আন্দোলন দমাতেই নির্বাচনের উদ্যোগ
ঢাকা: জুনের আগেই ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) (চসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। এজন্য চলতি মাসেই তফসিল ঘোষণা করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের এই উদ্যোগে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বলরেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপি নেতারা বলছেন, এখন দেশে একটা সংকট চলছে। আর তা হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা। বর্তমান সময়ে জাতির সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হচ্ছে সংসদ নির্বাচন, ডিসিসি বা চসিক নির্বাচন নয়। সরকার তা করতে চাইলে অন্যায় ও ভুল হবে। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। সরকার আমাদের আন্দোলন দমাতেই এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে।
নেতারা জানান, বিএনপি নেতৃত্বধীন ২০ দলীয় জোট নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করছে। বিএনপি চেয়ারপারসন স্পস্ট করেই বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। এ অবস্থায় বর্তমান সরকারের ডিসিসি-চসিক কেন, কোনো নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সরকার তাদের অধীনে ডিসিসি ও চসিক নির্বাচন করতে চাইলে জনগণ পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো তা প্রতিহত ও বর্জন করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লে. জে. মাহবুবুর রহমান বলেন, “এ বিষয়ে ২০ দল এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে আমি মনে করি, বাংলাদেশে যে দুর্যোগ ও কঠিন সময় চলছে, এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ যায়নি, তারা এ সরকারের ওপর আস্থা হারিয়েছে, এজন্য অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন।”
তিনি বলেন, “বর্তমানে জাতির সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হচ্ছে সংসদ নির্বাচন, ডিসিসি বা চসিক নির্বাচন নয়। সরকার তা করতে চাইলে অন্যায় ও ভুল হবে। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। সরকার আমাদের আন্দোলন দমাতেই এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারপারসনে উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “আমরা মনে করি, যে কোনো নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনেই হওয়া উচিৎ। অতীতে আমরা দেখেছি, উপজেলো নির্বাচনে কীভাবে এই অগণতান্ত্রিক সরকার সহিংসতার মধ্যে নিয়ে ভোট ছাড়াই উপজেলাগুলো নিয়ে গেছে। জনগণ বুঝতে পেরেছে কোনো অগণতান্ত্রিক সরকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারে না।”
বিএনপি ডিসিসি ও চসিক নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিএনপি নেতৃত্বধীন ২০ দলীয় জোট এ নির্বাচনে অংশ নেবে কী করে? আমাদের ১০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দেয়া হয়েছে, ১ লাখ নেতাকর্মী কারাগারে। আর আমরা জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছি। এখন এই নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া মানে বুঝতে হবে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য আছে। আমাদের চলমান আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে এই আন্দোলন দমাতেই এটা করা হচ্ছে। এমনটা হলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো এই
নির্বাচনও জনগণ বয়কট করে প্রতিহত করবে।”
তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচনে অংশ নেবো নাকি প্রতিহত করবো এ বিষয়ে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শিগগিরই বিএনপি চেয়ারপারসন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন।”
গত ৩ জানুয়ারি থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানরত দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, “তাদের ইচ্ছা হইছে তারা নির্বাচন করবে। সেজন্য তফসিল ঘোষণা করার কথা বলছে,
নির্বাচনও করবে। বিএনপি সময়মতো এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।”
বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “এসব নির্বাচন করে কোনো লাভ হবে না। ডিসিসি-চসিক নির্বাচন দিয়ে সরকার পতন ঠেকাতে পারবে না। আমাদের আন্দোলনের মুখে সরকারকে জাতীয় নির্বাচন দিতেই হবে। আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সরকার একের পর এক নাটক করে যাচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ/আরআর/এজে
নিউজবাংলাদেশ.কম