শিল্পকলায় হামলা:
হাত কেন মুষ্টিবদ্ধ হলো না
বুধবার রাতে শিল্পকলা একাডেমিতে নাট্যকর্মীদের ওপর হামলা চালায় ৩০/৪০ জনের একটি দল। এ সময় দুই নাট্যকর্মী আহত হন। পুলিশ ৬ হামলাকারীকে আটক করে। বিষয়টি নিয়ে দুএকটি টিভি চ্যানেল সংবাদ প্রকাশ করলেও অধিকাংশ টিভিতে কোনো এ বিষয়ে স্ক্রলও ছিল না। এছাড়া রহস্যজনক কারণে দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও এ হামলার সংবাদ তেমন গুরুত্ব পায়নি। আর যেটুকু সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তাও পুলিশের বক্তব্য নিয়ে। ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন নাট্যকর্মী জুলফিকার হোসাইন সোহাগ। তিনি ফেসবুকে লিখে ঘটনার প্রকৃত দৃশ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
প্রতিদিনের মত আজও গিয়েছিলাম আইটিআই এর বাংলাদেশ আয়োজিত আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে নাটক দেখতে। আজ পরীক্ষণ থিয়েটার হলে দেখলাম থিয়েটার আর্ট ইউনিটের নাটক ‘না মানুষি জমিন’ বেশ ভালো লেগেছে প্রযোজনাটা।
নাটক শেষে জাতীয় নাট্যশালার মূল গেটের সামনে নাটক নিয়ে এমন গল্পই করছিলাম। হঠাৎ ভিতর থেকে আওয়াজ আসে ধর... ধর...। দৌড়ে ভিতরে গিয়ে দেখি, একজন ছেলেকে ধাওয়া করেছে কয়েকজন, পরে তাকে ধরে আনসার রুমে নিয়ে রাখা হয়। কারণ হিসেবে জানতে পারলাম যে, স্টুডিও থিয়েটার হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের নাট্যদলের ‘উল্টোরথ’ মঞ্চস্থ হয়। নাটক শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে স্থানীয় কিছু বখাটে ছেলে নাট্যদলের প্রপসে হাত দেয়, মানা করলে তখন তাদের সাথে কথা কাটাকাটি হয় এবং দেখে নেবার হুমকি দেয়। পরে নাটক শেষ হবার আগে হঠাত ১০/১২ জন বহিরাগত ছেলে বিনা কারণে ভীষণ গণ্ডগোল বাঁধায়, সেখানে চীন থেকে আগত বেশ কিছু নাট্যকর্মীও ছিল তারা ভীষণ ভয় পেয়ে ছুটাছুটি শুরু করে। এমন অবস্থায় ওই বহিরাগতদেরকে নাট্য উৎসবের দায়িত্বে থাকা বেশ কিছু নাট্যকর্মী বের করে দেয় এবং ২ একজনকে আটক করে, এমন ঘটনা ঘটানোর কারণ জানার জন্য।
এমন অবস্থায় সেখানে উপস্থিত হন স্থানীয় এক নেতা, তিনি বলেন, তোমরা বিনা কারণে কেন আমাদের ছেলেদের আটকে রেখেছ? তিনি অনেক চোটপাট করে তাদের ছেলেদের ছেড়ে দিতে নিজেই উদ্যত হন। এমন অবস্থায় যখন একজন নাট্যকর্মী বলে আপনি ছেড়ে দেবার কে? তখন তিনি ক্ষেপে গিয়ে তার দলীয় পরিচয় দেয় এবং খুব গরম হয়ে বলে স্থানীয় পোলাপানের সাথে লাগার হিসাব কিন্তু পাইবেন বলেই তিনি ফোন করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ৩০/৪০ জন সশস্ত্র ছেলে এসে দায়িত্বরত নাট্যকর্মীদের উপর চড়াও হয় এবং মারপিট শুরু করে। এসময় কিছু নাট্যকর্মীও যখন তাদের আত্মরক্ষায় ওদের প্রতিহত করতে চেষ্টা করে, তখন শিল্পকলা যেন রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। কয়েকজন নাট্যকর্মী আহত হন। সেখানে শিল্পকলার দায়িত্ব থাকা বেশ কিছু আনসার থাকলেও তাদের ভূমিকা ছিল বাশিঁতে ফুক দেয়ার মধ্যেই সিমাবদ্ধ।
কয়েকজন পুলিশও সেই সময় উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তারা যেন নীরব দর্শক। এখন কথা হলো আমরা যারা নাট্যকর্মী তারা সব সময় মনে করতাম যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা নাট্যকর্মীদের অভয়ারণ্য, মায়ের কোলের মতো নিরাপদ। কিন্তু আজ শুধুমাত্র স্থানীয় এবং দলীয় হওয়ার কারণে যদি নাট্যকর্মীদের সেই অভয় অরণ্যেই মার খেতে হয়, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? সারাজীবন শুনে শিখে এসেছি নাট্য কর্মীদের প্রতিবাদ করতে হয় মঞ্চে তাই বুঝি আজও শত শত নাট্যকর্মীদের মাঝে দায়িত্বরত কয়েকজন নাট্যকর্মীকে মার খেতে হলো মাত্র কয়েকজন স্থানীয় দলীয় সন্ত্রাসীদের কাছে ।
আর আমরা হয়তো মনে মনে স্ক্রিপ্ট করছি কোন একদিন প্রতিবাদ করবো কোন মঞ্চ নাটকের মাঝে! ততদিনে...! যেকোনো জাতীয় স্বার্থে আমরা নাট্যকর্মীরা এক হয়ে মানববন্ধন করি, অনশন করি, মশাল মিছিল করি। কিন্তু আজ আমাদের স্বার্থে কেন আমরা এক হতে পারলাম না । কেন আজ আমার নাট্যকর্মী বহিরাগত সন্ত্রাসী দ্বারা অপমানিত হলো? আর আমরা কেন সুবোধ দর্শকের ভূমিকায় দেখে গেলাম? কেন আজ আমাদের হাত মুষ্টিবদ্ধ হলো না ? এ প্রশ্ন করো কাছে নয়! এটা আমার কাছে আমার প্রশ্ন। কারণ আমি একজন নাট্যকর্মী!
নিউজবাংলাদেশ.কম