গুলশান কার্যালয়ে খালেদার ২ মাস
ঢাকা: গুলশান-২ এর ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়ি। এটা খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়। এখানেই গত ৩ জানুয়ারি প্রতিদিনের মতো অফিস করতে এসে পুলিশি বাধায় বের হতে না পেরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে ৬০টি দিন। এই দুই মাস ধরে এখানেই অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এখান থেকেই সরকার পতন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দিচ্ছেন নেতাককর্মীদের নির্দেশনা।
এই ৬০ দিনের মধ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও কার্যালয় তল্লাশির আদেশ আসে আদালত থেকে। পুলিশের পিপার স্প্রে, ছেলের মৃত্যু, বিদ্যুৎ সংযোগ ও মোবাইল, ডিশ নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন, দফায় দফায়
সরকার সমর্থক সংগঠনগুলোর ঘেরাও কর্মসূচিসহ সরকারের মন্ত্রী ও এমপিদের হুমকি-ধমকিও তার মনোবলে চিড় ধরাতে পারেনি। কার্যালয় থেকে বের হলেই আর কার্যালয়ে ফিরতে দেয়া হবে না এই আশঙ্কায় এবার একুশে ফেব্রুয়ারিতে এই প্রথম শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে যাননি খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া ৬০ দিনের মধ্যে প্রথম ১৬ দিন ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া ব্যারিকেডে অবরুদ্ধ। তারপর কার্যালয়ের অবরোধ তুলে নেয়া হলেও অনেকটা রাজনীতির কৌশলগত কারণে বের না হয়ে কার্যালয়ে অবস্থান করছেন তিনি। যদিও এ প্রসঙ্গে বেগম জিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এটা আমার রাজনৈতিক অফিস, এখানে আমার অনেক কাজ আছে।’
এছাড়া ৩ জানুয়ারি রাত থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ জীবন কাটাচ্ছেন দলের কয়েকজন নেতাসহ অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রথম কয়েকদিন ১০-১২ জন মহিলা নেত্রী অবস্থান করলেও থাকার অসুবিধার জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ও মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা ছাড়া
বাকিরা সময় সুযোগ মতো বেরিয়ে যান।
খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ৩ জানুয়ারির মতো এখনো কার্যালয়ের আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। কার্যালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে দফায় দফায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। প্রথমে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হতো কিন্তু ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকেই পরিবারের সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা (সিএসএফ) সদস্য ছাড়া কেউ কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারছেন না।
কার্যালয়ের ফটকের সামনে স্পেশাল ব্রাঞ্চ পুলিশের (এসবি) পক্ষ থেকে রেজিস্টার খাতা খোলা হয়েছে। সেখানে নাম ঠিকানা লিখে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়।
৩০ জানুয়ারি শেষ রাতে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ক্যাবল টিভি সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয় ডেসকো। যদিও পরবর্তীতে নানা মহলের সমালোচনার মুখে ১৯ ঘণ্টা পর তার কার্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। তবে অন্যান্য সংযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে দাবি করছে দলটি।
গুলশান কার্যালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, কার্যালয়ে অবস্থানকালে খালেদা জিয়া নামাজ, বই ও পত্রিকা পড়ে বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছেন। প্রতিদিন এক থেকে দুইবার দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ও মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানার সঙ্গে কিছুটা সময় কথাবার্তা বলে দিন পার করছেন। এমনকি সপ্তাহে একদিন বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী এবং দুই মেয়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন।
এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলাকালে বাসে পেট্রল বোমা হামলা ও হত্যার ঘটনায় বেগম জিয়াকে হুকুমের আসামি করে দায়ের করা হয়েছে অন্তত অর্ধডজন মামলা।
গত ৩ জানুয়ারি থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ কাইয়ূম, বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার, মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ অফিস স্টাফরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দুই মাস ধরে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ জীবনযাপন করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তার অনেক কস্ট হচ্ছে এভাবে থাকতে। অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় তিনি তার প্রাণপ্রিয় ছোট ছেলেকে হারিয়েছেন। তারপরও জনগণের
স্বার্থে তিনি সব সহ্য করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গত ৩ জানুয়ারি থেকে চেয়ারপারসনের সঙ্গে কার্যালয়ে অবস্থান করা মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা বলেন, ‘অবরুদ্ধ থাকলে যেমন থাকা যায় তেমনই আছেন ম্যাডাম। দুই মাস ধরে কার্যালয়ে অবস্থান করলেও ম্যাডামের মনোবল একটুও কমেনি। এই অবৈধ সরকার পতনে তিনি আরো
দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।’
নিউজবাংলাদেশ.কম