‘হঠকারী সিদ্ধান্তে যেন গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বিনষ্ট না হয়’
ছবি: সংগৃহীত
সংস্কার ও নির্বাচন দুটোই অনিবার্য জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, রাজনীতির প্রয়োজনে দেশে আরও রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটবে। এটি গণতান্ত্রিক রীতি। বিচলতি হওয়ার কিছুই নেই। বিএনপি সব গণতান্ত্রিক উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই বহু দল ও মতচর্চার পক্ষে।
বুধবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, জনগণ কোন দলকে গ্রহণ করবে, নাকি বর্জন করবে, নির্বাচনের মাধ্যমে সেই রায় দেবে জনগণের আদালত। যারা জনগণের আদালতের মুখোমুখি হতে ভয় পায় কিংবা যাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে, তারাই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলের গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কার এবং নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন। তবে রাষ্ট্রে জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করা না গেলে গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবা পুঁথিগত সংস্কার শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই টেকসই হয় না।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্বচ্ছ। জনগণ কোন রাজনৈতিক দলকে গ্রহণ করবে কিংবা বর্জন করবে, নির্বাচনের মাধ্যমে সেই রায় দেবে জনগণের আদালত।
সবাইকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহ্বান, আপনারা ধৈর্য্য হারাবেন না, নির্বাচনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে থাকুন। নির্বাচন কমিশন তাদের অর্পিত দায়িত্ব যথারীতি পালন করবে সেই বিশ্বাস রাখুন।
দলের নেতাকর্মৗদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, আপনারা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না, সতর্ক থাকবেন। নিজেরা এমন কোনো কাজে সম্পৃক্ত হবেন না, যাতে কেউ অপপ্রচারের সুযোগ পায়। নিজেদের জনগণের আস্থায় রাখুন। জনগণের আস্থা রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।
তিনি বলেন, আমাদের সকলকে খেয়াল রাখতে হবে, কোনো হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে যাতে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বিনষ্ট হবার পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।
তিনি আরও বলেন, কোনো কোনো মহল থেকে সংস্কার নাকি নির্বাচন এই ধরনের জিজ্ঞাসাকে বিএনপি তথা দেশপ্রেমিক সব মানুষ, সব রাজনৈতিক দল শ্রেফ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কূটতর্ক বলেই বিবেচনা করে। বরং আমাদের দল বিএনপি মনে করে রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলের গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কার এবং নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন। বিদ্যমান ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করতে সংস্কার একটি অনিবার্য ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
একইভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টেকসই এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নির্বাচনই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর পন্থা। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোটের অধিকার প্রয়োগের যে সুযোগটি পায় যেটি রাষ্ট্র-জনগণের রাজনীতির ক্ষমতা নিশ্চিত করে।
বিএনপির শীর্ষ নেতা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সরকার বেশ কিছ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সংস্কার কার্যক্রম অবশ্যই প্রয়োজন। এই কারণে সরকার হয়ত তাদের দৃষ্টিতে অনেক বড় বড় সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে এসব কর্মসূচির আড়ালে জনগণের নিত্য দুদর্শা উপেক্ষিত থাকলে হয়ত ক্ষোভ থেকে সরকারের সংস্কার দাবি নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হবে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে জনগণের মনে প্রশ্ন উঠেছে পলাতক স্বৈরাচারের আমলে সৃষ্ট বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার ভেতর আনতে সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে। ফ্যাসিস্ট আমলে করা লক্ষ লক্ষ মামলায় এখনো কেনো প্রতিদিন মানুষকে আদালতের বারান্দায় ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিএনপি বারবার যে কথাটির ওপরে জোর দিতে চায় সেটি হলো অন্তর্বর্তী সরকার তাদের সংস্কার কিংবা গৃহীত পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণে ব্যর্থতার পরিচয় দিতে চাইলে ষড়যন্ত্রকারীর ২০২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট বিনষ্ট করার সুযোগ নেবে। এরই মধ্যে তারা একাধিবার অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা চালিয়েছে। হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা দেশে গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি দেখতে চায় না। এই কারণে জনগণের পক্ষের রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এই সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে।
তারেক রহমান বলেন, দেশে প্রয়োজনে আরো নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটবে এটাই গণতান্ত্রিক রীতি, এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রয়োজনে বিএনপি সব গণতান্ত্রিক উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। বিএনপি তার জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত সব পরিস্থিতিতে সব সময়ে বহু দল ও মতের চর্চার পক্ষে।
ছাত্র দলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সাবেক ছাত্রদল নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, আমান উল্লাহ আমান, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আজিজুল বারী হেলাল, রকিবুল ইসলাম বকুল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আকরামুল হাসান, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, রাশেদ ইকবাল খান, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি