News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক  || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:২১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
আপডেট: ১৫:২৩, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

নির্দলীয় রাষ্ট্রপতি চান ৬৮ শতাংশ মানুষ: বিবিএস

নির্দলীয় রাষ্ট্রপতি চান ৬৮ শতাংশ মানুষ: বিবিএস

ফাইল ছবি

দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ নির্দলীয় ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখতে চান। বিপরীতে একজন দলীয় ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে চান প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ চান দেশের। 

প্রায় ৮৩ শতাংশ মানুষ সরাসরি জনগণের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন। আর সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন ১৩ শতাংশ।

নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপে এসব মতামত উঠে এসেছে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন তাদের সংস্কার প্রস্তাব তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে ওই জরিপ চালায়। গত ২০-২২ ডিসেম্বর জরিপটি পরিচালনা করে বিবিএস। ইতিমধ্যে জরিপের খসড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। 

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করার বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছেন ৬৫ শতাংশ মানুষ।

বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপে নমুনায়নের মাধ্যমে ৪৬ হাজার ৮০টি সাধারণ খানা (পরিবার বা যারা এক চুলায় রান্না করেন) থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি খানা থেকে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিকদের মধ্যে ‘কিশ গ্রিড সিলেকশন’ পদ্ধতিতে একজন নির্বাচিত উত্তরদাতার কাছ থেকে নির্ধারিত প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। অর্থাৎ ৪৬ হাজার ৮০ জন মানুষ এই জরিপে অংশ নিয়েছেন।

১৫ জানুয়ারি নিজেদের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। সুপারিশের সার সংক্ষেপও প্রকাশ করা হয়েছে। সংস্কার কমিশন নির্দলীয় ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করার সুপারিশ করেছে। তবে জনগণের সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সুপারিশ করেনি। এ ক্ষেত্রে তারা সংসদের প্রস্তাবিত দুই কক্ষের সদস্য এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার সুপারিশ করেছে।

জরিপে রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রত্যাশিত ব্যক্তির ধরণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এখানে চারটি উত্তর থেকে যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল। 

সেগুলো হলো দলীয়, নির্দলীয়, জানি না ও উত্তর দিতে ইচ্ছুক নই। উত্তরদাতাদের ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ দলীয় ব্যক্তির পক্ষে, ৬৮ দশমিক ২৮ শতাংশ নির্দলীয় ব্যক্তির পক্ষে মতামত দিয়েছেন। ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ বলেছেন, তারা এ বিষয়ে জানেন না। আর ১ শতাংশের কিছু কম ব্যক্তি উত্তর দিতে ইচ্ছুক নন বলে জানান।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে জনগণের মতামত জানার লক্ষ্যে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। কারণ, গণতন্ত্রে জনমত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনমতের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও বিবেচনা শক্তি দিয়ে তারা সুপারিশমালা তৈরি করেছেন। 

তিনি বলেন, তারা সুপারিশ করেছেন, এমন একজন দলনিরপেক্ষ, সম্মানিত ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করতে হবে, যার সুনাম রয়েছে, যাকে নিয়ে সমাজে ইতিবাচক মনোভাব আছে। তিনি জানান, জরিপে জনগণের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার পক্ষে বেশি মত এলেও এই সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, এভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হলে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা হয়ে যায়। সংস্কার কমিশন বৃহত্তর নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার সুপারিশ করেছে।

জরিপে নির্বাচনে মনোনয়ন–বাণিজ্য রোধে প্রধান দায়িত্ব কার বলে মনে করেন, তা জানতে চাওয়া হয়। এখানেও চারটি উত্তরের একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল। 

এর মধ্যে ৪৭ দশমিক ৮২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, এই দায়িত্ব রাজনৈতিক দল বা তাদের প্রার্থীর। 

৪৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ বলেছেন, এই দায়িত্ব জনগণের। এ প্রশ্নের জবাবে ‘জানি না’ বলেছেন ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ উত্তরদাতা। আর শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ বলেছেন, তারা উত্তর দিতে ইচ্ছুক নন।

নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে মত দেন প্রায় ৪৭ শতাংশ উত্তরদাতা। আর ৪৪ শতাংশ জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার পক্ষে মত দেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনে প্রদত্ত ভোট ৫০ শতাংশের কম হলে ওই আসনে পুনর্নির্বাচনের পক্ষে মত দেন ৭৮ শতাংশ মানুষ। বিপক্ষে মত দেন ১৭ শতাংশ। সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনর্নির্বাচন আয়োজনের সুপারিশ করেছে।

নির্বাচনে ‘না’ ভোট জয়ী হলে পরাজিত প্রার্থীদের বাদ দিয়ে নতুন নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দেন ৭৮ শতাংশ মানুষ। এর বিপক্ষে ছিলেন প্রায় ১৭ শতাংশ। সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে এটি রেখেছে।

জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ১০০টিতে উন্নীত করে নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকা থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচনের পক্ষে মত প্রায় ৭৪ শতাংশ। আর প্রায় ২০ শতাংশ ছিলেন বিপক্ষে।

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রসংগঠন থাকার বিষয়টি সমর্থন করেন না ৬৩ শতাংশ মানুষ। আর প্রায় ৩১ শতাংশ এটিকে সমর্থন করেন। প্রায় ৫ শতাংশ বলেছেন, এ বিষয়ে জানেন না।

বিদেশে রাজনৈতিক দলের শাখা রাখার বিষয়টিকে সমর্থন করেন না ৫০ শতাংশ উত্তরদাতা। আর ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা বিদেশে দলের শাখা থাকার বিষয়টিকে সমর্থন করেন। ৮৭ শতাংশ মানুষ প্রবাসীদের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ইলেকট্রনিক ভোট আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন।

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ৭০ শতাংশ। আর দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন করার কথা বলেছেন প্রায় ২৮ শতাংশ। অন্যদের এ বিষয়ে জবাব ছিল ‘না’ বা তারা ‘জানেন না’ বলে উত্তর দেন।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের সব স্তরের নির্বাচন করার পক্ষে মত দেন ৬৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং বিপক্ষে মত দেন প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ। এই সুপারিশগুলোও প্রতিবেদনে রেখেছে কমিশন। 

সূত্র: প্রথম আলো

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়