টেলিভিশন ছাড়া কোথাও সরকার নেই: ফখরুল
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরাকরে ভূমিকার সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “সরকার কোথায়? সরকার এখন রাস্তাতেও নেই। অর্থাৎ গোড়ায়-আগায়, মনে-গোপনে, কার্যালয়ে নেই। সরকার এক জায়গায় আছে, শুধু টেলিভিশনে। আর কিন্তু তারা কোথাও নেই “
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন।
সংকট মোকাবেলায় বিরোধী দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ এবং স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদদের নিয়ে টাস্ক ফোর্স গঠন করার দাবিতে কর্ণপাত না করায় সরকারের সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমরা বলেছিলাম সর্বদলীয় একটা উদ্যোগ গ্রহণ করতে, সেই উদ্যোগও গ্রহণ করেনি তারা। এটা বাদ দিয়ে ব্যুরোক্রেট-বিশেষজ্ঞ ছাড়া স্বনামধন্য যারা আমাদের দেশে আছেন তাদের নিয়েও টাস্ক ফোর্স গঠন করার দাবি আমরা করেছিলাম। সেটাও করা হয়নি।
“স্বাস্থ্য খাতে একটা টেকনিক্যাল কমিটি করেছে। সেখানে দেখবেন অনেক বরেণ্য চিকিৎসক বাদ পড়েছে এবং এই ধরনের ভাইরাল ডিজিজ নিয়ে যারা লেখাপড়া কাজ করেছেন তাদেরকে সম্পৃক্তই করা হয়নি। সেখানে দলীয়করণ করা হয়েছে।”
ঈদ সামনে রেখে শর্ত সাপেক্ষে ১০ মে থেকে শপিং মল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “মল-শপিং মল খুলে দিচ্ছেন খুব ভালো কথা। ঈদে যারা কাজ করে, কাপড় তৈরি করে, কেনাবেচা করে, ছোট-বড় ব্যবসায়ী তাদের জন্য দরকার প্রয়োজন আছে। সেটা কী আমার মানুষের জীবনের বিনিময়ে? একটা মাস কি সেটা নিয়ন্ত্রণ করা যেত না? আসলে সরকার ব্যর্থ হয়েছে, সমাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে ব্যর্থতার কারণে দেশকে এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “মানুষের জীবন-জীবিকা দুইটাই যেমন রাখতে হবে ঠিক, সংক্রমণ যেহেতু এখনও ঊর্ধ্বমুখী, সেহেতু আরো কিছুদিন অবরুদ্ধ সমাজিক দূরত্ব নীতিমালা কঠোরভাবে পালন করা উচিত ছিল।কারখানাগুলো এমনভাবে খোলা যেতে পারত যে, ধীরে ধীরে একটা কারখানায় সকল ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করে, শ্রমিকদের যে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সেটা নিশ্চিত করে । সেটা তো করা হয়নি। বলা যেতে পারে কোনো রকমের কোনো দূরদর্শিতার প্রমাণ সরকারের দেখতে পাইনি।প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের অদূরদর্শিতা, সমন্বয়হীনতা এবং চরম উদাসীনতা এখানে প্রমাণ হচ্ছে।”
ফখরুল বলেন, “সরকারকে বলব, এই ধরনের দাম্ভিকতা না রেখে, এই ধরনের অহংকার থেকে বেরিয়ে এসে জনগণের পাশে এসে দাঁড়াতে। সুরক্ষিত অট্টালিকায় থেকে মানুষের দুর্ভোগ, মানুষের কষ্ট-বেদনা সেটা বোঝা যায় না। দায়-দায়িত্বটা সরকারের, এটা বুঝতে হবে।”
গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য সরকার প্যাকেজ ঘোষণা করলেও অধিকাংশ শ্রমিক এখনো বেতন-ভাতা পাননি বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
সরকারি ত্রাণ বিতরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা দেখছি যে, কিছু কিছু জায়গায় ত্রাণ চাহিদার তুললায় এতোই অপ্রতুল যে স্থানীয় প্রতিনিধি যারা আছেন, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিউয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তারা বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। আমি আমার এলাকা (ঠাকুরগাঁও) যোগাযোগ করে দেখেছি, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা বলছেন, এটা না দিলে আমরা ভালো থাকতাম। কারণ প্রয়োজন হচ্ছে ৪৫০ হাজার লোকের, সেই জায়গায় পাচ্ছি আমরা ৪০০। কিভাবে আপনি সমাধান করবেন? ঘটনা কিন্তু তাই।
কৃষিখাত প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, “সরকার বলছে, ২২ লক্ষ মেট্রিক টন চাল কিনবে। এখন পর্যন্ত বোরো ধান কেনার কাজ শুরু হয়নি। যার ফলে কৃষকেরা ক্ষেতের মধ্যে অত্যন্ত কম মূল্যে ৬০০ টাকায় ধান বিক্রি করছে। ময়মনসিংহ হাওর অঞ্চলে এই দামে ধান কৃষকরা বিক্রি করছে বলে আমার কাছে খবর এসেছে।”
দলের ত্রাণ কার্য্ক্রম তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “বিএনপি রাজধানীসহ সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে জরুরি সহযোগিতা নিয়ে। যুক্তরাজ্যেও বিএনপির পক্ষ থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সেখানে খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে।”
সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এটা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে।আপনি খবরের কাগজে দেখেছেন কতগুলো ছবি যে, টেস্ট করতে গিয়ে তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে গিয়ে ওখানে পড়ে মারা গেছেন, এটা মর্মান্তিক। আমাদের মতো সভ্য দেশে এরকম স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দেখতে হবে আমরা ভাবতে পারি না। বাচ্চাদের জ্বর হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে না এবং প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে করোনা না হলেও চিকিৎসা হাসপাতালে আপনি পাবেন না। আর করোনা হয়েছে কী হয় নাই তার টেস্টও তো সহজে পাওয়া যায় না।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি