ইতিহাস গড়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ম্যানসিটি
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে পিএসজিকে ২-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটি। প্রথম লেগে প্যারিস থেকে ২-১ গোলের ব্যবধানে জিতে ফাইনালে এক পা দিয়েই রেখেছিল পেপ গার্দিওলার দল। ফিরতি লেগে ঘরের মাঠে ১০ জনের পিএসজিকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল ম্যানচেস্টারের ক্লাবটি। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ গোলের ব্যবধানে জিতে ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটি।
প্রথম লেগে জয় পাওয়াতে দ্বিতীয় লেগে কিছুটা ভারমুক্ত ছিল ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে প্রথম লেগে পায়ে চোট পেয়ে দ্বিতীয় লেগের স্কোয়াডে থেকেও খেলতে পারেননি কিলিয়ান এমবাপে। ফলে দলের ভারটা এদিন ছিল নেইমারের ওপরেই। কিন্তু দলের সবচেয়ে প্রয়োজনের মুহূর্তে তেমন কিছুই করতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। শেষ পর্যন্ত দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ গোলের ব্যবধানে হেরে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হলো প্যারিস সেইন্ট জার্মেইকে।
এদিকে ম্যাচের ৬৯ মিনিটে মেজাজ হারিয়ে ফার্নান্দিহোর পায়ে লাথি মেরে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকে। আর তাতেই ম্যাচের শেষ ২০ মিনিটেরও বেশি সময় ১০ জনের দলে পরিণত হয় পিএসজি।
এদিন লেখার শুরু থেকেই কিছুটা কোণঠাসা হয়ে খেলতে থাকে সিটি। নেইমার-ডি মারিয়ারা বল দখলে রেখে আক্রমণ সাজাতে থাকে কিন্তু কিছুতেই ম্যানসিটির রক্ষণকে ভেদ করতে পারছিল না। ম্যাচের সাত মিনিটের মাথায় নেইমারের ক্রস জেঞ্চেঙ্কোর হাতে লাগায় পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। তবে ভিএআর দেখে রেফারি সিদ্ধান্ত বদলান। সে যাত্রায় রক্ষা পেয়ে যায় সিটিজেনরা।
এর মাত্র চার মিনিট পরে সিটি গোলরক্ষক এডারসনের বাড়ানো লং বল পেয়ে যান জেঞ্চেঙ্কো। এরপর জেঞ্চেঙ্কো বল বাড়িয়ে দেন ডি ব্রুইনের দিকে, ডি বক্সের বাইরে থেকে এই বেলজিয়ান মিডফিল্ডারের নেওয়া শট ব্লক করেন পিএসজি ডিফেন্ডার মার্কুইনেস। ফিরতি বল পেয়ে জোরালো শটে গোল করে দলকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে নেন রিয়াদ মাহারেজ।
গোল হজমের পর তা শোধে উঠে পড়ে লাগে পিএসজি। আক্রমণের ধার বাড়িয়ে গোলের সুযোগ তৈরিও করছিল তারা। শেষ পর্যন্ত আর গোল না হওয়ায় ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় সিটিজেনরা। বিরতি থেকে ফিরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করে সিটিজেনরা। একের পর এক আক্রমণে পিএসজির রক্ষণকে ছিন্নভিন্ন করতে থাকে। ম্যাচের ৫৩তম মিনিটে ডি ব্রুইনের বাড়ানো বল পেয়ে যান ফিল ফোডেন। আর পিএসজি গোলরক্ষক কেইলর নাভাসের সঙ্গে ওয়ান অন ওয়ানেও পৌঁছে যান কিন্তু নাভাস এগিয়ে এসে বল ধরে ফেললে লিড বাড়ানোর সুযোগ হারায় সিটিজেনরা। এর এক মিনিট পরে নাভাসের আরো এক দুর্দান্ত সেভে রক্ষা পায় পিএসজি।
৬৩তম মিনিটে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করে সিটিকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে নেন রিয়াদ মাহারেজ। আর সেই সঙ্গে ফাইনালের টিকিটটাও গার্দিওলার হাতে এনে দেন এই ফরোয়ার্ড। দুর্দান্ত প্রতি আক্রমণে বল নিয়ে পিএসজির ডি বক্সে ঢুকে পড়েন ফিল ফোডেন, সেখান থেকে ছয় গজের ভেতরে থাকা মাহারেজের উদ্দেশ্যে বল বাড়ান তিনি। আর এমন সুযোগে বল জালে জড়াতে একদমই ভুল করেননি এই ফরোয়ার্ড।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে হতাশায় পড়ে যায় পিএসজির খেলোয়াড়রা। আর সেই হতাশা থেকেই বোধ হয় ফার্নান্দিহোকে পেছন থেকে লাথি দিয়ে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ডি মারিয়া। ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের তখনও বাকি ২১ মিনিট। বাকি সময়টা কেবলই সিটিজেনদের। একের পর এক আক্রমণে পিএসজির রক্ষণকে বেশ পরীক্ষা নিয়েছে সিটির আক্রমণভাগ। ভাগ্য কিছুটা সহায় হলে আরও গোলের দেখা পেতে পারত সিটি। তবে শেষ পর্যন্ত আর কোনো গোল না হওয়ায় ওই ২-০ গোলের ব্যবধানে জিতে আর দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ ব্যবধানে জিতে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে জায়গা করে নেয় পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি।
ফাইনালে সিটির প্রতিপক্ষ হচ্ছে কারা তা জানা যাবে বৃহস্পতিবার স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চেলসি ও রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যকার সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগ শেষে। দুই দলের মধ্যকার প্রথম লেগে রিয়ালের মাঠে ১-১ গোলে ড্র করে চেলসি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এসএস/এফএ