News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ৬ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ০৩:২২, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

অবরোধের ৬০তম দিন আজ, অনির্দিষ্ট পথে গণতন্ত্র

অবরোধের ৬০তম দিন আজ, অনির্দিষ্ট পথে গণতন্ত্র

নিউজ ডেস্ক : সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধের ৬০তম দিন আজ। দেশের ইতিহাসে এত দীর্ঘ সময় এরকম ঘটনা এই প্রথম। চলমান এ সঙ্কট কবে নাগাদ কাটবে তা এখন অনির্দিষ্ট।  

অবেরাধে ঘটানো রাজনৈতিক সহিংসতায় এরই মধ্যে আগুনে পুড়ে প্রাণ হারিয়েছে শতাধিক মানুষ। এদের সবাই সাধারণ জনগণ। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মরণ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে কয়েকশো সাধারণ মানুষ। যারা রাজনীতির ধারে-কাছে কখনো ছিল না। খেয়ে-পড়ে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকাই ছিল তাদের প্রতিদিনকার রুটিন।

শুধু যে মানুষের প্রাণই যাচ্ছে তা নয়। চলমান হরতাল-অবরোধে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, পরিবহন ও চিকিৎসার মতো সেবা খাতগুলো। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ অবস্থায় বিশ্বের দরবারে ইমেজ সঙ্কটে পড়বে বাংলাদেশ। আর গণতন্ত্র হাঁটতে থাকবে অনির্দিষ্ট্ পথে।

এদিকে, দেখতে দেখতে চলমান হরতাল-অবরোধের ষাট দিন পেরিয়ে গেছে। এখনো সঙ্কট সমাধানের কোনো আশা দেখতে পাচ্ছে না জাতি। দেশ-বিদেশের নানা মহল সরকার ও বিরোধী দলকে সঙ্কট সমাধানের তাগাদা দিলেও অবস্থা যা তাই থেকে যাচ্ছে। মাঝখানে প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। পুড়ছে যানবাহন। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি।

বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশে এ অবস্থা দেশকে ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে। যে অবস্থা থেকে উঠে আসতে বাংলাদেশকে বেগ পেতে হবে।

সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গণমাধ্যমকে জানান, চলমান পরিস্থিতি দীর্ঘ সময় ধরে থাকায় জাতীয় অর্থনীতির চক্র ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন আগে চলমান অবরোধে দেশের অর্থনীতির ক্ষতির একটি হিসেব দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ২৭০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

মোয়াজ্জেম জানান, ওই হিসেবটি শুরুর দিকে যতটুকু জোড়াল ছিল এখনো তা আছে কিনা সেটি দেখার বিষয়। কেননা এরই মধ্যে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নত হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, এমন সহিংস কর্মসূচিতে প্রতিদিন যে পরিমাণ ক্ষতি তা খুব সহজেই পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আর তাই, রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের প্রতি মানুষের মুখ ফিরিয়ে নেবার আগেই জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা ধরে রাখা জরুরি।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-ডিসিসিআইয়ের হিসেব মতে, অবরোধের কারণে ১৬টি খাতে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ ২২৭৭ কোটি টাকা। তবে দু’মাস আগে যে চিত্র ছিল তা এখন অনেকটাই নেই। শঙ্কা ও ঝুঁকি থাকলেও সাধারণ মানুষের জীবন চলছে জীবনের নিয়মে।

জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ডাক এসেছিল অবরোধের। শুরু থেকেই এ কর্মসূচির সঙ্গে সমান তালে চলতে থাকে নাশকতা। দিন পেরিয়ে সপ্তাহ গড়িয়ে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাস শেষে মার্চের ৬ তারিখে দুই মাস পূর্ণ হলো অবরোধের ফাঁসে আটকা গণতন্ত্রের শ্বাসরুদ্ধ এ সময়ের।

এদিকে, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো খেটে খাওয়া মানুষের একটি দেশে দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকা প্রায় অসম্ভব। বিভিন্ন পত্রিকার পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, দু’মাসে পেট্রলের আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছে ১১৬জন মানুষ।

অবরোধের আগুনে পোড়া কয়েকশো  মানুষ কাতরাচ্ছে বার্ন ইউনিটে। যাদের বেশিরভাগই রাজনীতির বাইরের মানুষ। সহিংসতা আর নাশকতার তালিকা থেকে বাদ যায়নি রেল, নৌপথ কিংবা সড়ক পথ। অবরোধের আঘাতে পড়েছে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ অবস্থায় দেশের গণতন্ত্র এখন দিকহীন। অনির্দিষ্ট পথে চলমান গণতন্ত্রকে নির্দিষ্ট পথে নিয়ে আসা এই মুহূর্তেই জরুরি। তা যদি না হয় তবে দেশের মানুষ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আর থাকবে না। সার্বিক বিবেচনায় দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য গণতন্ত্রকে সঠিক পথে এগিয়ে নেয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে বিশ্লেষকরা মত প্রকাশ করেন।   

নিউজ বাংলাদেশ.কম/এটিএস

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়