ফেব্রুয়ারিতেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান!
ফাইল ছবি
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই আলোচনা চলছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন। তার দেশে ফেরাছে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা।
বিশেষ করে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বেকসুর খালাস পাওয়ার পর বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণের মধ্যে এ নিয়ে জানার আগ্রহ বেড়েছে।
তিনি দ্রুত দেশে ফিরবেন- এমন কথা বিএনপির অনেক নেতাই অনেক আলোচনায় বলেছেন। যদিও নির্দিষ্ট করে কেউই সঠিক তারিখ বলতে পারেননি। লন্ডনে অবস্থান করা তারেক রহমানও এখন পর্যন্ত নিজে কোনো কথা বলেননি বিষয়টি নিয়ে।
এদিকে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘লিডার আসছে’, এ ধরনের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। আসলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঠিক কবে ফিরবেন, সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত কোনো দিনক্ষণ পাওয়া যায়নি।
এদিকে দেশে এক এক করে বিভিন্ন মামলায় খালাস পাচ্ছেন তারেক রহমান।
তার আইনজীবীরা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়া মেনে সব মামলার নিষ্পত্তি হবে। আর নিষ্পত্তি না হলেও তারেক রহমান চাইলে যে কোনো সময় দেশে আসতে পারেন। তবে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের অনুমান, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তারেক রহমান বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখবেন।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে পাঁচটি মামলায় সাজা হয়, তার মধ্যে একটিতে তিনি খালাস পেয়েছেন। বাকি চারটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। দ্রুততম সময়ে এসব মামলায় খালাস পেলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ তিনি দেশে ফিরতে পারেন বলে বিএনপিতে আলোচনা রয়েছে।
জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার তারিখ এখনো সুনির্দিষ্ট হয়নি। তার দেশে ফেরার ইস্যুটির একদিকে যেমন আইনি দিক রয়েছে, অন্যদিকে এটি রাজনৈতিক বিষয় বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কখন বিদেশে যেতে পারেন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কখন দেশে ফিরতে পারেন-এ ব্যাপারে লন্ডন সফররত দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশে ফিরলে কিছুটা স্পষ্ট হতে পারে বলেও অনেকে ধারণা করছেন।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দেশে ফেরার কথা রয়েছে বিএনপির মহাসচিবের। তবে তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথ প্রশস্ত হচ্ছে জানিয়ে তার আইনজীবীরা বলছেন, সাজা হওয়া চারটি মামলাসহ ৩৯টির মতো মামলা আইনি প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
এ বিষয়ে গত শনিবার লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দল যখন মনে করবে তখন তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। এছাড়া উনার (তারেক রহমান) আরো কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে, সেগুলো শেষ করে দেশে যাবেন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালিক বলেন, ম্যাডাম খালেদা জিয়ার লন্ডনে আসার কথা রয়েছে। ম্যাডামকে তো প্রথম রিসিভ করতে হবে। তার চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতিও নিশ্চয়ই একটা আছে। ম্যাডামকে রিসিভ না করে আমার মনে হয় না কোনো কিছু হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করছি, উনি (তারেক রহমান) হয়তো ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) জন্য অপেক্ষা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি, নাশকতা, গ্রেনেড হামলা ও দুর্নীতির অভিযোগে ঢাকাসহ দেশব্যাপী ৮০-৮২টির মতো মামলা করা হয়। ওয়ান-ইলেভেনের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এসব মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১৭টি মামলা হয়। তারেক রহমানের মামলাগুলোর মধ্যে ৬২টির মতো মানহানির মামলা বলে জানান তার আইনজীবীরা।
সেনা সমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। পরের বছর ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্য যান। তখন থেকেই তিনি লন্ডনে রয়েছেন। লন্ডনে থাকাকালে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে তার মা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন ‘সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান’ তারেক রহমান। সেখানে থেকেই তিনি দল পরিচালনা করছেন।
বিএনপির নেতারা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের ক্ষেত্রে তার নেতৃত্ব ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারেক রহমানের ইতিবাচক ও পরিবর্তনের রাজনীতি জাতির সামনে নতুনভাবে আশার সঞ্চার করছে। মানুষের মন জয় করতে নিচ্ছেন একের পর এক যুগান্তকারী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। তার (তারেক রহমান) দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও রাষ্ট্র নিয়ে ভাবনা দেশের জনগণও গ্রহণ করেছে। তিনিই আগামীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক।
বিএনপির কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক ও তারেক রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ৮০ থেকে ৮২টি মামলা করা হয়েছিল। ৫টি মামলায় তার দণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে খালাস পেয়েছেন। বাকি চারটি আদালতে বিচারাধীন আছে, এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
তিনি জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত তারেক রহমানের মোট ৩৯টি মামলা বাতিল বা খারিজ কিংবা খালাস পেয়েছেন। এর মধ্যে একটি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। আর বাকি ৩৮টির মধ্যে কোনো কোনো মামলা বাতিল হয়েছে, আবার কোনোটি খারিজ হয়েছে। ৩৫টির মতো মামলা আছে পেন্ডিং, এগুলো সব মানহানি মামলা।
তিনি আরও বলেন, তারেক রহমান দেশের প্রচলিত আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সংবিধানের প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল। তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত প্রত্যেকটি মামলা ভিত্তিহীন। তারপরও তিনি আদালতের মাধ্যমে মামলাগুলোর নিষ্পত্তি চান।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি