দুঃসময়ে যেভাবে অধিনায়ক মাশরাফিকে পাশে পেয়েছেন লিটন
টেস্টে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৪৪, বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেসে যাওয়ায় পরের ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ হয়নি। তারপরের ইনিংসেই প্রথম হাফ সেঞ্চুরি।
২০ টেস্টের ছোট্ট ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত সেঞ্চুরির দেখা না পেলেও, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯৪ রানের একটি ভাল ইনিংস আছে। নামের পাশে ফিফটি আছে মোট ৫টি। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ইনিংসেও পঞ্চাশের ঘরে পা (৫৩) রেখেছিলেন।
কিন্তু ওয়ানডেতে সেই লিটন দাসের ভিন্ন চেহারা! প্রথম ১৭ ম্যাচে তার ইনিংসগুলো ছিল যথাক্রমে ৮, ৩৬, ৩৪, ০, ১৭, ৫*, ০, ৭, ১৭, ২১, ১৪, ৬, ০, ৬, ৭, ৪১ ও ৬; নেই কোন ফিফটি, সর্বোচ্চ মাত্র ৪১। উইকেটে গিয়ে বলের গতিপ্রকৃতি না বুঝে আউট হয়েছেন। শুরু ভালই ছিল। তারপর একটা পর্যায়ে গিয়ে হঠাৎ আউট হয়ে ফিরে আসা।
অবশেষে ১৮ নম্বর ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বসা। ২০১৫ সালের ১৮ জুন ভারতের সঙ্গে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া লিটন দাস প্রথম পঞ্চাশ পেরিয়ে তিংন অংকে পা রাখতে সময় নেন তিন বছরের বেশি। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে ১১৭ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় ১২১ রানের উদ্ভাসিত ইনিংস খেলেন লিটন।
তারপর জট খুলে গেছে। পরের ১৮ ইনিংসে অবশ্য বেশ কটি খেলায় রান পাননি। তারপরও ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে ঠিক বেরিয়ে এসেছেন। ঐ ইনিংসগুলোর ভেতরে আছে দুটি শতক (১২৬ ও ১৭৬) ও তিন তিনটি বিগ ফিফটি (৮৩, ৭৬ ও ৯৪)।
এই দীর্ঘ সময় নিজেকে মেলে ধরতে না পারা। তারপর সে না পারার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে খুঁজে পাওয়া এবং রানে ফেরা। কী করে সম্ভব হলো তা? এর পেছনের গল্পটা কী? সেখানে সদ্য সাবেক হয়ে যাওয়া অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার ভূমিকা কতটা?
শনিবার রাতে ফেসবুক লাইভে লিটনের তা জানতে চাইলেন তামিম ইকবাল, ‘আমার এখনও মনে আছে তোর প্রথম ১৪-৫ টা ওয়ানডে ভাল যায়নি। কঠিন সময় ছিল তোর জন্য। তবে একটা স্বস্তি ছিল, আমরা তখন ম্যাচ জিততে ছিলাম। যে কারণে ঐ ব্যর্থতার খারাপ প্রভাব তোর ওপর সেভাবে পড়েনি। একটা বিষয় জানতে চাই। ঐ সময় তোর মাথায় কী কাজ করছিল? তুই কিভাবে ঐ প্রেশার হ্যান্ডেল করেছিলি? আর সর্বোপরি ঐ খারাপ সময়টায় মাশরাফি ভাইয়ের ভূমিকা কতটা ছিল? তিনি তোকে কতটা সাপোর্ট করেছেন?
লিটন অকপটে মাশরাফির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন, ‘মাশরাফির ভাইয়ের ব্যাকআপ আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। আমাকে অনেক আগলেও রেখেছেন তিনি। মাশরাফি ভাই ব্যাকআপ না দিলে হয়তো টানা ১৪-১৫টা ম্যাচ খেলা সম্ভব হতো না। তখন আমার যে পারফরমেন্স ছিল বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে টানা ১৫ ম্যাচ তেমন রান করে খেলাও একটা বড় বিষয় ছিল। সেই সময়টায় মাশরাফি ভাই অনেক সাহায্য করেছেন, পাশে ছিলেন।’
অধিনায়ক মাশরাফির প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি লিটন স্বীকার করেন, নিজের বোধ-উপলব্ধিটাও রান করায় রেখেছে ভূমিকা। শুরুর দিকে ঘরোয়া আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পার্থক্যটা বুঝতে দেরি করে ফেলেছিলেন তিনি। শুরুতে মনে হতো দেশের ক্রিকেটে তো যার তার বিপক্ষে রান করি, প্রচুর শটস খেলি। চার ও ছক্কার ফুলঝুরি ছোটাই। ভেবেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ওভাবে উল্কার গতিতে শুরু করা যায়। কিন্তু সেটাই ছিল ভুল। সে ভুল শুধরে নেয়ার পরই আসলে রানের নাগাল পাওয়া।
সে বোধ ও উপলব্ধির কথা জানিয়ে লিটন বলেন, ‘আমার মাথায় ছিল, জাতীয় দলের আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে যেখানেই খেলেছি পারফরম করেছি। হাফ সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি করেছি, কোথাও না কোথাও বিগ ইনিংস ছিল। কিন্তু ঐ একটি জায়গা ছিল ওয়ানডে যেখানে ২০টির মত ম্যাচে আমার কোন রেজাল্ট ছিল না। আমি নিজের খেলাটা খেলতে পারছিলাম না।’
‘প্রতিদিন ভাবতাম আমি মাঠে গিয়ে নিজের ন্যাচারাল খেলাটা খেলব, কিন্তু পারতাম না। আমি শটস খেলতে পছন্দ করি। শট খেলতাম। আর ভুল করে আউটও হতাম। আসলে তখন মাথা অত কাজ করেনি। আমি মেলাতে পারিনি যে ঘরোয়া ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইনিংস সাজানোর প্রক্রিয়া ভিন্ন। আমি ভাবতাম ঘরোয়াতে যেমন শুরুতে মেরে খেলে রান করতে পারি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও অমন ঝুঁকিপূর্ণ শটস খেলে ইনিংস গড়তে পারব। পরবর্তীতে বুঝতে পেরেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কিছু বিষয় নিজেকে মোকাবিলা করতে হয়।’
নিউজবাংলাদেশ.কম/এসএস/ডি