তল্লাশির আগে পুলিশের দেহ তল্লাশি করবে বিএনপি
ঢাকা: যে পুলিশ সদস্যরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয় তল্লাশি করতে যাবেন, আগে তাদের দেহ তল্লাশি করবে বিএনপি।
গ্রেফতারি পরোয়ানার পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় তল্লাশির নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। এটাকে রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তার খেলা মনে করছে বিএনপি। এ খেলায় বিনাযুদ্ধে সরকারের কাছে হার মানতেও নারাজ দলটি। তাই দলটির পক্ষ থেকেও শর্ত জুড়ে দিয়ে বলা হয়েছে, আদালতের নির্দেশের প্রতি বিএনপি সম্পূর্ণ আস্থাশীল। তবে অতীত ইতিহাসের কারণে এবার গুলশান
কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশির আগে পুলিশ সদস্যদের দেহ তল্লাশি করে তারপর কার্যালয় তল্লাশির জন্য ভেতরে ঢুকতে দেয়া হবে। এসময় সিনিয়র আইনজীবী এবং সংবাদকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। এজন্য আদালতের দ্বারস্থও হতে পারেন দলের আইনজীবীরা। আলাপকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও দলের সিনিয়র নেতারা এসব কথা জানিয়েছেন।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, “শুধু খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করলেই হবে না। তার কার্যালয়ে তল্লাশি চালাতে হবে। এ কার্যালয়ে তল্লাশি চালালে জঙ্গি, সন্ত্রাস, পেট্রোলবোমা ও অস্ত্র পাওয়া যেতে পারে। তাই খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি চালানোর জন্য সরকারকে অনুরোধ জানাবো।”
একাধিক সূত্র মনে করছে, খালেদা জিয়ার কার্যালয় তল্লাশির আগে আইনজীবী, গণমান্য ব্যক্তি ও গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেহ তল্লাশির বিষয়টি সামনে চলে আসায় পরিস্থিতি ঘোলাটে আকার ধারন করেছে। দেহ তল্লাশি করতে দেয়ার পর সেখানে কিছু না পেলে এটা নিয়ে কথা উঠবে। আর দেহ তল্লাশি ছাড়াই কার্যালয় তল্লাশি করে কিছু পেলে বা না পেলেও তা মিডিয়া প্রচার করবে এবং তা বিএনপির পক্ষেই যাবে। এজন্য তল্লাশিকারীদের দেহ তল্লাশির
বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে বিএনপি।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ২০১০ সালে হাইকোর্টের দোহাই দিয়ে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে সরকার অবৈধভাবে বের করে দেয়। ওই সময় সেখানে তল্লাশি চালিয়ে যেসব পণ্য-সামগ্রী উদ্ধার দেখানো হয়েছিল সেসব ছিলো সাজানো নাটক। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ন্যূনতম
সম্মানটুকু আওয়ামী লীগের সরকারের কাছে পাওয়া যায়নি। সেই সুযোগ এবার দেয়া হবে না। এসব কারণেই এবার গত রোববার দেয়া ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গণমান্য ব্যক্তি ও আইনজীবীদের উপস্থিতিতে তল্লাশিকারীদের সঙ্গে কিছু নেই তা আগে নিশ্চিত হতে হবে।
এ বিষয়ে প্রয়োজনে আইনি সহায়তা নেয়ার কথাও ভাবছেন আইনজীবীরা।
তল্লাশি প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত থেকে বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় তল্লাশির যে আদেশ দেওয়া হয়েছে তা কার্যকর করতে হলে আইনজীবীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশির নামে একটি নাটক হতে পারে। সেখানে পুলিশের সদস্যরা বোমা কিংবা গ্রেনেড রেখে তার দায় বেগম খালেদা
জিয়া ও তার দল বিএনপির ওপর চাপাতে পারে।’
বিশিষ্ট এই ফৌজধারি আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, “ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, কোনো বাসায় তল্লাশি চালানোর আগে আশপাশের নিরপেক্ষ লোক দিয়ে পুলিশ সদস্যদের দেহ তল্লাশি করতে হবে।”
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। একজন সম্মানিত মানুষকে অসম্মান করতেই এটি করা হচ্ছে। এগুলো দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, “এরপরও আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য তারা তল্লাশি করতে চাইলে অবশ্যই গণ্যমান্য ব্যক্তি ও আমাদের আইনজীবীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। তারা কিছু নিয়ে আসে কী না, এগুলো আমরা দেখব।”
উল্লেখ্য, গত রোববার খালেদা জিয়া রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে তল্লাশি চালানোর নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে গুলশান থানার পুলিশের করা এসংক্রান্ত এক আবেদন মঞ্জুর করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতএ নির্দেশ দেন।
গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফিরোজ কবির খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি অভিযান পরিচালনার আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তির আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশে নাশকতার পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও ওই কার্যালয়ে আত্মগোপন করে থাকতে পারেন। এছাড়া নাশকতার কাজে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য মজুদ করে রাখতে নিরাপদ স্থান হিসেবে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় ব্যবহৃত হতে পারে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে এ বিষয়গুলো জানা গেছে। তাই সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ওই কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন।
পরে আদালত আবেদনের ওপর শুনানি গ্রহণ করে তা মঞ্জুর করেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম