অবিলম্বে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগবিধির সংস্কার প্রয়োজন: আইন উপদেষ্টা
ছবি: সংগৃহীত
উচ্চ আদালতে ভালো বিচারক নিয়োগ দিতে হবে বলে উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার বিধায় অবিলম্বে নিয়োগ-বিধির সংস্কার করা প্রয়োজন।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীতে বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ পদ্ধতি সংস্কার’ নিয়ে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বর্তমান নিয়োগ বিধি পদ্ধতি যথাযথভাবে কাজ করছে না। আদালতের মাধ্যমে নিপীড়ন-নির্যাতনের ক্ষেত্রে বিগত সময়ে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের বিধান সহায়তা করেছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, দেশের সব নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসংক্রান্ত মামলা উচ্চ আদালতের বিচারকরা শোনেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা ফাইনাল অ্যাপিলেট কোর্ট হিসেবে কাজ করেন, নন ফান্ডামেন্টাল বিষয়ে চাইলে তারা ব্যাখ্যা দিতে পারেন, এমনকি নিম্ন আদালতের তদারকির ক্ষমতাও তাদের। এই প্রতিষ্ঠানটি যদি নষ্ট করা যায়, তা হলে বাংলাদেশে যেকোনো দমনাত্মক সরকার এসে সব ধরনের মানবাধিকার দমন করার একটা অবাধ সুযোগ পেয়ে যায়। ঠিক এই কাজটাই গত ১৫ বছরে করা হয়েছে। উচ্চ আদালত মানবাধিকার হরণ এবং মানুষকে নির্যাতন করার একটি হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল। দিনের পর দিন বিচার ছাড়াই জেলে আটকে রাখতে আপিল বিভাগ জামিনের শুনানি পিছিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনাচার হয় না, আপিল বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে অথবা প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে, কিংবা বেঞ্চ গঠনের ক্ষেত্রে অনাচার হয়- এটা আমরা আগে দেখেছি। প্রত্যেকটা বিষয়কে আমরা নিয়ে আসতে চেষ্টা করব।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমরা খুবই ভাগ্যবান যে উদারমনস্ক একজনকে (প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ) প্রধান বিচারপতি হিসেবে পেয়েছি, যিনি এই সমস্যাগুলোর সমাধান করার জন্য আমাদের মতোই সমানভাবে আগ্রহী।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে বারবার অভিযোগ আসছিল যে, যারা বিচারকের পদে তখনো আসীন ছিলেন, তারা একটি সুনির্দিষ্ট দলের প্রতি প্রচণ্ডভাবে অনুগত ছিলেন এবং তাদের অনেকেই অনেক অনাচার করেছেন। এমনকি জুডিশিয়াল ক্যু হওয়ারও আশঙ্কা ছিল। এ কারণে দ্রুততম সময়ে কাজ করতে আইনের জন্য আমরা অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। হাতে সময় ছিল না, কিন্তু করার ছিল অনেক কিছু। তাই তাদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ সভায় বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনীতির ব্যাপারে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে দলীয় রাজনীতির মুখপাত্ররা যেন বিচারক হিসেবে নিয়োগ না পান, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কাউন্সিল গঠনের সময় এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামীম হাসনাইন ও বিচারপতি শেখ মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী।
এ ছাড়াও আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সিনিয়র আইনজীবী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক পিপি এহসানুল হক সমাজি, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন আহমেদ।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি