লাইলাতুল কদর তালাশ করি
লাইলাতুল কদর আমাদের দেশে ব্যাপক পরিচিত। নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই। এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ কোন ইবাদত কখন করতে হয় তা ভালোভাবেই জানেন, আলহামদুলিল্লাহ। এই বরকতময় রাতটি অন্বেষণে আমাদের করণীয় বিষয়গুলো জেনে নিই।
পবিত্র শবেকদর কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। এই বরকতময় রাতটি অনির্দিষ্ট বা গোপন রাখা হয়েছে। এতে রয়েছে মহান রব্বুল আলামিনের অনেক বড় নেয়ামত ও হেকমত। কারণ, যদি রাতটির দিনক্ষণ নির্দিষ্ট থাকত আর মানুষ রাত জেগে এর ফজিলত ও মহিমা লাভের জন্য তৎপর না হতো, তাহলে আল্লাহর এত বড় নেয়ামতের প্রতি অবহেলা করার শাস্তি হতো অকল্পনীয়। কাজেই শবেকদর অনির্দিষ্ট ও গোপন থাকার মধ্যেও মানবজাতির জন্য বহু কল্যাণ নিহিত আছে। মহান রব্বুল আলামিনের প্রতিটি ফয়সালাই বান্দার জন্য কল্যাণকর- এ কথাটি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করার মধ্যেই রয়েছে অনেক বড় কামিয়াবি ও সফলতা। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শবেকদর তালাশের জন্য কয়েকটি হাদিস বলেছেন।
এক হাদিসে এসেছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “তোমরা রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবেকদর তালাশ কর।”
অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯তম রাত। এবং শবেকদর তালাশের জন্য নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার জীবনে বহুবার রমজানে ইতিকাফ করেছেন। কাজেই শবেকদর তালাশের সবচেয়ে উত্তম পন্থা মসজিদে গিয়ে পুরুষদের এবং বাসগৃহে কোনো স্থান নির্দিষ্ট করে মহিলাদের ইতিকাফ করা।
অন্য হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি শবেকদর তালাশ করতে গিয়ে (রমজানের) প্রথম দশক ইতিকাফ করেছি। অতঃপর মধ্যম দশকেও ইতিকাফ করেছি। এরপর স্বপ্নে কেউ এসে আমাকে বলল, এটি শেষ দশকে। অতএব যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে প্রথমে ইতিকাফ করেছে সে যেন শেষ দশকেও ইতিকাফ করে (মিশকাত-১৯৮৬)।
কোন রাতটি শবেকদর তার একটি পরিচয় বা লক্ষণ বলা হয়েছে, পরের দিনের সূর্যের কিরণ উদয়ের সময় নিস্তেজ হবে (মিশকাত-১৯৮৭)। তাফসিরবিদগণ এর ব্যাখ্যা এমন করেছেন যে, কদরের রাতে যে অগণিত অসংখ্য ফেরেশতা আল্লাহর রহমত ও শান্তির সওগাত বিতরণ করেছেন, পরদিন ভোরে তারা আকাশে ফিরে যেতে ভিড়ের আবছা ছায়ায় সূর্যকে নিষ্প্রভ দেখা যায়।
এখানে একটি প্রশ্ন হতে পারে, যাদের মসজিদে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করার সুযোগ নেই বা ইতিকাফ করতে পারেনি তারা কীভাবে এই মোবারক রাতের ফজিলত লাভ করবে? এ প্রশ্নের উত্তর এমন হতে পারে যে, রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আলাল কেফায়া। এর অন্যতম লক্ষ্য হলো শবেকদর তালাশ করা। তা যদি মহল্লার কেউ না কেউ পালন করে তাহলে অন্যদের থেকে তার হুকুম রহিত হয়ে যায়। কিন্তু আরেক ধরনের ইতিকাফ আছে, যা মুস্তাহাব। মুস্তাহাব ইতিকাফে ১০ দিনের শর্ত নেই। অল্প সময়ের জন্যও ইতিকাফ হতে পারে। কাজেই শবেকদর তালাশকারী বন্ধুরা দিনের বেলা সম্ভব না হলেও অন্তত শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে কাটাতে পারেন।
এ সম্পর্কে এক হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উনাইছ (রা.) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, একবার আমি বললাম- ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), পল্লীগ্রামে আমার বাড়ি। আমি সেখানে বাস করি এবং আলহামদুলিল্লাহ সেখানে নামাজও পড়ি। সুতরাং আমাকে রমজানের একটি নিদিষ্ট রাতের কথা বলে দিন, যাতে আমি (শবেকদর তালাশের জন্য) আপনার মসজিদে আসতে পারি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি তেইশে (রমজান) রাতেই এসো।
বর্ণনাকারী বলেন, তখন তার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তোমার পিতা তখন কী করতেন? সে উত্তরে বলল, তিনি যখন আসরের নামাজ পড়তেন তখন ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করতেন। অতঃপর (প্রাকৃতিক প্রয়োজন ব্যতীত) ফজর নামাজ না পড়া পর্যন্ত কোনো কাজে মসজিদ হতে বের হতেন না। যখন ফজরের নামাজ পড়তেন তখন মসজিদের দরজায় আপন বাহনটি প্রস্তুত পেতেন এবং সেই বাহনে চড়ে আপন পল্লীতে চলে যেতেন
( মিশকাত: ১৯৯৩)।
অন্য হাদিসে এসেছে, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, “আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)। বলুন যদি আমি বুঝতে পারি শবেকদর কোন রাতে, তখন আমি কী বলব? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি তখন বলবে, ‘আল্লাহুমা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা- ফু আন্নি’। অর্থাৎ : প্রভু হে তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাস।”
অতএব আমাকে ক্ষমা করে দাও। (ইবনু মাজা, তিরমিজি)। তাই আসুন! আজকের রাতটি বিজোড় রাতের একটি। যারা লাইলাতুল কদর তালাশের উদ্দেশ্যে মসজিদে ইতিকাফে বসেছেন মোবারকবাদ। কিন্তু যারা সেই সুযোগ পাইনি চলুন লাইলাতুল কদর তালাশে রাতভর ইবাদত বন্দেগি করি। মহান প্রভু আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য পাওয়ার আমলে নিজেদের ব্যস্ত রাখি। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন। আমিন আমিন ছুম্মা আমিন।
[লেখক: জ্ঞান সৃজনশীল প্রকাশক, সদস্য, ডিইউজে ও প্রাবন্ধিক]
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ