ধর্ম নিরপেক্ষ তরুণরা নতুন বাংলাদেশ চায়: প্রধান উপদেষ্টা
ফাইল ছবি
জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে মাথাচাড়া দেবে না বলে আশ্বস্ত করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, তরুণরা ধর্মনিরেপক্ষ এবং তারা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায়।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি।
শপথ নেয়ার পর থেকে দুর্নীতি ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি সংস্কারে নেমেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। সেই প্রচেষ্টায় সুনাম কুড়িয়ে যাচ্ছেন বিশ্ব মহলে। তারই অংশ হিসেবে এ বছর দ্য ইকোনোমিস্টের বর্ষসেরা দেশের তালিকায় জায়গায় করে নেয় বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছে এ ব্রিটিশ সাময়িকী।
সংবাদমাধ্যমটির সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে আসে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে।
সাক্ষাৎকারে উপস্থাপক বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন করলে জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমি আশ্বস্ত করছি, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না। দেশের তরুণ সমাজ ধর্ম নিয়ে নিরপেক্ষ। তারা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায়। আর এই তরুণরা বিশ্ব পরিবর্তন করতে পারে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, এটি শুধু একটি দেশ বা আরেকটি দেশ পরিবর্তনের বিষয় না। বাংলাদেশ যা করেছে এটি তরুণরা কতটা শক্তিশালী এর একটি উদাহরণ।
দ্য ইকোনমিস্ট ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে জবাবে বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচনের পর নিজের স্বাভাবিক কাজে ফিরতে চান। জীবনভর যে কাজে ডুবে ছিলেন, সেই কাজেই আবারও যুক্ত হতে চান। এমনকি তার এই কাজকে তরুণ সমাজ ভালোবাসে বলেও মন্তব্য করেন ইউনূস।
১৫ বছরের স্বৈরাচার সরকারের পতন হওয়ায় সম্প্রতি দ্য ইকোনমিস্টের ২০২৪ সালের কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার খেতাব জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকারটি নেয় ব্রিটিশ সাময়িকীটি।
সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা তরুণীদের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, আমাদের উচিত তরুণ-তরুণীদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। বিশেষ করে তরুণীদের ওপর। তরুণ-তরুণীদের ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত যাতে তারা নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমি আমার নিয়মিত কাজে ফিরে যেতে পারলে খুশি হব। যা আমি সারা জীবন ধরে করেছি এবং তরুণরাও এটিকে ভালোবাসে। সুতরাং আমি আমার সেই দলে বা কার্যক্রমে ফিরে যাব যেটা আমি সারা বিশ্বে তৈরি করেছি।
বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, তাদের সুযোগ এসেছে এবং সক্ষমতাও রয়েছে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তিন তরুণ বর্তমানে আমার ক্যাবিনেটে আছেন। তারা দুর্দান্ত কাজ করছে। এই তরুণেরা গত শতাব্দীর তরুণ নয়। তারা এই শতাব্দীর। তারা অন্যান্যদের মতোই সক্ষম।
বাংলাদেশ সম্পর্কে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমাদের এবারের বিজয়ী বাংলাদেশ, যারা এক স্বৈরশাসককে উৎখাত করেছে। আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, যিনি সাড়ে ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশটি ১৫ বছর ধরে শাসন করছিলেন। দেশের স্বাধীনতার হিরোর এক কন্যা হিসেবে তিনি একসময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি দমন শুরু করেন, নির্বাচনে কারচুপি করেন, বিরোধীদের কারাগারে পাঠান এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তার শাসনামলে বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।
তারা আরও বলেছে, বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের সময় প্রতিশোধমূলক সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সেখানে রয়েছে একটি অস্থায়ী সরকার, যা ছাত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সমর্থন পেয়েছে। এই সরকার শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছে। ২০২৫ সালে এই সরকারকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করতে হবে এবং কবে নাগাদ নির্বাচন আয়োজন করা হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। এর আগে নিশ্চিত করতে হবে যে দেশটির আদালত নিরপেক্ষভাবে চলছে এবং বিরোধী দলগুলোকে সংগঠিত হওয়ার সময় দেওয়া হয়েছে। এর কোনোটিই সহজ হবে না।
প্রসঙ্গত, বর্ষসেরা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম ঘোষণার কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক এই গণমাধ্যম বলেছে- সবচেয়ে ধনী, সুখী বা নৈতিকভাবে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকারী কি না, সেই হিসাবে নয়; সেরা দেশ বেছে নেওয়া হয় আগের ১২ মাসে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে কি না, সেই বিচারে।
এবারের সেরা দেশ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত তালিকায় ছিল পাঁচটি দেশ। বাংলাদেশ ছাড়াও সিরিয়া, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ড রয়েছে এই তালিকায়। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকেই বেছে নেওয়া হয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি