‘রক্ষণশীল’ বিএনপি নেতারা
ঢাকা: আন্দোলন দমনে সরকারের কঠোর অবস্থানের ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম বৃহত্তর দল বিএনপি। দলের এই আপদকালীন সময়ে মাঠে নেই সিনিয়র নেতারা। তাছাড়া নীরব ভূমিকা পালন করছেন শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতারা। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের চোখেও ধরা পড়ছে, বিএনপির ‘প্রচারপ্রিয়’ নেতারাও এখন এড়িয়ে চলছেন গণমাধ্যম। তবে এটাকে আপদকালীন কৌশল বলে মন্তব্য করেছেন এক সিনিয়র নেতা।
গত ৫ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এর ফাঁকে ফাঁকে হরতাল, বিক্ষোভ, গণমিছিল কর্মসূচিও পালন করেছে দলটি। এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েও উধাও রয়েছেন সিনিয়র নেতারা। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নেই কোনো যোগাযোগ।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলের সিনিয়র নেতা, পাড়া-মহল্লা বা থানার কর্মসূচি সম্পর্কে যাদের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা পাওয়ার কথা তারাই আজ উধাও। ফোন ধরেন না। মামলা, কারাগার আর নিজের সম্পদ রক্ষার জন্য বড় এই দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে নিজেরাই নিজেদের মতো করে চেয়ারপারসনের নির্দেশনা ফলো করছেন।
অপরদিকে, গত ৩ জানুয়ারি থেকে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এসময়ের মধ্যে তাকে কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। তার খাবার নিতে বাধা দেয়া হয়েছে। তার সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। উপরন্তু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করেছে আদালত। যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন তিনি। পাশাপাশি গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় যেখানে গত ৩ জানুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া অবস্থান করছেন সেখানেও তল্লাশির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ অবস্থার প্রেক্ষিতে দুই-একজন ছাড়া গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন না ‘প্রচারপ্রিয়’ সিনিয়র নেতারা। ৩৮৬ সদস্যের নির্বাহী কমিটিতে ১২১ জন কর্মকতা রয়েছেন। এদের প্রত্যেকের মোবাইল নম্বর বন্ধ। তারা অন্য নম্বর ব্যবহার করছেন যা অনেকেই জানে না। বাসার নম্বরে ফোন করলে বলা হচ্ছে, বাসায় নেই। অনেকের মোবাইল নম্বর খোলা থাকলেও কোনো কথা বলতে নারাজ তারা। অথচ এই নেতারাই একসময় গণমাধ্যমে কাভারেজ পাওয়ার জন্য ছিলেন ‘উন্মুখ’। অনেক সময় নিজেরা ফোন করেই গণমাধ্যম কর্মীদেরকে কমেন্টস দিয়েছেন এমন নজিরও অসংখ্য। তারাই এখন গণমাধ্যম এড়িয়ে চলছেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ, এম কে আনোয়ার, ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস এই চার জনের মধ্যে ৩ জনের মোবাইল ফোন
খোলা পাওয়া গেছে। দুজন ফোন রিসিভ করলেও রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
দলের এই আপদকালীন সময়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে এসব বিষয়ে সবসময় কথা বলছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে জে. অব. মাহবুবুর রহমান। এছাড়া কখনো কখনো কথা বলছেন নজরুল ইসলাম খান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আহমেদ আজম খান, সেলিমা রহমান, মারুফ কামাল খান সোহেল, শিরিন সুলতানাসহ কয়েকজন। এছাড়া সব নেতাই গণমাধ্যম এড়িয়ে চলছেন।
বিএনপির এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার জোর শর্ত দিয়ে বলেন, ‘এখন রাজনীতির যা অবস্থা তাতে ফোনে রাজনৈতিক কমেন্টস দিয়ে কি হবে। আসুন অন্য কথা বলি। ফোন ট্রাক হচ্ছে। ফোন ট্র্যাক করে রিজভীকে আটক করা হয়েছে? ফোনে
কথা বলা নিরাপদ নয়।’
আন্দোলন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে না তাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কে বলেছে নেই? নেতাকর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সবাই আন্দোলন করে না ব্যাকআপ দিতে কাউকে থাকতে হয়। সিনিয়র নেতারা আন্দোলন করেন না তারা নির্দেশনা দেন। নেতাকর্মীরা তা বাস্তবায়ন করেন।’
গণমাধ্যম এড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে এড়িয়ে যাওয়ার কিছু নেই। ফোন ট্রাক করে অবস্থান নিশ্চিত হয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এজন্য অনেকেই নিয়মিত নম্বর বন্ধ করে অন্য নম্বর দিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যাগাযোগ করছেন। নতুন নম্বর গণমাধ্যম কর্মীরা না জানায় যোগাযোগে ব্যত্যয় ঘটেছে। এটাও একটা আপদকালীন কৌশল। রাজনীতি করতে গেলে কৌশলী হতে হয়।’
নেতাদের আত্মগোপন ও কৌশলের বিষয়ে জানতে চাইলে লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সারাদেশে নেতাকর্মীরা অত্যাচারিত। বাসায় থাকতে পারছে না। অনেকে জেলে আছে, মামলা হচ্ছে। এ অবস্থায় ঢাকায় নেতাদের পাওয়াই যাচ্ছে না। সবার
মোবাইল বন্ধ। কারো সঙ্গে নেতাকমর্মীদের যোগাযোগ নেই। কাকে দোষারোপ করবো কাকে ভালো বলবো। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’
তিনি বলেন, ‘নেতারা মোবাইল বন্ধ রাখবেন, গণমাধ্যম এড়িয়ে চলবেন, এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।’
নিউজবাংলাদেশ.কম/ আরআর/ এফএ
নিউজবাংলাদেশ.কম