News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক  || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৯:৪৩, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

এবারও পূরণ হয়নি হজের কোটা

এবারও পূরণ হয়নি হজের কোটা

ফাইল ছবি

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ৫ জুন অনুষ্ঠিত হচ্ছে পবিত্র হজ। কিন্তু নানা কারণে হজে যেতে ইচ্ছুকদের আগ্রহ যেন দিন দিন কমে যাচ্ছে। যার প্রতিফলন দেখা গেছে গত বছরের হজে। 

গতবার নির্দিষ্ট কোটা পূরণ না হওয়ায় হজের সাথে সংশ্লিষ্টদের নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়েছে। 

আগের বারের মতো এবারও একই অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

২০২৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনকে হজ করার সুযোগ দিচ্ছে সৌদি আরব; তবে এবার খরচ কমিয়েও বাড়ছে না হজযাত্রী।

খরচ বেড়ে যাওয়ায় ২০২৪ সালে প্রায় ৩৩ শতাংশ কোটা পূরণ হয়নি, হজে গিয়েছিলেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন। এবার প্রাথমিক নিবন্ধনই সেরেছেন ৮৩ হাজার ৫৮৭ জন, যা চূড়ান্ত নিবন্ধনে আরও কমতে পারে। তার মানে এবার হজযাত্রী কমছে অন্তত ১ হাজার ৬৭০ জন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ছিল হজ নিবন্ধনের শেষ দিন। অথচ তখনও কোটা খালি ৫০ হাজার। ফলে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব)। 

গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হজের হয় প্রাথমিক নিবন্ধন। নিবন্ধনের শেষ সময় ছিল ৩০ নভেম্বর। কিন্তু কোটা পূরণ না হওয়ায় এক দফা সময় বাড়ানো হয়। এর পর আরও দুই দফা সময় বাড়ানো হয়। তবে বৃহস্পতিবার শেষ দিন হলেও অনেক কোটা খালি রয়েছে। 

দফায় দফায় সময় বাড়ানো হলেও নতুন করে আর সেই সুযোগ দেবে না বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) হজ অনুবিভাগের উপ সচিব মামুন আল ফারুক বলেন, ২০২৫ সালের জন্য হজের প্রাক, প্রাথমিক নিবন্ধনের সময়সীমা আর বাড়ছে না। আমাদের শিগগির সৌদি সরকারকে কোটা (নিবন্ধিতদের তালিকা) পাঠিয়ে দিতে হবে।

হজ পোর্টালের তথ্যানুযায়ী, এবারের হজের জন্য যে ৮৩ হাজার ৫৮৭ জন প্রাথমিক নিবন্ধন সেরেছেন, তার মধ্যে সরকারি মাধ্যম বেছে নিয়েছেন ৪ হাজার ৯৮০ জন। বাকি ৭৮ হাজার ৫৪৭ জন বেসরকারি মাধ্যমে হজে যেতে চান।

গত ২৫ অগাস্ট ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, হজের প্রাথমিক নিবন্ধন ১ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে শেষ হবে ৩০ নভেম্বর। এর মধ্যে সময়সীমা কমিয়ে-বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত তা ২৬ ডিসেম্বর বলে ঠিক করা হয়।

যারা প্রাথমিক নিবন্ধন সেরেছেন, তাদেরকে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে বলেছে সরকার।

হজে যেতে হলে প্রথম ধাপে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ‘প্রাক নিবন্ধন’ করতে হয়। এরপর ৩ লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন করতে হয়। তারপর প্যাকেজের বাকি টাকা জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন করা যায়। তবে প্রাথমিক নিবন্ধন চলাকালে কেউ চাইলে প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে পারেন।

হজের কোটা পূরণ না হওয়ার বিষয়ে হজ এজেন্সিস অব বাংলাদেশের (হাব) সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী বলেন, হজে মূলত তারাই যায়, যার জন্য ফরজ, যার সঙ্গতি আছে। সেক্ষেত্রে এরকম লোক যদি কম হয়, সেটা তো আর বাড়ানোর সুযোগ থাকে না।

তিনি বলেন, তবে এ বছর হজযাত্রী যা আছে, তারা সবাই প্রকৃত হজযাত্রী। কেননা অন্যান্য বারের মতো পলিটিক্যাল হাজী নেই এ বছর। তারপর যারা অবৈধভাবে টাকা-পয়সা কামিয়েছে, এদের মধ্যে অনেকে বারবার হজে যেত, তারা এবার যাচ্ছে না। আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা তাই বলে।

খাবার খরচ যুক্ত করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ঘোষিত সাধারণ হজ প্যাকেজে এবার ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার টাকা, আর বিশেষ হজ প্যাকেজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এর সঙ্গে কোরবানি বাবদ ৭৫০ রিয়ালের সমপরিমাণ অর্থ সঙ্গে নিতে হবে।

অন্যদিকে এবার উড়োজাহাজ ভাড়া প্রায় ২৭ হাজার টাকা কমিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজের মূল্য কমানো হয়েছে। তবে এবার খাবার খরচ হজ প্যাকেজে ধরা হয়নি।

সরকারিভাবে এবার প্যাকেজ-১ এর সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা। আর যারা সাধারণ প্যাকেজ-২ নেবেন, তাদের সর্বনিম্ন খরচ দিতে হবে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা।

এর সঙ্গে খাবার বাবদ আরও ৪০ হাজার টাকা এবং কোরবানি বাবদ ৭৫০ সৌদি রিয়ালও গুনতে হবে। সেই হিসাবে হজ প্যাকেজের খরচ আগের চাইতে খুব একটা হেরফের হয়নি।

তাছাড়া প্যাকেজ-১ এ খরচ কমানো হলেও আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে মক্কা ও মদিনা থেকে অনেকটা দূরে।

এভাবে সুবিধা কমিয়ে প্যাকেজ মূল্য কমানোর বিপক্ষে হাবের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী।

তিনি বলেন, হজের বিমানভাড়া একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি দিয়ে আরও যৌক্তিক করা যেত। ভাড়া কমানো গেলে হয়তো আরও কিছু হজযাত্রী বাড়ার সুযোগ থাকত।

এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে ১০ হাজার ১৯৮ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি ১ লাখ ১৭ হাজার হজযাত্রী যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে। 

২০২৪ সালের হজে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের বিপরীতে হজে গিয়েছিলেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন। ৪১ হাজার ৯৪১ জনের কোটা ফাঁকা ছিল। 

এর কারণ হিসেবে হজে যেতে ইচ্ছুকরা অভিযোগ করেছেন, যারা আগে হজে গিয়েছেন, তাদের বর্তমান তুলনায় অনেক কম খরচ করতে হয়েছে। যদিও বর্তমান সরকার খরচ কিছুটা কমিয়েছে। কিন্তু তা আশানুরূপ নয়। 

তবুও নানা অযুহাতে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের যে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তা অনেক বেশি। ফলে আমরা যারা প্রয়োজনের বাহিরে হজে যেতে চাই তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। 

আগে দেখা যেতো একবার হজে যাওয়ার পর অনেকে ফের হজে যেতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অনেকে হজে না গিয়ে কম খরচে ওমরায় যাচ্ছে। ফলে হজযাত্রীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। ফলে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাবকে খরচ কমাতে হবে। নয়তো এবারো হজ ফ্লাইট খালি যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। 

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়