ডরিনের ডিএনএ-তে মিল সাবেক এমপি আনারের
ছবি: সংগৃহীত
কলকাতায় নিহত ঝিনাইদহ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের খণ্ড খণ্ড দেহাংশের সঙ্গে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের ডিএনএ মিলেছে।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সূত্রে জানা গেছে, ভারতের সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে দুটি নমুনাই পাঠানো হয়েছিল। সেই দুটির ডিএনএ মিলে গেছে।
আরও জানা গেছে, নভেম্বরের শেষ দিকে ডরিন কলকাতায় এসেছিলেন। তখন তার ডিএনএর নমুনা নেয়া হয়। তারপর দুটি নমুনাই যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল।
সাবেক সংসদ সদস্য কলকাতার যে আবাসনে খুন হয়েছিলেন সেই সঞ্জীবা গার্ডেনের ওই আবাসনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় চারকেজি মাংস। অপরদিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কৃষ্ণমূর্তি এলাকার ভাঙ্গরের বাগজোলা খাল থেকে উদ্ধার হয় মানবদেহের একাধিক হাড়গোড়।
উদ্ধারকৃত ওই মাংস ও হাড়গোড় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় 'সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে' (সিএফএসএল)।
যদিও সেই খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ এমপি আনারের কি না, তা নিশ্চিত হতেই ডিএনএ পরীক্ষা জরুরি ছিল। সেক্ষেত্রে অনেক আগেই এমপি আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডোরিন কলকাতায় আসার কথা থাকলেও নানা কারণে তা পিছিয়ে যায়। অবশেষে গত নভেম্বর মাসেই কলকাতা এসে সিআইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তদন্তকারী সংস্থা।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১২ মে ভারতে আসে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। তিনি ওঠেন পূর্ব পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের পশ্চিমবঙ্গের বরানগরে বাড়িতে। পরদিন ১৩ মে চিকিৎসা করাতে যাবেন বলে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন তিনি। কিন্তু ওইদিন রাতেই নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের বহুতল আবাসনের ‘বিইউ-৫৬’ ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে তাকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
জানা যায়, বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীন এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। তার নির্দেশেই জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদসহ চারজন এমপি আনারকে ওই আবাসনে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বলে অভিযোগ।
এ ঘটনায় সিআইডির হাতে গ্রেফতারর হওয়া অন্যতম অভিযুক্ত বাংলাদেশি নাগরিক সিয়াম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, এমপি আনারকে খুন ও খণ্ড-বিখণ্ড লাশ লোপাটের কাজে যুক্ত ছিল সে। নিউটাউনের অভিজাত ওই সঞ্জীবা গার্ডেনের যে সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আসে তাতেও সিয়ামকে দেখা যায়।
সিআইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া আরেক অভিযুক্ত কসাই জিহাদ খুনের পরই ধারালো অস্ত্র দিয়ে এমপি আনারের শরীর থেকে মাংস আলাদা করে সেগুলোকে ক্যারিব্যাগে ভরে রাখে। পরে সেই লাশের টুকরোগুলোকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার ভাঙ্গড় ব্লকের কৃষ্ণমাটি খাল এলাকায় ফেলা হয়। জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনটাই জানতে পারে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে ওই খাল সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু হাড় উদ্ধার করে সিআইডির কর্মকর্তারা। অন্যদিকে আবাসনের সেকটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় কিমা করা ৪ কেজি মাংস। যা পরীক্ষা করে সিআইডি কর্মকর্তা ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী সেগুলো সেগুলো পুরুষ মানুষের হাড় ও মাংস।
ওই মামলার তদন্ত করতে কলকাতা এসেছিল তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল। সঞ্জীবা গার্ডেন, বাগজোলা খাল সহ বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনের পাশাপাশি দফায় দফায় সিআইডি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন ডিবি প্রধান।
এদিকে, গত ২৩ মে জিহাদ হাওলাদার এবং ৭ জুন সিয়াম হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর আগস্ট মাসে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত জেলা আদালতে প্রায় ১২০০ পাতার চার্জশিট জমা পড়ে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ), ৩০২ (অপরাধমূলক নরহত্যা), ২০১ (তথ্য প্রমাণ লোপাট) এবং ৩৪ (সংঘবদ্ধ ভাবে অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করা) এবং ১৪ ফরেনার্স আইনে মামলা দেয়া হয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এসবি