শাস্তি পেল আল আমিন, ঘটনায় দায় কার!
ঢাকা: লজ্জা আর অপবাদ মাথায় নিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে যাওয়া জাতীয় দলের তরুণ পেসার আল আমিনকে। গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকায় আসার পর থেকেই তাকে আর বাইরে দেখা যাচ্ছে না। তিনি এখন লজ্জায় নিজের বাসায় নীরবেই অবস্থান করছেন।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে জয় এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বৃষ্টিতে ম্যাচ বাতিল হওয়ায় এক পয়েন্ট পেয়েছে টাইগাররা। লক্ষ্য বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল! শ্রীলংকার সাথে বাজে বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে হারলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার সুযোগ এখনও রয়েছে মাশরাফিদের।
কিন্তু শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচের আগে হঠাৎ করেই আল আমিনকাণ্ডে পাল্টে গেল চিত্রনাট্য। এ ঘটনা দলের ভেতরে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে। তবে আল আমিনের পরিবর্তে শফিউল দলে ফেরায় পরিবেশ কিছুটা হালকা হয়েছে।
বাংলাদেশ দল এখন মনোযোগী হচ্ছে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে। আপাতত আল আমিন ইস্যু সমাধান হলেও বিষয়টা ধোঁয়াশার আবরণেই ঢেকে আছে। জাতীয় দলের টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনের ভাষায়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়েই দেশে ফিরতে হয়েছে আল আমিনকে।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ব্রিসবেনে নির্ধারিত সময়ের পরও হোটেলের বাইরে ছিলেন তরুণ এ পেসার। অর্থাৎ দলীয় নিয়ম ভঙ্গ করার কারণেই কপাল পুড়েছে তার।
প্রশ্ন উঠেছে, শুধু শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণেই কি এত বড় শাস্তি! দলের প্রয়োজনে বড় জরিমানা দিয়ে বিষয়টা সমাধান করা কি যেত না? হ্যাপি-রুবেল প্রেমকাহিনী নিয়ে তো বিসিবি রুবেলের পক্ষেই ছিল। তাছাড়া বিশ্বকাপের মতো এতো বড় একটি টুর্নামেন্টে খেলা যে কোনো ক্রিকেটারের স্বপ্ন। শুধু শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধও হলে হয়তো তাই করা হতো।
বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে, বাংলাদেশ দলের ডানহাতি এই পেসারকে ম্যাচ পাতানো বুকিদের সঙ্গে দেখেছে আকসু। বিষয়টি নিয়ে আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন আইসিসির নখদন্তহীন দুর্নীতি দমন সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তারা।
অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ বিষয়ে জানিয়েছিলেন, “আকসু আমাদের জানিয়েছে, আল-আমিনের বিরুদ্ধে তাদের দুর্নীতি সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ নেই। তবুও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। কারণ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে আমরা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি।”
ঢাকায় ফেরার পর শুক্রবার এ বিষয়ে জাতীয় দলের তরুণ এ পেসার আল আমিনের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “অস্ট্রেলিয়ার বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। আসলে কোনো বিষয় নিয়েই আমি কথা বলতে চাইছি না।”
জাতীয় লিগে খেলবেন কিনা জানতে চাইলেন তিনি বলেন, “জাতীয় লিগের পরের রাউন্ডের ম্যাচগুলো থেকে নিয়মিত খেলবো।” এটুকু বলেই কথা শেষ করেন তিনি।
বিসিবির এ পরিচালকের কথায় স্পষ্ট হয়েছে নির্ধারিত সময়ের পরও হোটেলে বাইরে থাকাই ছিলো আল আমিনের মূল অপরাধ। তবে বিশ্বকাপ খেলতে এসেও দলের সতীর্থদের না জানিয়ে হোটেলের বাইরে থাকায় বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ দেননি আল আমিন।
এরপর প্রশ্ন উঠেছে- আল আমিন না হয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, কিন্তু এ দায় কী শুধুই আল আমিনের? এ ঘটনার জন্য আর কারও দায় নেই? দল পরিচালনার প্রধান দায়িত্ব থাকে দলীয় ম্যানেজারের ওপর। তিনি কি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারেন?
বিসিবির একটি সূত্রে জানা গেছে, আল আমিনের বিষয়ে দলকে সতর্ক করে দিয়েছিল আকসু। টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনের সঙ্গে আল আমিনের বিষয়ে কথা বলেন আকসুর এক কর্মকর্তা। আকসুর সতর্কের পর দলের ম্যানেজার হিসেব আল আমিনকে চোখে চোখে রাখার দায়িত্ব তো তারই। দলের ক্রিকেটাররা কে কোথায় থাকবে, কতক্ষণ হোটেলের বাইরে থাকবে সব দায় দায়িত্ব ম্যানেজারের।
ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে প্রশ্ন উঠেছে- আকসু সতর্ক করার পরেও কেন টিম ম্যানেজমেন্ট, ম্যানেজার আল আমিনের বিষয়ে সতর্ক ছিলেন না? আল আমিনের এ ঘটনার প্রধান দায় টিম ম্যানেজমেন্ট। স্পষ্টভাবেই এ ঘটনায় জন্য দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ।
তিনি জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার, বর্তমানে বিসিবির পরিচালকও। আগেও তিনি বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। গত বছর নিজেদের মাঠে এশিয়া কাপে মিরপুর স্টেডিয়ামে সাকিব ড্রেসিংরুম ছেড়ে গ্যালারিতে গিয়ে দর্শক পেটালেন। সেখানে বড় শাস্তিও পেলেন সাকিব। কিন্তু তারপরও ম্যানেজার খালেদ মাহমুদের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার কোনো অভিযোগ উঠলো না।
এবারও আল আমিনের বেলায় তাই হলো। বিশ্বকাপ না খেলেই দেশে ফিরলেন আল আমিন। অথচ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিলেও খালেদ মাহমুদের ম্যানেজারশিপ এখনও অক্ষত। বারবার ব্যর্থতার পরও তার দিকে আঙুল তুলেও কথা বলেনি বিসিবির কেউ। এমন অদক্ষ ম্যানেজারের দায়ভার আর কত বইবে তরুণ ক্রিকেটাররা?
দেশের হাজারো ক্রিকেটপ্রেমী বেশ ভালো জানেন বিপিএল ফিক্সিং ঘটনা ও আকসু সম্পর্কে। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল যেখানে জীবন্ত উদাহরণ। তাদের প্রত্যাশা, আশরাফুলের মতো আর কোনো ক্রিকেটারকে যেন আর না হারাতে হয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এসএস/এজে
নিউজবাংলাদেশ.কম