দুদকের জালে ফেঁসেছেন দুদক কমিশনার
দুদকের সাবেক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক। ফাইল ছবি
দুর্নীতি দমন কমিশনের সদ্য সাবেক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।
বুধবার (১ জানুয়ারি) দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, দুদকের সাবেক কমিশনার জহুরুল হকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।
দুদকের পরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঞাকে প্রধান করে তিন সদস্যের এ কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেন।
দুদকের সাবেক কমিশনার ও সাবেক জেলা জজ জহুরুল হকের বিরুদ্ধে দুদকে জমা হওয়ার অভিযোগে বলা হয়, তিনি ঘুষ গ্রহণ করা ছাড়াও ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক দুদকের তদন্তাধীন মামলার আসামি থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ, জালিয়াতির মাধ্যমে রাজউক থেকে স্বামী-স্ত্রীর নামে আলাদা ২টি ৫ কাঠার প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান থাকাকালে বড় দুটি টেলিকম অপারেটর থেকে শত শত কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে বিভিন্ন দেশে একাধিক বাড়ি নির্মাণসহ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগও পেয়েছে দুদক।
অভিযোগটি বিধি মোতাবেক অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে অনুসন্ধান কমিটিতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
এছাড়া কমিটি অনুসন্ধানকালে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোনো ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধকরণ অথবা কোনো সম্পত্তি ক্রোক করা হলে তা অনতিবিলম্বে লিখিতভাবে দুদকের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করার নির্দেশনা রয়েছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে জানতে সংস্থাটির সাবেক কমিশনার জহুরুল হককে একাধিকবার তার ফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
দুদকের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত কমিশনার পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে দুদকের কোনো সাবেক বা বর্তমান কমিশনারকে দুর্নীতি বা অবৈধ সম্পদের অভিযোগে অনুসন্ধানের মুখোমুখি হতে হয়নি।
ইতোমধ্যে জহুরুল হকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তার পাসপোর্ট বাতিল করে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে গত ২৪ ডিসেম্বর ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরির্দশককে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। সংস্কারের দাবি ক্রমশ জোরালো হয়ে ওঠে।
এরপর থেকে ব্যাপক রদবদল দেখে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা। সেই ধাক্কায় গত ২৯ অক্টোবর পদত্যাগ করেন দুদকের আগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ ও দুই কমিশনার সাবেক জেলা জজ জহুরুল হক ও সাবেক সচিব আছিয়া খাতুন।
এর আগে ২০২১ সালের ৩ মার্চ ৫ বছরের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন জহুরুল হক। ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর গ্রহণের পর ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি তাকে বিটিআরসির চেয়ারম্যান করেছিল সরকার।
মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ নেতৃত্বাধীন কমিশনের পদত্যাগের প্রায় দেড় মাস পর গত ১০ ডিসেম্বর সাবেক সচিব মোহাম্মদ আব্দুল মোমেনকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের কমিশন নিয়োগ দেওয়া হয়। নতুন কমিশন যোগ দেওয়ার মাসেই গত ২৯ ডিসেম্বর এর আগের কমিশনের কমিশনার জহুরুল হকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি