হারলেও প্রাপ্তি আছে বাংলাদেশের
ঢাকা: না, নতুন কোনো রূপকথা লিখতে পারল না বাংলাদেশ।
উড়তে থাকা নিউজিল্যান্ডকে চেপে ধরেও জয়রথে রাশ টানতে পারেনি টাইগাররা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি বিফলেই গেছে। হ্যামিল্টনে একপ্রস্থ নাটকের পরে ডেনিয়েল ভেট্টোরি ও টিম সাউদি জেতালেন নিউজিল্যান্ডকে। বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে ৩ উইকেটের ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। অবশ্য হ্যামিল্টনের হারা ম্যাচেও ব্যক্তিগত এবং দলীয় নানা প্রাপ্তি রয়েছে টাইগারদের।
স্পিনে প্রতিপক্ষ বধের রণকৌশল সাজিয়েছিল বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান বোলিং আক্রমণে এসে খুব দারুণভাবেই তা বাস্তবায়নের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। ইনিংসের প্রথম পাঁচ ওভারের মধ্যেই ‘ভয়ংকর’ ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম ও শেন উইলিয়ামসনকে সাজঘরে ফেরান বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। মাত্র ৮ রান করে স্বাগতিকদের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হতে হয় ব্লাক ক্যাপস দলপতিকে। সৌম্য সরকারের হাতে দলীয় ২৭ রানে ক্যাচ দেন তিনি। এর চার বল পরে একই ওভারে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় উইলিয়ামসনকেও (১)। সর্বশেষ ২৪ ইনিংসে প্রথমবারের মতো এক অঙ্কের ঘরেই আউট হন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৩৩ রানে নিউজিল্যান্ড হারিয়ে ফেলে দুই উইকেট।
কিন্তু ইনিংসের মাঝপথে বাংলাদেশি বোলাররা শুরুর এই মোমেন্টাম ধরে রাখতে পারেনি। দুই প্রান্তে স্পিন দিয়ে আক্রমণ শানানোর পর পেসাররা এসে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেননি। অথচ আগের ম্যাচেই মাশরাফি বিন মুর্তজা, তাসকিন আহমেদ ও রুবেল হোসেনের সমন্বয়ে গড়া ত্রয়ী ইংল্যান্ডকে ধসিয়ে দিয়েছিল। স্পিনারদের উইকেট শূন্য রেখে দখল করেছিল আট শিকার। কিন্তু শুক্রবারের হ্যামিল্টনে সেই পেসাররা তেমন সমীহই আদায় করতে পারলেন না। যদিও ম্যাককুলাম এই পেসারদের নিয়েই ভয়ে ছিলেন!
ফলশ্রুতিতে চাপ কাটিয়ে আস্তে আস্তে খেলায় প্রতাপ ছড়াতে থাকে নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় উইকেট জুটি। সপাটে ব্যাট চালাচ্ছিলেন কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিল। হ্যামিল্টনে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিরও দেখা পান অকল্যান্ডের ২৮ বছর বয়সী প্রতিভা। শেষে সাকিব নিজের তৃতীয় শিকার হিসেবে গাপটিলকে সাজঘরে ফেরান। টেলরের সাথে ১৩১ রানের জুটি গড়ার পর ব্যক্তিগত ১০৫ রান করে রুবেল হোসেনের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ৩১.৪ ওভারে দলীয় ১৬৪ রানে আউট হন কিউই ওপেনার।
এরপরই রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হন অ্যাডিলেড ওভালে ইংল্যান্ড-বধের অন্যতম নায়ক রুবেল হোসেন। স্বচ্ছন্দ ব্যাটিং করতে থাকা গ্রান্ট এলিয়টকে ৩৯ রানে আউট করেন ২৫ বছর বয়সী পেসার। টেলরের সাথে চতুর্থ উইকেট জুটিতে মহামূল্যবান ৪৬ রান যোগ করে দলীয় ২১০ রানে আউট হন এলিয়ট। ৩৯ ওভারের পঞ্চম বলে। এরপর দ্রুত ফিরতে হয় টেলরকেও। গোটা টুর্নামেন্টে দ্যুতিহীন থাকা টেলর এদিন ৫৬ রান করেন। ৪২তম ওভারে নাসির হোসেনের বলে এলবিডব্লিউয়ে থামতে হয় তাকে, যা স্বাগতিকদের কিছুটা চাপেই ফেলে দেয়।
এরপর লুক রঞ্চিও থিতু হতে পারেননি। ৪৫ ওভারের চতুর্থ বলে সাকিব তাকে চতুর্থ শিকার বানান। তাতে করে ম্যাচের লাগাম অনেকটাই বাংলাদেশের দিকে চলে আসে। কিন্তু ৪৬তম ওভারের শেষ বলে নাসিরের হাতে ভেট্টোরির ক্যাচ মিসের সাথে সাথে ম্যাচটাও বের হয়ে গেল কিনা সেই প্রশ্নটা থেকেই যায়। যদিও ফিল্ডার নাসির ক্যাচ লুফে নিতে প্রণান্ত চেষ্টাই চালিয়েছিলেন। কিন্তু এই ক্যাচ টাইগার সমর্থকদের হতাশা বাড়ায়। কারণ বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকরা শেষ পর্যন্ত সেই ভেট্টোরি ও টিম সাউদির ব্যাটে চড়েই জয়ের বন্দরে পৌঁছে। ইনিংসের সাত বল বাকি থাকতে। ভেট্টোরি ১৬, আর সাউদি ১৬ রান করেন। এর আগে অ্যান্ডারসনের ব্যাটে আসে ৩৯ রান। সাকিব ৫৫ রান দিয়ে চারটি উইকেট শিকার করে। দুটি উইকেট পেয়েছেন নাসির।
এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশের ইনিংসটা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আলোক ছটায় উজ্জল। এদিন বিশ্বের সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করার নজির দেখান ২৯ বছর বয়সী ক্রিকেটার। সাথে সাথে নিজের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১০৩ রানের ইনিংসকে ১২৮ রানে গিয়ে থামান। ক্রিকেটযজ্ঞে যা বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। ১৭৫ মিনিট উইকেটে থেকে১২৩ বল মোকাবেরায় ১২ চার ও তিন ছক্কায় ইনিংস সাজান রিয়াদ। ওয়ান ডাউনে নামা সৌম্য সরকার সাতটি চারের সাহায্যে ৫৮ বলে ৫১ রান করেন।
মিডল অর্ডারে ৪০ রান এসেছে সাব্বির রহমানের ব্যাট থেকে। দুই ছক্কা ও পাঁচ চারে ২৩ বলে ইনিংস সাজান তিনি। তামিম ইকবাল ১৩, ইমরুল কায়েস ২, সাকিব আল হাসান ২৩, মুশফিকুর রহিম ১৫ ও নাসির হোসেন ১১ রান করেন। ইনিংসের দশম ওভারের মধ্যে দলীয় ২৭ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট, কোরি অ্যান্ডারসন ও গ্রান্ট এলিয়ট। একটি উইকেট গেছে ডেনিয়েল ভেট্টোরির দখলে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফকে/এজে
নিউজবাংলাদেশ.কম