খালেদা জিয়ার ১০২ ডিগ্রি জ্বর
করোনা আক্রান্ত খালেদা জিয়ার শরীরে ১০২ ডিগ্রি জ্বর। তবে আপাতত তাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে না।
শনিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এফ এম সিদ্দিকী তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, জ্বর থাকলে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তার শরীরের পালস, ব্লাড প্রেসার সবকিছুই স্বাভাবিক আছে।
গত ১০ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। ১৫ এপ্রিল চিকিৎসকরা তার সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দেন। সেই রাতেই রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তার সিটি স্ক্যান হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট বেশ ভালো। ফুসফুসে সংক্রমণের মাত্রা খুব কম। আরও কিছুদিন তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
শনিবার খালেদা জিয়ার বাসভবন গুলশানের ফিরোজায় মেডিকেল টিম রাত সোয়া ৯টায় প্রবেশ করেন। সেখানে পৌনে ১১টা পর্যন্ত তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। এসময়ে লন্ডন থেকে ডা. জোবাইদা রহমান ও নিউইয়র্ক থেকে আরেকজন চিকিৎসক অনলাইনে অংশগ্রহণ করেন।
ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, “খালেদা জিয়ার যে সিটি স্ক্যান রিপোর্ট সেটা খুবই সামান্য যেটা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় মাইল্ড বা মাইনর বলা হয়। এর বাইরে তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন সব সময় ভালো। যেটা ৯৮ ও ৯৭ এর মধ্যে ওঠানামা করছে। যেটা শরীরের জন্য খুব ভালো, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে এখন পর্যন্ত কোনো অক্সিজেন দেয়া লাগেনি। খালেদা জিয়া মানসিক দিক দিয়ে খুবই স্ট্রং আছেন।”
এফএম সিদ্দিকী বলেন, “খালেদা জিয়ার জন্য যে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করছি তার ভালো ফলাফল পাচ্ছি বলে মনে হয়। আজ (শনিবার) নয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। অর্থাৎ করোনার দ্বিতীয় সপ্তাহের কঠিন সময় পার করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো জটিল সমস্যা দেখা যায়নি। এই পুরো সপ্তাহ না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের মধ্যে কোনো শিথিলতা দেখা দেবে না। এর মধ্যে কোনো জটিলতা কিংবা বিপদসঙ্কেত পেলে আমরা তাৎক্ষণিক সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।”
খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত সেরকম অবস্থা দেখা যাচ্ছে না। যদি তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটে তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার মতো প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।”
খালেদা জিয়ার কোনো উন্নতি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কয়েকদিনের তাপমাত্রা পর্যালোচনা করে উন্নতির লক্ষণ বলা যেতে পারে। তবে এই কয়দিনে শুধু একটি উপসর্গ দিয়ে করোনার উন্নতি বলা যাবে না। সবগুলো দিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। কোনো ঢিলেঢালা ভাব দেখানো যাবে না।”
সিটি স্ক্যানের বিষয়ে এফএম সিদ্দিকী বলেন, “করোনা রোগীর ক্ষেত্রে সাধারণত খুব অল্প সময়ে ফুসফুস আক্রান্ত হয়। যেটা অনেক সময় ৩০ ভাগ, কোনো সময়ে ৫০ ভাগও হয়ে থাকে। যা ওই রোগী নিজেও টের পান না। কিন্তু খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে সেরকম কিছু হয়নি। তার যেটা রয়েছে তা খুবই সামান্য।”
খালেদা জিয়ার ক্ষুধামন্দার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া কারাগারে থাকার সময়ে তার মারাত্মক ক্ষুধামন্দা, শরীরে প্রচণ্ড ব্যাথা এবং অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ছিল। তার ব্লাডসুগার সবসময় গড়ে ১১ এর উপরে ছিল। কিন্তু তিনি বাসায় ফিরে আসার পর এবং আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর সে অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। এখন তার ডায়াবেটিসের মাত্রা আটের ঘরে নিয়ে আসতে পেরেছি। ব্যাথাও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হওয়ায় বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরও তিনি ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করতে পারছেন। কিন্তু এটাকেই আমরা শেষ বলতে চাই না।”
এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. শাকুর খান।
গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সিটি স্ক্যান করা হয়। গুলশানের বাসা থেকে তাকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে বিশেষ নিরাপত্তায় এভার কেয়ারে নিয়ে পরীক্ষা করিয়ে আবার গুলশানের বাসায় ফিরিয়ে আনা হয়।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা পজেটিভ শনাক্ত হওয়ার পর প্রখ্যাত ‘বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন’ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকীরে নেতৃত্বে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের টিম গুলশানের বাসায় তার চিকিৎসা শুরু হয়। ‘ফিরোজা’র বাসায় বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়াও আরো ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসাও সেখানে চলছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ