ভারতের গোলামি নয়
ঢাকা: ‘কারো দাস হতে রাজি না’ বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এমন মন্তব্য করে বলেছেন, প্রয়োজনে জীবন দিতে রাজি আছি। পাকিস্তানের হাত থেকে রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনে ভারতের গোলামি করতে রাজি না।”
দেশে সৃস্ট রাজনৈতিক সংকট নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছে জনগণ। রাজনৈতিক আন্দোলন আর দমনের নামে সহিংসতার বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সংলাপে বসিয়ে চলমান সংকট নিরসনের দাবিতে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী মতিঝিলে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
রোববার ছিল সে অবস্থান কর্মসূচির ৪০তম দিন। সকাল নটা থেকে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার কথা থাকলেও তিনি নামেন দুপুর ১ টা ২০ মিনিটে। দেশের চলমান পরিস্থিতি, কূটনৈতিক চাপ, সমাধানের পথ, অসাংবিধানিক ক্ষমতার আশঙ্কাসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করেন। প্রায় ১২ মিনিটের কথোপকথনের বিভিন্ন দিক পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
শুরুতেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা প্রসঙ্গে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, “সব হাসিনা-খালেদার লোক। এছাড়া বাংলাদেশে সবচে বিপদ হলো সাংবাদিকদের। তারা মুক্তভাবে কলম চালাতে পারেন না। সাংবাদিকদের বিবেক বলতে এখন আর তেমন কিছু নেই।”
সকাল নটার অবস্থান কর্মসূচিতে দুপুর ১টা ২০ মিনিটে হাজির হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, এসময়ে তিনি লেখালেখিতে ব্যস্ত ছিলেন। কী লিখছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “এখানে বসে আমি এবং আমার দলের কর্মীরা বাংলাদেশকে পাহাড়া দিচ্ছি।”
তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন কবিতা-টবিতা কিছু লেখেননি। বিভিন্ন পত্রিকার জন্য মন্তব্য কলাম লেখার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ‘হরতাল অবরোধ ও সহিংসতার বাইরে গিয়ে আপনার কৃষক শ্রমিক লীগের অভিনব আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে টেকসই শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব কি-না’ এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আমি তো আমার বিজয় চাই না। দেশের বিজয় চাই। জন্মের পর মৃত্যু যেমন, অশান্তির পর শান্তি তেমন।”
অবস্থান কর্মসূুচিতে নিজের অবস্থান করা, না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মানুষ তো হাগে, পেসাব করে, পায়খানা করে। এটুকু জায়গা আমার অবস্থানই। আমি অবস্থানেই আছি। বাড়িতে রাত্রে ঘুমাইয়া আমি অবস্থান আছে বলি না। বহু মানুষ এখনও জিজ্ঞেস করে, রাতে কি এখানে থাকেন? ”
সংকট উত্তরণে কূটনীতিকদের পদেক্ষপ লজ্জাজনক বা শান্তিজনক এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “কূটনীতিকরা পদক্ষেপ নেবেই। এটা সব দেশেই নেয়। বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। তাদের পদক্ষেপ নেয়া না নেয়ার বিষয়টা ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে হবে। কূটনীতিকদের কূটনীতি করা খারাপ কিছু না। সবসময় ভালো। তবে কূটনীতিকরা আমাদের উপর বসে থাকাটাই খারাপ। তাদের কথা আমাদের শুনতে হবে, পাশাপাশি আমাদের কথাও তাদের শুনতে হবে।’
‘কতোদিনের মধ্যে সহিংস রাজনীতির সমাধান হবে বলে বিশ্বাস করেন’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “খুব তাড়াতাড়িই সমাধান হবে। কোনো সমাধানই স্থায়ী নয়। যেদিন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেদিন মনে হয়েছিল যে, আমরা স্বর্গের কাছাকাছি চলে গেছি। মানুষ তো সবসময় ভালো থাকার চেষ্টা করে। আমরা সেই চেষ্টার উল্টোদিকে চলে এসেছি।”
তিনি আরও বলেন, “ভাঙচুর কোনো সাফল্য নয়। বাসায় কাজ করতে গিয়ে থালা-বাসনও ভাঙে। বাচ্চারা রাগ করে এটা ওটা ভাঙে তো! কিন্তু কোনো বাচ্চাই রাগ করে বেশিক্ষণ থাকে না। হঠাৎ রাগ করে তারা। বাপ মায়ের কাজ হচ্ছে আদর যত্ন করে বাচ্চাদের জেদ থামানো। এখন দেখছি, বাপ-মাই জেদ করে বসে আছে পাবলিকের ওপরে। বোন হোক-ভাবী হোক, এগুলো কোনো কথা না। তারা দুজন নেত্রী। তারা জেদ করে থাকতে পারেন না।”
অসাংবিধানিক কোনো ক্ষমতা বা আবারও একটি ওয়ান ইলেভেনের পক্রিয়া আসার সম্ভাবনা রয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, “মানুষের কথা যারা না শুনে তারাই তো অসংবিধানিক। একটা ভোট ছাড়া যারা ক্ষমতায় বসে আছে তারাই তো অসংবিধানিক। আরে ওয়ান ইলেভেন তো ঘুরে ঘুরেই আসে! পাবলিক ঠিক তো সব ঠিক।”
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিক বাংলাদেশে না আসার বিষয়টি ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, “তিনি (নরেন্দ্র মোদি) বিপুল ভোটে নির্বাচিত একজন নেতা। এদেশে আসলে দুহাত প্রসারিত করে যেন বুকে টেনে নিতে পারি, সে বিষয়টি খেয়াল রাখার অনুরোধ করেছি। দেশের মানুষের সমর্থনহীন এ সরকারের আহ্বানে তিনি বাংলাদেশে আসলে দেশের প্রাণ পাবেন না। আমি চাই, তারা ভালো থাকুক। আমরাও ভালো থাকি।”
নিউজ বাংলাদেশ/আরআর/কেজেএইচ
নিউজবাংলাদেশ.কম