সিডনিতে একজন শিপ্রা ভাবি
একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুবাধে অকল্যান্ডে ১৯৯৬ সালে শিপ্রা ভাবির সাথে আমার প্রথম পরিচয়। শিপ্রা ভাবির ভাই শারেক আমার কাজিন শিবলীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই দিনে দিনে পরিচয়ের সূত্রটা আরো দৃঢ় হয়। ভাবি লাঞ্চের জন্য বাসা থেকে মজার মজার খাবার নিয়ে আসতেন। আমি আর মবিন ভাই সেইখাবারে ভাগ বসাতাম। উইকেন্ডে ভাবিদের বাসায় দাওয়াতের অপেক্ষায় থাকতাম। ভাবিদের বাসায় গেলে মনোয়ার ভাই আমাদের খুব খাতির-যত্ন করতেন।
আমি সিডনি চলে আসার কিছুদিন পর ভাবিরাও সিডনি চলে আসে। তখনও আমি বিয়ে করিনি। ভাবি একদিন তাদের তাদের সিডনির বাসায় আমাকে দাওয়াত দিলেন। বাসায় গিয়ে দেখি খাবার দাবারের এক এলাহী কাণ্ড। প্রায় ষোলো পদের খাবারের আয়োজনে মেহমান আমি একা। মনোয়ার ভাইয়ের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে উনি শুধু মুখ টিপে হাসলেন।
বৌকে নিয়ে সিডনি এসেছি জানতে পেরে ভাবি আমাদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়ালেন। খাবারের আয়োজন দেখে আমার স্ত্রীর ভিমরি খাবার অবস্থা।
গত রোজার ঈদে মনোয়ার ভাই ফোন করে দাওয়াত দিয়েছিল, ব্যস্ততার কারণে যেতে পারিনি। এই ঈদের আগে আবারও মনোয়ার ভাই ফোন করে তাদের বাসায় যেতে অনুরোধ জানালো।
ঈদের দিন স্বপরিবারে ভাবিদের বাসায় হাজির হলাম। এত বছরেও ভাবির শখ এতটুকু বদলায়নি। এবারের ঈদে রান্না করেছেন মাত্র সাঁইত্রিশ পদ। আর দই মিষ্টি মিলিয়ে তা পঞ্চাশের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছেছে।
মনোয়ার ভাই অনুযোগের সুরে জানালেন, আপনার ভাবি গতকাল সকাল দশটা থেকে রান্না শুরু করে আজ ভোর পাঁচটায় রান্না শেষ করেছে। ভাবিকে জিজ্ঞেস করলাম, এখনো এখনও এত পদ রান্না করতে কেমন লাগে? ভাবি স্বভাব সুলভ মিষ্টি হেসে জানালো, আমার রান্নার আনন্দে এখনো কোনো কমতি নাই, তবে কী ভাই জানেন, ইদানিং একটু দুর্বল দুর্বল লাগে।
লেখক: নাইম আবদুল্লাহ: সিডনি প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক
নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএস
নিউজবাংলাদেশ.কম