প্রধান উপদেষ্টারও ক্রিটিসাইজ করা যাবে: প্রেস সচিব
ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস থেকে শুরু করে সকলের সমালোচনা করা যাবে বলে মন্তব্য করছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীতে একটি অভিজাত হোটেলে এক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
প্রেস সচিব বলেন, গণতান্ত্রিক ট্রানজিশনের এই মুহূর্তে প্রশ্ন করার সঠিক সময়। এখন প্রশ্ন করতে পারেন, প্রশ্ন করার সঠিক পরিবেশ আছে কিনা? গণমাধ্যমের সেই স্বাধীনতা আছে কিনা প্রশ্ন করার? আমি আমার সরকারের পক্ষ থেকে বলতে পারি, গত পাঁচ মাস ধরেই আমরা বলছি, প্রশ্ন করার এখনই সময়। ক্ষমতাধরদের প্রশ্ন করে দায়বদ্ধতার মধ্যে নিয়ে আসার এখনই সেরা সময়।
তিনি বলেন, গত ৫ মাসে প্রশ্ন করার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে সরকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আছে এখন। প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে সবার ক্রিটিসাইজ করা যাবে।
শফিকুল আলম বলেন, আমরা আমাদের নিরাপত্তা এজেন্সি, প্রশাসনকে ব্যবহার করে, কিংবা কোনও আইন প্রয়োগ করে কোনও প্রকার বাধা দেইনি। যদি কারও অভিযোগ থাকে আমাদের জানান, আমরা সেটি নিয়ে কাজ করব। এখন অকল্পনীয় স্বাধীনতা ভোগ করছে গণমাধ্যম। এখন আমার সমালোচনা করতে পারেন, প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করতে পারেন, এমনকি উপদেষ্টাদেরও সমালোচনা করতে পারেন।
প্রেস সচিব জানান, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে সবার আগে গণমাধ্যমকে স্বাধীন করতে হবে। শক্তিশালী গোষ্ঠীকে জবাবদিহির আওতায় আনতে চাইলে এখনই আদর্শ সময়। কারণ এই সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করেনি, করবেও না।
তিনি বলেন, আমরা এখন এমন একটা সময়ে আছি যখন আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছি। ছাত্র-জনতার সবাই এখন প্রশ্ন তুলছে, আমরা কি সঠিক পথে আছি, আমরা কি গণতন্ত্রের চেয়েও বেশি উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েছি, গণতন্ত্রকে স্যাক্রিফাইস করে উন্নয়ন কতদূর টিকবে – এই ধরনের প্রশ্ন এখন সর্বত্র। আমাদের বেশ ভালো লেগেছে যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, যারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল।
প্রেস সচিব আরও বলেন, গত কয়েক দশক ধরে আমরা যেসব প্রকল্প হাতে নিচ্ছি কিংবা বেসরকারি খাত যেসব প্রকল্প হাতে নিচ্ছে, আসলে আমরা নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি পরিবেশের ক্ষতি করে। প্রতি বছর আমাদের নদীগুলো দূষণের শিকার হচ্ছে নতুন করে। এই মুহূর্তের তথ্য বলছে, দেশের ৫৪টি নদী দূষিত। আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছি আমাদের নদী দূষিত করে। দূষণ এখন আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা। এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে কয়েক বছর পর আমাদের সন্তানরা এখানে বাস করতে চাইবে না।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে একটা লবিং গ্রুপ আছে, যাদের আমরা এখনও প্রশ্ন করতে পারিনি। আমরা এখনও ইট কীভাবে তৈরি করে– এমন গুরুতর প্রশ্ন করতে পারিনি। তৈরি পোশাক খাতে কীভাবে কর্মসংস্থান তৈরি করা হয়, সেটিও আমরা জিজ্ঞেস করতে পারিনি। পত্রিকায় দুই দিন পরপর খবর আসে, অমুক ফ্যাক্টরি গ্রিন হয়েছে এখন আমাদের ২১৫টি গ্রিন ফ্যাক্টরি আছে। আসলেই কি এগুলো ‘গ্রীন’? আমি দুই একটি গ্রিন ফ্যাক্টরি চিনি যেগুলো নদীর কিনারে। এগুলো কেমন গ্রিন ফ্যাক্টরি? তারা কি সত্যই গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড মেনে গ্রিন হচ্ছে? নাকি একটি এজেন্সি সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছে এবং তারপর কী হচ্ছে কেউ জানতে চাচ্ছে না! আমাদের (সাংবাদিকদের) দায়িত্ব এগুলো প্রশ্ন করা। অনেক বছর ধরেই আমরা বড় বড় শিল্পকে মুখোমুখি করতে পারিনি। তাদের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে ‘কর্মসংস্থান’ তৈরি, আর তা শোনার পরই প্রশ্ন করা বন্ধ হয়ে যায়। এটি অনেক বছর ধরে উন্নয়নের ন্যারেটিভ হয়ে আছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে শফিকুল আলম বলেন, এখন অনেক প্রশ্ন আছে করার। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পরিবেশবিধি মেনে করা হয়েছে কিনা। এসব প্রকল্পে যারা কাজ করেছে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কিনা, প্রকল্প এলাকার আশেপাশে থাকা মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কিনা। অনেক প্রশ্ন করার আছে, উন্নয়ন অনেক বড় বিষয়।
রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে অক্সফামের উদ্যোগে ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া ফোরামের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি