আসতে হবে, যেমন ফিরতে হয়েছিল ২০০৭ সালে...
সৌরভ: ওহ্, সেই পরিস্হিতি? না, না, ভারত এবার বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিফাইনালে যাবে। এখন ধোনিদের হারানো কঠিন। ২০০৭ বিশ্বকাপের পরাজয়ের সঙ্গে এর কোনো মিল না খোঁজাই ভালো। জিম্বাবুয়ে ম্যাচে ধোনি-রায়নারা ম্যাচটা কীভাবে বের করলো বলুন তো? এই ছন্দের ভারতকে রুখতে পারবে না বাংলাদেশ। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা তো একটা মরণ কামড় দিতে চাইবে?
সৌরভ: ন্যাড়া বেলতলায় কিন্তু একবারই যায়, তাই না? ২০০৭ বিশ্বকাপের ভুল, ২০১৫ সালে করবে না ভারত।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফকে
নিউজবাংলাদেশ.কম