সুন্নতের গুরুত্ব ও মর্তবা
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি মানুষকে সৃষ্টি করে পদে পদে তার সহজতার জন্য নিয়ম-কানুন ঠিক করে রেখেছেন। যেমন- কিছু কাজ খুবই গুরুত্ব ও যত্নসহকারে করতে হবে, না করলে গুনাহ হবে আর তা হচ্ছে, ফরজ। এভাবে পর্যায়ক্রমে ওয়াজীব, সুন্নত, নফল। শরীয়তের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং মর্তবাপূর্ণ হচ্ছে ফরজ।
উলামায়ে কেরাম বলেন, ফরজ ও ওয়াজীব হচ্ছে আল্লাহর হক্ক, সুন্নত হচ্ছে নবীর হক্ব, নফল হচ্ছে নিজস্ব হক্ব। ফরজ ও ওয়াজীবের মর্তবা বা ফজীলত বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। তবুও সুন্নতের মর্তবা থুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ফরজের শক্তি ও ফজীলতকে বৃদ্ধি ও মজবুত করে।
তিরমিযী শরীফের এক হাদীসে রয়েছে, মিসওয়াকসহ যে নামায পড়া হয় তা বিনা মিসওয়াকের নামাযের চেয়ে ৭০গুণ বেশী ফজীলত রাখে। মসজিদে জামাতের সাথে ফরজ নামাজ আদায় করলে ৫০০গুণ সওয়াব পাওয়া যায়।
রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন, “আমার উম্মতের ফেতনা-ফাসাদের যামানায় যে আমার একটি সুন্নতকে জিন্দা করল সে ১০০ শহীদের সওয়াব লাভ করবে।” সুন্নত সম্পর্কে নবীজী আরো বলেন, “যে আমার একটি সুন্নতকে জিন্দা করলে সে আমাকে ভালবাসলো। আর যে আমাকে ভালোবাসলো সে আমার সাথে জান্নাতে অবস্থান করবে।”
সুন্নত তরীকায় চলার দ্বারা উম্মতের শুধুমাত্র যে পারলৌকিক কল্যাণই সাধিত হয় তা নয়, বরং পার্থিব সুখ শান্তি এবং নিরাপত্তাও হাসিল হয়ে থাকে।
আমাদের হিসাব অনুযায়ী , যখন ক্ষুধা লাগে তখন আমরা খাবার খাই কিন্তু সুন্নত হলো পেট ভর্তি করে না খাওয়া। কেননা এতে পেটের হজমের জন্য সহজ। যদি আমরা সুন্নত নিয়ম না মেনে চলি তাহলে পেট খারাপসহ নানান প্রকার অসুবিধা হতে পারে।
অণুরুপভাবে, যে ঘরে সালামের আদান প্রদান হয় সে ঘরে ঝগড়া ফাসাদ হয় না। আর সালাম হচ্ছে নবীজীর এক আদার্শ সুন্নত।
এছাড়াও আরো কিছু সুন্নত রয়েছে যেমন- সকলের সাথে পরামর্শ করে কাজ করা। এতে পারস্পারিক ভালোবাসা বহাল থাকে। খাবার বসে খাওয়া, ঢিলা কুলূখ ব্যবহার করা, শোবার পূর্বে বিছানা ৩ বার ঝাড়া, জুতা নেড়েচেড়ে পরা , চোঁখে সুরমা ব্যবহার করা, পুরুষদের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা ইত্যাদি কাজ নবীজীর সুন্নত তো বটেই এ সমস্ত বিষয়ে দুনিয়াবী অনেক উপকারও রয়েছে যা একটু চিন্তা করলেই বুঝে আসবে।
আমাদের জীবনের প্রতিটি দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সুন্নতের সংখ্যা অপরীসীম । তারপরও দেখা যায়, সুন্নত মেনে চলার মাধ্যমে হারাম কার্যাবলী থেকেও হেফাজতে থাকা যায়। যেমন- নজর বা দৃষ্টিকে হেফাজত করলে হারাম দৃশ্যাবলী থেকে চোখের হেফাজত হয়। পাশাপাশি পাগড়ী পড়ার দ্বারা পথে দূর্ঘটনার শিকার হলে মাথা হেফাজত থাকে।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, সাহাবাগণ মেসওয়াকের সুন্নত পালন করার কারণে তারা বিনা যুদ্ধে জয় লাভ করেন। কাফেররা এ ভয়ে ময়দান ছেড়ে পলায়ন করেছিল। কাফেররা এ দৃশ্য দেখে ভেবেছিল, মুসলমানরা এটি আবার কোনো রণকৌশল অবলম্বন করছে যে, তারা গাছের ডাল দ্বারা দাঁতকে ধার করছে।
দেখুন সামান্য মেসওয়াকের সুন্নত পালন করার দ্বারা আল্লাহ কাফেরদের অন্তরে ভয় ঢেলে দিলেন যার ফলে মুসলমানদের এত বড় পাওয়া। আজকের দিনে আমরা সুন্নতকে আকড়ে ধরাতো দূরে থাক, দুনিয়ার পিছে পরে আমাদের ফরজ হুকুমসমূহ যে কিভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তা নিজেরা বুঝি না। সামান্য একটি প্রাণীও বুঝে নিবে কিসে লাভ। সে ভাববে, যদি আমি বন থেকে বের হই তাহলে আমার হয় বন্দি হতে হবে, না হয় মারাই যাবো। সুতরাং যে প্রাণী এটা ভুলেও বন থেকে বের হয়ে লোকালয়ে আসে বা দল থেকে আলাদা হয় তারই বিপদ আসে।
ঠিক এমনিভাবে মানুষের জন্য আল্লাহ একটি দিক সীমাবদ্ধ রেখেছেন, তা হলো শরীয়ত। আর এই শরীয়তের এক একটি হুকুম আমাদের সঠিকভাবে আদায় করতে হবে।
আসলে একটি সুন্নতের দাম এত বেশি যে দুনিয়া ও তার মাঝে যা রয়েছে সব যদি একত্রে করা হয় আর নবীজীর একটি সুন্নতকে যদি তার সাথে পাল্লা দেওয়া হয় তবে নবীজীর সুন্নতের পাল্লাই ভারী হবে।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সুন্নত তরীকার খেলাপ হলো বেদায়াত। আর বেদায়াতকে অবলম্বন করলে তা হবে গোমরাহী। আর এর বিপরীতে সুন্নত মেনে চললে হবে হেদায়াত। যা একজন মুসলমানের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেই প্রয়োজন। কেয়ামতের ময়দানে কেউ যদি প্রকৃত মুসলিম হয়ে উঠতে চায় তবে সে যেন সুন্নতের উপর পুরোপুরি আমল করে। শয়তান মানুষকে সুন্নতের বিপরীতে চলার জন্য প্ররোচণা দেয়। সে সর্বদা চেষ্টা করে যে মানুষ যে রকম ইচ্ছা চলুক সুন্নত অনুসরণ যেন না করে। শয়তানের কাজ হলো যে কোনো উপায়ে সৎ মানুষকে সুন্নত থেকে দূরে রাখা
প্রথমে শয়তান মানুষকে গুনাহর দিকে আহবান করে। পরে যখন ব্যর্থ হয় তখন সে বেদায়াতের দিকে ঝুকিয়ে দেয়। আর যে মনে করবে আমি শুধু কোরান মেনে চলবো হাদিসের দরকার নেই সুন্নতের কোনো প্রয়োজন নেই, তখনই তার মাঝে শয়তানের মাধ্যমে বেদায়াত প্রবেশ করবে, সে বুঝবেও না। কেননা সে কোরান মেনে ফরজ ও ওয়াজীব আদায় করবে এবং নবীজীর বর্ণিত হাদীস ও সুন্নতকে পরিত্যাগ করবে। সে তার মতে সঠিক, তাই তাকে সঠিক পথে আনা যেমন কঠিন তেমনি সুন্নতের গুরুত্ব বুঝানো অসম্বভ।
এছাড়াও শরীয়তের দৃষ্টিতে আরো কিছু বেদায়াত রয়েছে যেমন- আশুরার দিন মিছিল করা,মাজারে শিরনী করা, কবরে বাতি দেওয়া, পীর-ফকীরদের গোসল না করে চুলে জট পাকানো, কাপড়ের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু কাপড় শুধু পড়া, উরশ করে তাবারক বিতরণ করা, মৃত মানুষের চল্লিশা পালন করা, শবে বরাতে বাতি জ্বালানো ও আঁতসবাজি ফুটানো, জ্যোতিষের গণনা ও গণকের গণনা বিশ্বাস করা, কুফুরীমূলক কর্মে তাবীজের ব্যবসা করা এবং এদের থেকে তাবীজ গ্রহণ করা ইত্যাদি।
আরো অনেক বেদায়াত রয়েছে যে গুলো একদম শিরিকের পর্যায় পৌছে দেয়।অার বেদায়াতের ব্যাপারে সব চেয়ে মারাত্নক ক্ষতি হচ্ছে, মানুষ প্রকৃতপক্ষে যদি কোনো গুনাহ করে ফেলে তাহলে সে গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য তওবা করে, যার ফলে আল্লাহ তাকে গুনাহ থেকে হেফাজত করেন।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বেদায়াতকারী ব্যক্তি মনে করে সে সঠিক পথেই রয়েছে যার ফলে সে তওবা করেনা। আল্লাহ তাকে ক্ষমা ও হেফাজত করেন না। ফলে সে নিজেকে হক্ব মনে করে জিন্দিগী তওবাহীন কাটিয়ে মৃত্যুবরণ করে। সুন্নতকে না মেনে নিজের কতো বড় ক্ষতি হয়ে যায় তা সে বুঝতেও পারে না।
যখন আমরা প্রত্যেকটি কর্মে সুন্নতের নিয়মকে জানতে পারবো সে অনুযায়ী কর্মে পরিনিত করতে পারবো একমাত্র তখনই আমরা এর লাভ সম্পর্কে বুঝতে পারবো । একটা কাজে লাভ জানার দপর সে কাজে আ্গ্রহ আসে, করতে ইচ্ছা হয় । আর কাজটা করার পর যখন সে লাভ নিজে ভোগ করতে পারে তা থাকে আরো লোভনীয়।
সুতরাং আমরা সুন্নতকে মেনে সে অনুযায়ী জীবনকে গড়ে দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবি হাসিল করবো । আর আমরা যখন চেষ্টা করবো আল্লাহ পাক আমাদের জন্য তা কর্মে পরিণত করার পথ সহজ করে দিন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এএইচকে
নিউজবাংলাদেশ.কম