News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

স্বৈরাচার থেকে সাংবাদিক সমাজকে সতর্ক থাকতে হবে: তারেক রহমান

স্বৈরাচার থেকে সাংবাদিক সমাজকে সতর্ক থাকতে হবে: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ফটো

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিতাড়িত স্বৈরাচারের পলায়নের পর গণতন্ত্রকামী জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের এক বিশাল দায়িত্ব নিয়ে আজ অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে গণতন্ত্রের পক্ষের সব শক্তি ও সাংবাদিক সমাজকে সতর্ক থাকা দরকার। বিতাড়িত স্বৈরাচার আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে চলামান যাত্রা তা বাধাগ্রস্ত করতে কিন্তু এরই মধ্যে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, বিতাড়িত স্বৈরাচারের পলায়নের পর গণতন্ত্রকামী জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের এক বিশাল দায়িত্ব নিয়ে আজ অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে গণতন্ত্রের পক্ষের সব শক্তি ও সাংবাদিক সমাজকে সতর্ক থাকা দরকার। বিতাড়িত স্বৈরাচার আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে চলামান যাত্রা তা বাধাগ্রস্ত করতে কিন্তু এরই মধ্যে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আজকের সভায় অনেক বক্তা তাদের বক্তব্যেও তুলে ধরেছেন।

সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে- এ ধরনের প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো বিরোধ নেই। সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে- যারা এ ধরনের প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্ন।

‘বিএনপি মনে করে সংস্কার কার্যক্রম কোনো শেষ হওয়ার বিষয় নয়। একজন সংস্কার কার্যক্রম শুরু করলে আরেকজন প্রয়োজনীয় সংস্কার এগিয়ে নিয়ে যায়। কারণ সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে সরকারে কিংবা সরকারের বাইরে আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখা দরকার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত উত্তরণ ছাড়া পুঁথিগত সংস্কার অনেকটা অকার্যকর।’

তিনি বলেন, সংস্কার কার্যক্রমকে কার্যকর করতে চাইলে সবার আগে জনগণের নিত্যদিনের দুদর্শা লাঘবের ব্যবস্থা করা দরকার। জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় সরবারহ নিশ্চিত করা না গেলে সংস্কার কার্যক্রমের কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না।

তারেক রহমান বলেন, বিতাড়িত স্বৈরাচার ও তাদের দোসরচক্র নানা কৌশলে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অপচেষ্টা শুরু করেছে। অপশক্তি দেশের ভেতরে এবং বাইরে থেকে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে। তবে আমরা সবাই যদি সতর্ক থাকি, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি

বিএনপিসহ বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপরে গুম-হত্যা-নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক মানবিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শহীদদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করা আমাদের দায়িত্ব। একই সঙ্গেহ পলাতক স্বৈরাচার ও তার দোসরা যেন রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে না পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করাও কিন্তু আমাদের কর্তব্য।

‘এজন্য যথাযথ আইনগত ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। পলাতক মাফিয়াদের পুনর্বাসন ঠেকাতে তাদের একদিকে যেমন আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন, অপরদিকে তাদের অবশ্যই জনগণের রাজনৈতিক বিচারের প্রত্যাখাত হওয়ার পরিস্থিতিতে ফেলতে হবে। আমরা যদি এই দুইয়ের সমন্বয় ঘটাতে পারি, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি গণবিরোধী বিতাড়িত অপশক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হবে না।’

তারেক রহমান বলেন, ‘খুনি, লুটেরা, মাফিয়া এবং স্বৈরাচারী রাজনৈতিক অপশক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে হলে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। ভোটের অধিকারের সুযোগ পেলে জনগণ তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে গণহত্যাকারী খুনি, লুটেরা, পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় করে দিতে সক্ষম হবে।

তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে সংস্কার কার্যক্রমে পাশাপাশি একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান অবশ্যই প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে আগের স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশ কিংবা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে দেড় দশকের বাংলাদেশে বর্তমান প্রজন্ম দেখিয়ে দিয়েছে যে, আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতা একসঙ্গে যায় না। আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একে অপরের শত্রু। অপরদিকে বিএনপির কাছে গণতন্ত্র বা ব্যক্তি স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিরাপদ।

তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতি বিদ্যমান অবস্থা-ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২২ সালে বিএনপি প্রথম ২৭ দফা সংস্কার উপস্থাপন করেছিল। পরে বাংলাদেশের পক্ষে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ২০২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে বিএনপি। বিএনপির উপস্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবে গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি, অভিজ্ঞ গণমাধ্যম ব্যক্তিদের নিয়ে একটি মিডিয়া কমিশনের কথা বলা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করেছে।

‘আমরা এমন একটি রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছি যেখানে সাগর-রুনির বিচারের ব্যাপারে রাষ্ট্র উদাসীন থাকবে না, নিশ্চিত থাকবে মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা। এই লক্ষ্য অর্জনে আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।’

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে দিদারুল আলম ও সাঈদ খানের যৌথ সম্পাদনায় আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর দক্ষিণের জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম আবদুল্লাহ, বর্তমান মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক নেতা এম এ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, বারেক হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, সহ-সভাপতি রাশেদুল হক বক্তব্য রাখেন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়