News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক  || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:৩৩, ৩ জানুয়ারি ২০২৫

আন্তক্যাডার দ্বন্দ্বে শাস্তির মুখে ৮ সরকারি কর্মকর্তা

আন্তক্যাডার দ্বন্দ্বে শাস্তির মুখে ৮ সরকারি কর্মকর্তা

ফাইল ছবি

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পর আন্তক্যাডার দ্বন্দ্বে শাস্তির মুখে পড়ছেন বিরূপ মন্তব্য করা সরকারি কর্মকর্তারা। 

বিসিএস প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ক্যাডারের আটজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে চিঠি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য করায় এখন পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত করা কর্মকর্তাদের মধ্যে পাঁচজন শিক্ষা ক্যাডারের। অন্য তিনজনের মধ্যে একজন বিসিএস প্রশাসন, একজন প্রাণিসম্পদ ও একজন মৎস্য ক্যাডারের কর্মকর্তা। এ ছাড়া যে দুজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, তাদের মধ্যে একজন স্বাস্থ্যের এবং অন্যজন প্রাণিসম্পদ ক্যাডারের কর্মকর্তা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে চিঠি পাঠিয়েছে। 

তবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তাদের মধ্যে আরও অনেকে অভিযুক্ত। 

তাদের বক্তব্য, মোট ১৮ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে, কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিবেদকের কাছে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এদিকে, গত ৪ অক্টোবর দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে সভাপতি করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গত ১৭ ডিসেম্বর একটি সাংবাদিক মতবিনিময় সভা আয়োজন করে। 

সেদিন মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, জনপ্রশাসনে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশের কোটা সুপারিশ করা হবে। বর্তমানে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়া হয়।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের এমন বক্তব্যের পর থেকেই প্রশাসন এবং অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র বিরোধ তৈরি হয়। 

এরই মধ্যে, প্রশাসন ক্যাডার ও অন্য ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রতিবাদ সভা, জমায়েত এবং কর্মবিরতির মতো বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু করেন।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, কেউ এই বিধি লঙ্ঘন করলে তিনি অসদাচরণের দায়ে ব্যবস্থার আওতায় আসবেন। 

এরই মধ্যে শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। প্রথমে সংগঠনটি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল।

গত ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, আন্দোলনের নামে যারা চাকরির বিধি লঙ্ঘন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমলাদের বলছি, এখন সময় জনগণকে সময় দেওয়ার। আমাদের যে গণতান্ত্রিক ট্রানজিশনটা (রূপান্তর), সেটাকে সঠিকভাবে করতে সহায়তা করা। আন্দোলন-আন্দোলন খেলা কিংবা তাদের গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষার জন্য কিন্তু এত মানুষ জীবন দেয়নি।

যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

অসদাচরণের অভিযোগে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলমকে ১ জানুয়ারি সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ তাকে (জাহাঙ্গীর আলম) চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা প্রয়োজন ও সমীচীন মনে করে। সাময়িক বরখাস্তকালে তিনি বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ক্যাডার বৈষম্য নিয়ে তিনি ধারাবাহিক কথা বলে আসছেন। বৈষম্য নিরসনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্যরা যাতে কথা বলা বন্ধ করেন, সে জন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

একই অভিযোগে ১ জানুয়ারি সাময়িক বরখাস্ত করা হয় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ঢাকায় সংযুক্ত) জাহিদুল ইসলামকে। সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমানকে। গত সোমবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। ২৯ ডিসেম্বর তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি করা হয়। এরপর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে গত ২৯ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাদের মধ্যে সরকারি কলেজের প্রভাষক চারজন। তারা হলেন আনোয়ার হোসেন ফকির, তানভীর খান, রফিকুল ইসলাম ও অসীম চন্দ্র সরকার। অন্যজন সহকারী অধ্যাপক শাহাদাৎ উল্লাহ কায়সার।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ঢাকায় সংযুক্তি) শাহাদাৎ হোসেন ও বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের কর্মকর্তা এমদাদুল হক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চিঠির সঙ্গে কর্মকর্তারা ফেসবুকে যে মন্তব্য করেছেন, তা যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে।

সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে বিরূপ মন্তব্য করায় একজন জেলা প্রশাসককে (ডিসি) প্রত্যাহার করা হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।

২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের’ সমন্বয়ক মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, বাক্‌স্বাধীনতা ফিরে পেতে। কেউ যদি গুরুতর অন্যায় করেন, তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। কিন্তু ঢালাও বরখাস্ত করে অবিচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তা ২৫টি ক্যাডার নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বেশি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধির বিষয়ে সরকার কঠোর বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের (এপিডি) অতিরিক্ত সচিব ওবায়দুর রহমান। 

তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে আচরণ বিধি মেনে চলতে হয়। দেখা যাচ্ছে, অনেক কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্তক্যাডার নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন। তারা সরকারি কর্মচারী বিধি লঙ্ঘন করছেন। যারা নিয়ম ভেঙে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়