৪ মার্চ রাজনৈতিক টার্নিং পয়েন্ট!
নিউজ ডেস্ক : দেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থায় ৪ মার্চ দেশীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে চলেছে। দেশবাসী চেয়ে আছে ওইদিন সরকারের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তা দেখার জন্য। জানা গেছে, ওইদিন বিএনপি চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়া আদালতে যাচ্ছেন না।
জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরপরই পর্যবেক্ষক মহলে নানা কথা শোনা যায়। এরই পাশাপাশি এখন শোনা যাচ্ছে, ৪ মার্চ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কথাও।
কেউ কেউ মনে করছেন, ওইদিন খালেদা গ্রেফতার হলে হয়তো আন্দোলনের গতি আরো ত্বরান্বিত হবে, নয়তো স্তব্ধ হয়ে যাবে। আর তাই ওই দিনটির দিকেই এখন চেয়ে আছেন অনেকে। দেশের চলমান সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে ওইদিন যেকোনো একটি সিদ্ধান্ত হয়তো বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকেই খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের গুজব ওঠে। এ অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন মোটেও ভীত নন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা।
খালেদার মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ৪ মার্চ হাজিরার দিনে বেগম খালেদা জিয়া আদালতে যাচ্ছেন না। এদিকে হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তার কারণে তিনি তার কার্যালয় থেকে বের হন না। এসব চিন্তা থেকেই তিনি আলাদাতে যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। বুধবার ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার খালেদার গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার আবেদনের শুনানিকালে জানান, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তিনি ৬৩ কার্যদিবসের মধ্যে মাত্র সাত দিবস আদালতে হাজির ছিলেন।
জানা গেছে, এদিন এ মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচারক খালেদাকেসহ মোট তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। একই মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও চার মার্চ আদালতে হাজিরা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রোববার বিকেলে ঢাকার সিএমএম আদালত খালেদার গুলশানস্থ কার্যালয় তল্লাশির নির্দেশ দিয়েছেন। এতেও দলটির আপত্তি নেই বলে জানা গেছে। দলীয় সূত্র জানায়, কার্যালয়ে অবস্থানকারী নেতানেত্রীরাও গ্রেফতার হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন।
কার্যালয় সূত্র মাধ্যমে জানা গেছে, তল্লাশি অভিযানে কার্যালয়ে অবস্থানরত নেতানেত্রীরা মোটেও উদ্বিগ্ন নন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে তারা প্রস্তুত আছেন।
খালেদার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সোহেল গণমাধ্যমকে জানান, কার্যালয় তল্লাশি করতে দেয়া হবে কীনা তা বিবেচনা করা হবে পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর। খালেদার মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার জানান, তল্লাশি বিষয়ে বেগম জিয়া নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি এ ব্যাপারেও কিছু বলতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তির দিন গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালনের ঠিক দুদিন আগে ৩ জানুয়ারি শনিবার রাতে রাজধানীর গুলশানে নিজ কার্যালয়ে পুলিশ বেষ্টনীতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
ওইদিন থেকে আজ পর্যন্ত সেখানেই তিনি অবস্থান করছেন। এর আগে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুলশানস্থ কার্যালয়ে বেশ কিছুদিন তিনি অবরুদ্ধ ছিলেন। বর্তমানে তার সঙ্গে আছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।
খালেদার সঙ্গে আরো আছেন, কার্যালয়ের কর্মকর্তা এম এ কাইয়ুম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার, শামসুল আল আমীন ডিউ, অফিস সহকারী ও চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা স্কোয়াডের সদস্যরা।
গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কের ৬নম্বর বাড়িটির দোতলার দুটি কক্ষে এখন সীমাবদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসনের চলাচল। এখানেই কাটছে দিনরাত। চলছে খাওয়া-দাওয়া। বিশ্রামও নিচ্ছেন এ দুকক্ষেই।
কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় চোখ রাখছেন খালেদা। পাশাপাশি দলের নেত্রীদের সঙ্গে গল্প-গুজবও করছেন। দুপুরের পর থেকে অবরোধের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। কথা বলছেন নানা স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। আর এভাবেই চলছে খালেদার ‘অবরুদ্ধ’ জীবনযাপন।
কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন দুপুরে ও রাতে খাবার খান খুবই অল্প। মাঝে-মধ্যে চা পান করেন। তার বোন, ভাইয়ের স্ত্রী, বড় ছেলে তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়-স্বজনেরা প্রায়ই কার্যালয়ে খাবার নিয়ে আসেন। এসময় তাদের সঙ্গেও গল্প-গুজব করে সময় কাটান। ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজ পড়েন তিনি। দোয়া-দরুদসহ ধর্মীয় গ্রন্থ পড়ে সময় কেটে যাচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসনের।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এএসটি/তাহের
নিউজবাংলাদেশ.কম