ব্রিসবেন ডায়েরি
ড. সুসান ফেরদৌস
মাউন্ট ‘কোট-থা’ (যার মানে হল যেখানে মধু পাওয়া যায়। কারণ এইখানে আগে আদিবাসীরা মধু সংগ্রহে আসত) লুকআউট পয়েন্ট যা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ২শ ৮৭ মিটার উপরে। এইখান থেকে সম্পূর্ণ ব্রিসবেন শহরের সুন্দর্য উপভোগ করা যায়। ব্রিসবেনে ঘুরতে আসলে এইখানে একবার আসা উচিত সবার। পুরো শহরকে এক সাথে দেখার কেন জানি আলাদা মজা। যদিও আমি গিয়েছিলাম অনেক রাতের বেলা, তবু গিয়ে দেখি শুধু আমি না, আমার মতো অনেকে আছে। কেউ কেউ আবার চাদর বালিশ নিয়ে শুয়ে শুয়ে রাতের চন্দ্রমুখর পরিবেশ উপভোগ করছেন। সেখানে এত ভাল লাগছিল যে কখন যে তিন ঘণ্টা কেটে গেলে বুঝে উঠতে পারলাম না। প্রকৃতির মাঝে বসে একটা রাতের আলোকিত শহরের সুন্দর্য উপভোগ করলে আসলে সময়ের দিকে কোন খেয়াল থাকে না। পরে মন না চাইতেও বন্ধুর বাসায় চলে আসলাম। কারণ পরের দিন সকালে আমাদের ব্রিসবেন থেকে রওনা দিতে হবে গোল্ডকোস্ট এর উদ্দেশে।
রাতটা পার করে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি বন্ধুর হাউসম্যাট নাদিম ভাই আমাদের জন্য নাস্তা বানিয়ে রেখেছেন। বিদেশের মাটিতে দেশীয় আতিথেয়তা পাওয়া খুব ভাগ্যের ব্যাপার। সব কিছু শেষ করে বেড়িয়ে পরলাম গোল্ডকোস্ট এর উদ্দেশে, যেটা কিনা প্রায় ৮০ কি.মি. দূরে ব্রিসবেন থেকে।
সঙ্গী আমার বন্ধু মাহবুব আর বন্ধুর গাড়ি। পরে কিছু খওয়া দাওয়া কিনে যাত্রা শুরু করলাম। আমাদের ইচ্ছা ছিল সারফারস প্যারাডাইস সমুদ্র সৈকত দেখা আর সেখানে সমুদ্র স্নান করা। এরই মাঝে যুবায়ের ভাই ফোন দিয়ে বলল আমরা যাতে ওনার বাসায় দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করি। ওনার বাসা রফারস সারফারস সমুদ্র সৈকতের কাছে। দাওয়াত তাও আবার ঘুরতে এসে বিদেশের অচিন জায়গায়। যেতে যেতে এত দিনের জমানো সব কথা বলা হল। এই রকম ভ্রমণ দেশে থাকতে যতবারই করছি আমার সঙ্গী ছিল বন্ধু সুকান্ত। ওকে মিস করছিলাম তখন।
ঘণ্টাখানেক পরে আমরা সারফারস প্যারাডাইস সমুদ্র সৈকতে পৌঁছলাম টিকই কিন্তু পড়লাম পার্কিং নিয়ে ঝামেলায়। হলিডে থাকাতে অনেক মানুষের ভিড় ছিল তাই পার্কিং পাওয়াটা মুশকিল ছিল। এদিক ওদিক ঘুরে অনেক কষ্টে গাড়িটা পার্ক করলাম। কোন সময় নষ্ট না করে সরাসরি সমুদ্র সৈকতে চলে গেলাম। যেহেতু সময়টা তখন দুপুর হয়ে গেছিল। আকাশটা খুব অন্ধকার হয়েছিল। মনে হচ্ছিলো যেন সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। অভাবনীয় সুন্দর ছিল কিন্তু কোন মতেই আমাদের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সমতুল্য হবে না, যা কিনা বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। একটা কথা না বললেই নয়, তা হল এত মানুষ তাও পরিষ্কার ছিল জায়গাটা। সৈকতের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল উঁচু উঁচু আকাশচুম্বী অট্টালিকা। সব মানুষের ভিড়ে আমরাও লাফিয়ে পড়লাম পানিতে। সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে ভেসে ভেসে অনেকক্ষণ জলকেলি করলাম। তখন মনে হচ্ছিল যদি আর একবার ঘুরে আসতে পারতাম সেন্টমার্টিন, মানসিক প্রশান্তি যে সেখানে পাওয়া যায় বেশি। ঘণ্টা খানেক পরে লাইফগার্ড ঘোষণা দিল যাতে সবাই পানি থেকে উঠে পরে কারণ আবহাওয়াটা খুব খারাপ ছিল তখন। নিমিষেই সৈকত খালি হয়ে গেল। বৃষ্টি এত বেশি ছিল যে আর থাকা গেল না। পরে ফিরে এলাম গাড়িতে।
লেখক: ড. সুসান ফেরদৌস, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী।
নিউজবাংলাদেশ.কম/ এমএস