‘ফিরোজা’তে রেখেই হবে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা
করোনায় আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’তে রেখেই হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে সিটি স্ক্যান পরীক্ষার চিকিৎসক দলের সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়েছেন।
সিটি স্ক্যানের জন্য রাত সোয়া ৯টার দিকে খালেদা জিয়াকে একটি প্রাইভেটকারে করে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। সিটি স্ক্যান শেষে রাত পৌনে ১১টার দিকে তাকে আবার তার বাসভবন ফিরোজায় আনা হয়।
পরে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “তার (খালেদা জিয়া) পরীক্ষার প্রতিবেদন অনেক ভালো। সাময়িক প্রতিবেদনে ‘ফাইন্ডিংস’ আছে। তারা ক্লিনিক্যালি মনে করছেন, এটি অত্যন্ত মিনিমাম। এখন খালেদা জিয়ার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বাসায় রেখেই দেয়া হবে।”
তার সিটি স্ক্যানের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন শুক্রবার হাতে পাওয়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
খালেদা জিয়া শঙ্কামুক্ত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “করোনা আক্রান্ত হওয়ার সপ্তম দিনে শঙ্কামুক্ত বলার সময় আসেনি। ১২ থেকে ১৪ দিনে তা বলা যায়।”
ডা. জাহিদ বলেন, “খালেদা জিয়াকে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রাখা হবে। কারণ করোনায় কালকে কী হবে, তার পরের দিন কী হবে বলা কঠিন। ১৪ দিন পর্যন্ত ক্লোজ মনিটরিংয়ে রাখা হবে। আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া আছে। তার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।”
তবে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বিএনপির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, করোনা আক্রান্ত খালেদা জিয়ার ফুসফুসে সংক্রমণের মাত্রা যেটা পাওয়া গেছে তা ৫ শতাংশেরও কম, যা অত্যন্ত সন্তোষজনক।
এর আগে রাত ৯টা ২০ মিনিটে গুলশানের বাসা থেকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রাইভেট কার এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। হাসপাতালে পৌঁছায় ৯টা ৪০ মিনিটে। সিটি স্ক্যান সংক্রান্ত সব কার্যক্রম শেষ করে ১০টা ২৫ মিনিটে হাসপাতাল থেকে ফিরোজার উদ্দেশ্যে বের হন। রাত ১০টা ৫০ মিনিটে খালেদা জিয়া বাসায় পৌঁছান।
হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, বিএনপি নেতা বরকত উল্লাহ বুলু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ডা. আল মামুন, একজন নার্স ও গৃহপরিচারিকা ফাতেমা।
গত বছর ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে দুই মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। এরপর আরও দুই দফা তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। কারাগার থেকে মুক্তির পর তিনি গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। একদিনের জন্যও তিনি বের হননি। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো চিকিৎসার জন্য বাসার বাইরে বের হলেন তিনি।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে তিন সদস্যের একটি চিকিৎসক দল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন ফিরোজায় যান। সেখান থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন চিকিৎসক দলের প্রধান ডা. এফ এম সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো আছেন। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যেকোনো সময় ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সিটি স্ক্যান করাব। এরপর আমরা বলতে পারব বাসায় রেখে চিকিৎসা করব নাকি কয়েক দিন হাসপাতালে রেখে অবজারবেশন করব। সবকিছুই নির্ভর করবে সিটি স্ক্যান রিপোর্টের ওপর।”
তিনি বলেন, “চেয়ারপারসনের বর্তমান যে অবস্থা এ নিয়ে আমরা একটি রিপোর্ট করিয়েছি। শনিবার যে রিপোর্ট করেছিলাম তার সঙ্গে দুইদিনের রিপোর্ট একই ছিল। এতে আমরা দেখেছি ম্যাডামের পালস, ব্লাড প্রেসার, অক্সিজেন স্যাচুরেশন সব ঠিক আছে। আমরা ওনার যে টেস্টগুলো করিয়েছি তাতে দেখা যাচ্ছে, বিশ্রাম এবং হাঁটাহাঁটির পরেও উনার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ভালো। রক্ত পরীক্ষাগুলোও ভালো আছে।”
ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, “নতুন উপসর্গের মধ্যে বুধবার রাতে উনার একটু জ্বর হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালেও উনার সামান্য জ্বর ছিল। তবে এখন তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল এবং তিনি ভালো আছেন।”
তিনি বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর আজকে (বৃহস্পতিবার) হলো সপ্তম দিন। এখন দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে। আমি আগেও বলেছি করোনা আক্রান্ত হওয়ার প্রথম সপ্তাহ এবং দ্বিতীয় সপ্তাহের মতে পার্থক্য রয়েছে। করোনার যত জটিলতা দ্বিতীয় সপ্তাহেই বেশি হয়। সেজন্য আমরা আর একটু সতর্ক হতে চাই।”
ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, “ম্যাডামের আগে থেকেই আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে। ডায়াবেটিস এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রতিদিন তিনবার ব্লাড সুগার মনিটর করছি। প্রতিদিন ট্যাবলেট এবং ইনসুলিন দিয়ে উনার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করছি। তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে যথেষ্ট ভালো আছেন।”
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ডা. মো. শাকুর খান, ডা. মোহাম্মদ আল মামুন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ