মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ: যুধিষ্ঠির বধ করলেন কৌরব সেনাপতি শল্যকে
কর্ণের মৃত্যুর পর যুদ্ধের ১৮তম দিনে কৌরবদের শেষ সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত হয় শল্য। মদ্ররাজ শল্য ছিল মাদ্রীর ভাই অর্থাৎ সম্পর্কের দিক থেকে পঞ্চ-পাণ্ডবদের মামা। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে যুধিষ্ঠির কৌরবদের শেষ সেনাপতি শল্যকে বধ করে।
অন্যদিকে, সহদেবের হাতে শকুনি নিহত হয়। শকুনিই ছিল মহাভারতের প্রধান খল-নায়ক। ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারীর বিয়ের পর থেকেই তিনি হস্তিনাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা এবং প্রথম থেকেই দুর্যোধনের সব কাজে নিত্য সহচর ও সহায়ক ছিল। শকুনি ছোটবেলা থেকেই দুর্যোধন ও তাঁর ভাইদের মনে পঞ্চ-পাণ্ডবদের প্রতি বিদ্বেষের বিষবাষ্প তৈরি করে। মহাভারতের যুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে শকুনি, যে ছিল অত্যন্ত চতুর ও কুটিল। যুদ্ধের ১৮তম দিনে সহদেব শকুনির শিরচ্ছেদ করে তাকে বধ করে।
শল্য ও নিজ মামা শকুনির মৃত্যুর পর ভীত দুর্যোধন দ্বৈপায়ন হৃদে আত্মগোপন করে। ভীম দুর্যোধনকে গদাযুদ্ধে আহ্বান জানায়। কিন্তু, গদাযুদ্ধের নিয়ম ভঙ্গ করে ভীম দুর্যোধনের উরুভঙ্গ করায় বলরাম রেগে যায়। বলরাম ভীমকে বধ করার জন্য উদ্যত হয়। শ্রীকৃষ্ণের হস্তক্ষেপে ভীম রক্ষা পায়।
দুর্যোধনের উরুভঙ্গের পর অশ্বত্থামা আহত দুর্যোধনের সাথে দেখা করতে যায়। দুর্যোধনের সকল কুকর্মের সহায়ক ছিল এই অশ্বত্থামা। শল্যের মৃত্যুর পর যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে দুর্যোধন অশ্বত্থামাকেও সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ করে। বনের মধ্য একটি গাছে প্যাঁচা কর্তৃক কিছু ঘুমন্ত কাক কে হত্যার দৃশ্য দেখে অশ্বত্থামার মাথায় দুর্বুদ্ধি আসে। তিনি নিজেও পাণ্ডবদের ঘুমন্ত অবস্থায় মারার সংকল্প নেয়। গভীর রাতে পাণ্ডব শিবিরে প্রবেশ করে অশ্বত্থামা পাণ্ডবদের সেনাপতি ধৃষ্টদ্যুম্ন, শিখণ্ডিনী সহ দ্রৌপদীর সকল সন্তানকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে অশ্বত্থামার কাছে এই সংবাদ শুনে দুর্যোধনের আনন্দের সীমা ছিল না। এরপরই দুর্যোধন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
অশ্বত্থামার এই নিষ্ঠুর আচরণে শ্রীকৃষ্ণ তাকে অভিশাপ দেয় যে, “অশ্বত্থামাকে জীবনে অশেষ দুর্গতি ভোগ করতে হবে। অশ্বত্থামা তিন হাজার বছর কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়ে একাকী জীবনযাপন করতে হবে।” অনুশোচনার জন্য অশ্বত্থামা শ্রীকৃষ্ণের এই অভিশাপ মেনে নিয়ে বনে চলে যায়। পরবর্তিতে অশ্বত্থামার শেষ পরিণতি কি হয়, এটা মহাভারতে স্পষ্ট উল্লেখ নেই।
মহাভারতের একটি বিখ্যাত শ্লোক হচ্ছে, “যতো ধর্মস্তত কৃষ্ণো, যতঃ কৃষ্ণস্ততো জয়ঃ।” এর অর্থ হচ্ছে, “ধর্ম যেখানে শ্রীকৃষ্ণ সেখানে, শ্রীকৃষ্ণ যেখানে জয় সেখানে।” ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চেয়েছিলেন ধর্মের প্রতিষ্ঠা। আর সেইজন্যই কুরুক্ষেত্রের রণভূমিতে যুদ্ধমত্ত অধার্মিক শক্তিকে ধ্বংস করতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সব সময়ই পাণ্ডবদের সহায় ছিলেন।
কুরুক্ষেত্রের রণভূমিতে সাধুদের পরিত্রাণ এবং দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্যই প্রয়োজনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ছলনা বা মায়ার আশ্রয় নিয়েছেন। তাই তিনি বারবার বলেছেন, “তুমি সকল ধর্মকে অর্থাৎ সকল কর্তব্যকর্মকে আমাতে ত্যাগ করে আমার শরণাপন্ন হও। আমি তোমাকে সকল পাপ থেকে মুক্ত করে দেব।”- পাণ্ডবদের প্রতি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই প্রতিজ্ঞাই মহাভারতীয় রাজনীতির শেষ কথা.........
আরডি/
নিউজবাংলাদেশ.কম