র্যাব-পুলিশ জানে না, জিডি নেয়নি থানা
ঢাকা: বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে বলে তার দাবি করেছে তার পরিবার। বিএনপির পক্ষ থেকেও একই দাবি করে বিবৃতি দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে আইনশঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। এমনকি পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করতে চাইলেও তা গ্রহণ করেনি পুলিশ।
পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। অপরদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে সালাহ উদ্দিনের নিখোঁজ হওয়া প্রসঙ্গে জিডি নেয়নি গুলশান ও উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। বুধবার রাত ১১টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বুধবার সন্ধ্যায় সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ এবং বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, “সালাহ উদ্দিন উত্তরার কোনো এক বাসায় ছিলেন। গতরাত ১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর লোক তাকে তুলে নিয়ে যায়। ওই বাসায় একজন কাজের লোক ছিলেন তাকেও বেঁধে নিয়ে যায়। আমাদেরকে ওই বাসার কেয়ারটেকার ঘটনাটি জানিয়েছেন।”
এর আগে নাগরিক ঐক্য পরিষদের মাহমুদুর রহমানকে আটকের বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করেছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বুধবার রাত ১১টার দিকে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, “আমরা তাকে আটক করিনি। তার আটকের বিষয়ে কিছু জানি না।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “র্যাবের কোনো ইউনিট বা ব্যাটালিয়নও তাকে আটক করেনি। সালাহ উদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকেও র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।”
রাত নয়টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “সালাহ উদ্দিন আহমেদকে পুলিশ গ্রেফতার করেনি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য কোনো ইউনিট তাকে আটক করেছে কিনা তাও জানা নেই। তবে পুলিশ তাকে গ্রেফতারের জন্য খুঁজছে।”
বিএনপির টানা কর্মসূচি শুরুর পর রাজধানীসহ সারা দেশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরাও টহল দিচ্ছে। তাদের কাছেও সালাহ উদ্দিনের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
রাত পৌনে ১২টায় বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মহসিন রেজা বলেন, “এখনো সালাহ উদ্দিনের আটকের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।”
অপরদিকে, বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়া প্রসঙ্গে গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গিয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু গুলশান থানা পুলিশ জিডি গ্রহণ না করে সালাউদ্দিন আহমেদ যেহেতু উত্তরা থেকে নিখোঁজ হয়েছেন, তাই উত্তরা থানায় যোগাযোগের পরামর্শ দেয় গুলশান থানা পুলিশ।
এরপর রাত ১১টায় উত্তরা (পশ্চিম) থানায় জিডি করতে যান সালাহ উদ্দিন আহমেদের পরিবারের সদস্যরা। এ সময় সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ, স্ত্রীর বড় বোন এবং তার ছেলে উপস্থিত ছিলেন।
সাদাপোশাক ধারী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে তুলে নিয়ে গেছে এমন দাবি করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে চায় পরিবার।
উত্তরা (পশ্চিম) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, কারও ভাষ্যমতে আমরা একজন বিশেষ নাগরিককে তুলে নেয়ার খবর শুনে জিডি গ্রহণ করতে পারি না। যে বা যারা তাকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছেন তারা এলে জিডি নেয়া হবে।
সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে ফিরে পেতে আগামীকাল হাইকোর্টে এ বিষয়ে একটি রিট করা হবে।
গত ৩ জানুয়ারি থেকে গুলশানে নিজ কার্যালয়ে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেখান থেকে ৫ জানুয়ারি সারাদেশে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা দেন তিনি। এরপর বিভিন্ন বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দলের অবস্থান জানান দিচ্ছিলেন সালাহ উদ্দিন।
এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এভাবেই নিখোঁজ হয়েছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। প্রথমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে আটকের কথা অস্বীকার করে। নিখোঁজের ২১ ঘণ্টা পর আটকের কথা স্বীকার করে র্যাব তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/আরআর
নিউজবাংলাদেশ.কম