বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচেই অবসর নিতে চেয়েছিলেন মাশরাফি, কিন্তু...
মাশরাফি বিন মর্তুজার অবসর নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। গত এক-দেড় বছর বিশেষ করে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকে এই আলোচনা যেন পৌঁছে গেছে এক ভিন্ন মাত্রায়। ‘যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়াপড়শির ঘুম নাই’- এই প্রচলিত কথাটির মতোই মাশরাফি নিজের অবসর নিয়ে যতটা না চিন্তিত ছিলেন, তার চেয়ে বেশি ঘুম হারাম হয়েছে আশপাশের সবাই।
গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল, ক্রিকেট বোর্ড থেকেই মাশরাফিকে জোর দেয়া হচ্ছে অবসরের জন্য। যার জের ধরে মিডিয়া এবং ভক্ত-সমর্থক মহলেও আলোচনা চলেছে দেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়কের অবসরের ব্যাপারে। কিন্তু কোনো তথ্যই ঠিক পাকাপোক্ত ছিল না তখন।
অবশেষে প্রায় বছরখানেক পর মাশরাফি নিজেই খোলাসা করলেন অবসর রহস্য। জানালেন, তার আসলেই ইচ্ছা ছিল বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে অবসর নেয়ার। সেটি হোক ফাইনাল, সেমিফাইনাল কিংবা গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ। তবে বোর্ডের কাছ থেকে অন্যরকম কিছু কথা শুনতে পাওয়ার কারণেই তখন সিদ্ধান্তে বদল আনেন মাশরাফি।
তখনকার সময়ের ঘটনাবলি মাশরাফি জানিয়েছেন ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদের সঙ্গে ইউটিউব লাইভে। প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, সর্বমহল থেকেই আসা অদৃশ্য চাপের কারণে সৃষ্ট জেদ থেকে নিজের অবসর ভাবনা পিছিয়েছেন কিনা মাশরাফি। জবাবে পুরো বিষয়টি খোলাসা করেছেন তিনি।
মাশরাফি উত্তর বলেন, “দেখেন আমার অবসরের ঘটনা আগেও একটা ঘটেছে, টি-টোয়েন্টিতে। আপনাদের (মিডিয়া) সামনে এসে আমি কারও কথা বলিনি। তখন তো সবকিছু আমার পক্ষেই ছিল, তাও আমি কিছু বলিনি। এখন তো কিছুই আমার পক্ষে নেই, তাই এতকিছু বলার নেই।”
“তবে একটা কথা বলবো, বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে আমি অবসর নিতে চেয়েছিলাম। হ্যাঁ! চেয়েছিলাম। এটা যদি কেউ অস্বীকার করতে পারে, এমনকি ক্রিকেট বোর্ডের কেউও অস্বীকার করতে পারে...তাহলে আমার সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে হবে, আলাদা নয়। একসঙ্গে বসে কথা বলতে হবে।” যোগ করেন তিনি।
মাশরাফি বলেন, “আমি শেষ ম্যাচেই করতে চেয়েছিলাম। তখন এমন একটা কথা এসেছিল যে, এভাবে না হোক, সুন্দরভাবে হোক (অবসর)। দেশে আসার পর যেটা হয়েছে, জিম্বাবুয়েকে কত টাকা (২ কোটি) খরচ করে একটা ম্যাচ আয়োজন করা... তখন আমার মনে হয়েছে, মাশরাফি হয়তো মাঠ থেকে অবসর নেয়া ডিজার্ভ করে। কিন্তু একটা ম্যাচের জন্য ২ কোটি টাকা মাশরাফি ডিজার্ভ করে না। যেখানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের এই অবস্থা, সেখানে একটা ম্যাচের জন্য এত টাকা তার প্রাপ্য নয়। তাই আমি তখন অবসর নেইনি। এরপর হয়তো আস্তে আস্তে চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন এসেছে।”
“আমি অবসর নিতে চাইনি বা নিবো না... এমনটা যদি কেউ দাবি করে তাহলে সামনাসামনি বসতে হবে। আর ঐসময় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই ম্যাচের প্রস্তাব কেন নিইনি সেটাও বললাম। যেখানে আমার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের মনে কষ্ট আছে, সেখানে আমার একটা ম্যাচের জন্য ২ কোটি টাকা খরচ করাটা ভালো মনে হচ্ছিল না।”
“একইভাবে আমার কাছে মনে হচ্ছিল, এই দুই কোটি টাকা আমার ওপর ভারী হয়ে যাচ্ছে কিনা। এতই ব্যস্ততা যে, দুই কোটি টাকা দিয়ে আমাকে অবসর নেয়াতে হবে। তো এসব জিনিসও আমার মাথায় এসেছে। আপনি যেটা বললেন, জেদ বিষয়টা ঠিক না। তবে এসব জিনিস মাথায় কাজ করেছে। আর আমাকে যে মাঠ থেকেই অবসর নিতে হবে, এমন কোন প্রয়োজনীয়তাও দেখছি না।”
এসময় ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে কখনও অসম্মান হয়নি জানিয়ে মাশরাফি বলেন, “বোর্ডের সঙ্গে যেটা হয়েছে আসলে ভুল বোঝাবুঝি। আপনারা আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, আবার বোর্ডেও জিজ্ঞেস করেছেন, মাঝে একটা গ্যাপ চলে এসেছিল। তবে পাপন ভাই (বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন) কিন্তু সবসময় আমার সঙ্গে কথা বলেছেন, আমার চিন্তার কথা জানতে চেয়েছেন। তাই বলতে পারি বোর্ডের পক্ষ থেকে আমাকে যথেষ্ঠ সম্মান দেয়া হয়েছে।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/এসএস/এফএ