News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক  || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:৪৯, ৯ জানুয়ারি ২০২৫

২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ড. ইউনূস ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে 

২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ড. ইউনূস ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে 

ফাইল ছবি

২০২৪ সালে দেশে রেকর্ড ২ হাজার ৯১৯টি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে বলে জানিয়েছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার। এর আগে এত ভুল তথ্য ছড়ানোর রেকর্ড নেই। এক বছরের ব্যবধানে রিউমার স্ক্যানার প্রায় ৫২ শতাংশ হারে ভুল তথ্য বৃদ্ধি পেতে দেখেছে। 

বুধবার (৮ জানুয়ারি) নিজেদের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। 

একক ব্যক্তি হিসেবে বেশি ভুল তথ্য ছড়ানো হয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে।

রিউমার স্ক্যানারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুরুটা হয়েছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে। এরপর সময়ের সঙ্গে নানা ইস্যু যেমন ছিল, ছিল নিয়মিত অপতথ্যের প্রবাহও। এরপর জুলাই-আগস্ট মাসের কোটা আন্দোলনের পথ ধরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। 

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলের সমাপ্তির পর রাষ্ট্র ক্ষমতার দায়িত্ব নেয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশ নিয়ে একের পর এক সাম্প্রদায়িক প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়। এভাবেই শেষ হয় ২০২৪ সাল। 

গেল বছর এমন সব ঘটনায় রেকর্ড ২৯১৯টি ভুল আর অপতথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার। ২০২৩ সালে শনাক্ত হয়েছিল ১৯১৫টি ভুল তথ্য। 

ভুয়া তথ্য সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে ইউটিউব, ফেসবুক ও এক্সে জানিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মেটার অধীনে থাকা এই মাধ্যমটিতে ২০২৪ সালে ২৩৩০টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এই হিসেবে প্রতিদিন কমপক্ষে গড়ে ৬টির বেশি ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে এই প্ল্যাটফর্মে। ফেসবুকের পর একক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে ইউটিউবে, ৫৬৫টি। ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকেও ৬ মাসে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে ৫০৯টি। এ ছাড়া এক্সে (সাবেক টুইটার) উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অপতথ্য প্রচার করা হয় বাংলাদেশ নিয়ে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালে রিউমার স্ক্যানারে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে পুরোপুরি মিথ্যা বা ভুয়া ঘটনা সংবলিত ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে ২০২৮টি। 

এ ছাড়া বিভ্রান্তিকর রেটিং দেওয়া হয়েছে ৫৩৩টি। বিকৃত রেটিং পেয়েছে ৩০৮টি, অধিকাংশই মিথ্যা এমন রেটিং পেয়েছে ৩টি। 

এ ছাড়া সার্কাজম বা কৌতুক হিসেবে হাস্যরসাত্মক ঘটনাকে বাস্তব দাবির প্রেক্ষিতে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক করা হয়েছে ৩১টি। যাচাইয়ের পর অর্ধেক সত্যতা পাওয়া গেছে এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ২টি। এ ছাড়া মাস হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়ায় আগস্ট মাসে ৩৮৬টি। 

একক ব্যক্তি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছড়ানো সবচেয়ে বেশি, ২০৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়। 

এই তালিকায় পরের অবস্থানে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাকে নিয়ে ছড়ানো ১১৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়। 

তৃতীয় অবস্থানে থাকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ছড়ানো ৯৮টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দিক দিয়েও এই ৩ জন শীর্ষে।

গত বছর রাজনীতি নিয়ে ৭২৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত করে রিউমার স্ক্যানার। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছড়ানো ৯১টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়। সবচেয়ে বেশি ১২৪টি রাজনৈতিক ভুল তথ্য শনাক্ত হয় জানুয়ারি মাসে। এরপর আগস্ট ও নভেম্বরে ১০১টি করে রাজনৈতিক ভুল তথ্য শনাক্ত করে প্রতিষ্ঠানটি।

রিউমার স্ক্যানার জানিয়েছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আগস্ট থেকে ধর্মীয় অপতথ্য ছড়ানো আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ২০২৪ সালের প্রথম ৬ মাসে সাম্প্রদায়িক ২৯টি অপতথ্য শনাক্ত হয়। পরের ৬ মাসে তা ৫ গুণের বেশি বেড়েছে।

তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারবিহীন ৩ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বাসা ও স্থাপনায়ও হামলা হয়। এসব ঘটনা ঘিরে সাম্প্রদায়িক ভুল তথ্য ও অপতথ্য ছড়ানোর মাধ্যম হয়ে ওঠে এক্স।

গত বছর বাংলাদেশকে নিয়ে ১৮১টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত হয়, যার মধ্যে ১১৮টি ভারত থেকে আর ৬৩টি বাংলাদেশ থেকে ছড়ানো হয়। শুধু আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে ১১৩টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য ছড়ানো হয়। এক্সে আগস্ট–পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে নিয়ে ছড়ানো অপতথ্যগুলো দেখা হয়েছে অন্তত ২০ কোটি বার।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়