দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে পলাতক স্বৈরাচার: তারেক রহমান
ছবি: সংগৃহীত
পলাতক স্বৈরাচার দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, তারা মানুষের ভবিষ্যৎ তারা নষ্ট করে দিতে চেয়েছিল। মানুষ বিএনপির ওপর আস্থা রাখে। তাই এখনও সম্ভাবনা আছে দেশটাকে রক্ষা করার।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি শীর্ষক কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের বহু নেতাকর্মীরা জীবন দিয়েছেন। জেল জুলুম অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আরও বহু মানুষ জীবন দিয়েছেন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের দলের নেতাকর্মীরাই বেশি গুম খুন ও অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। ৬০ লাখ নেতাকর্মী মামলা হামলার শিকার হয়েছেন। এই দলটির কাছেই মানুষ বেশি প্রত্যাশা করে। আমাদের উচিত মানুষের প্রত্যাশা পূরণের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করা।
দেশ ও মানুষের জন্য জিয়া পরিবারের অবদানের কথা উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমার বাবা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে গিয়েই ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে জীবন দিয়েছেন। আমার মা খালেদা জিয়া দেশের মানুষের পক্ষে থাকার কারণে কীভাবে নির্যাতিত হয়েছেন; আপনারা দেখেছেন। আমার ভাই আরাফাত রহমান ষড়যন্ত্রকারীদের অত্যাচারে শহিদ হয়েছেন। বাংলাদেশের বহু বিএনপি নেতাকর্মীর পরিবারের কাহিনী আমার পরিবারের মতোই।
তারেক রহমান বলেন, আমরা দেখেছি কীভাবে গত ১৫ বছরে পলাতক স্বৈরাচার সরকার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। কীভাবে দেশকে দুর্নীতিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। কীভাবে অর্থ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। তারা দুর্নীতির ওপর টিকে থাকতে চেয়েছিল এবং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এই দুর্নীতি থেকে যদি দেশকে রক্ষা করতে হয় তাহলে তা প্রাইমারি স্কুল থেকেই শিক্ষার্থীদেরকে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে হবে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নকরণ করা হবে। অতিথি শিক্ষার্থীকে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ইংরেজিতে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে খেলাধুলায় উৎসাহিত করা হবে। আমরা চাচ্ছি প্রাইমারি লেভেল থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত প্রতিটি নাগরিক একজন দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। দেশের নাগরিকদেরকে এমনভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা দেশ-বিদেশে কোথাও গিয়ে না আটকে যায়। সারা বিশ্বেই যেন সে একজন দক্ষ কর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশায় নিযুক্ত নেতাকর্মীরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রশ্ন করেন। এ সময় তিনি এবং কর্মশালার প্রশিক্ষকরা তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, দেশের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে। দেশের যানজট একটি প্রধান সমস্যা এ সমস্যা মোকাবিলা করতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জুলাই আগস্ট বিপ্লবে শহিদদের নামে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ করা হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, নিজের কথা ভাবলে হবে না। আসুন আমরা দেশ ও জাতির কথা চিন্তা করি। নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু দরকার তারপরই আসুন আমরা দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। তাহলে আপনারা দেশের মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রিয় নেতারা আসুন জীবনের বাকি সময়টুকু দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকি।
প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, সংস্কারের নামে নির্বাচন বিলম্ব করা মোটেও ঠিক হবে না। একটি পক্ষ চাচ্ছে নানা কৌশলে নির্বাচনকে বিলম্ব করতে। কিন্তু তা দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। রাষ্ট্র মেরামত এবং সংস্কারের কাজ নির্বাচিত সরকারের অধীনেই যথাযথভাবে করা সম্ভব হবে।
বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করেন বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন। কুমিল্লা বিভাগীয় এই কর্মশালায় অংশ নেন কুমিল্লা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী নোয়াখালী লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপি, মহানগর ও পৌরসভার শীর্ষ নেতারা।
কর্মশালায় আলোচক ছিলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ আলমগীর পাভেল, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক রেহানা আক্তার বানু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াছিন, সহ-ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নেওয়াজ হালিমা আরলি, সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুর সাত্তার পাটোয়ারী ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবা হাবিব।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু, সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু। কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক মো. আক্তারুজ্জামান, সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সি প্রমুখ।
সভা শেষে জেলা উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সময় নেতাকর্মীরা আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে কোন ধরনের অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িত হবে না মর্মে অঙ্গীকার করেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি