পলকের আলাদিনের চেরাগ আইসিটি খাত
জুনাইদ আহমেদ পলক। ছবি: সংগৃহীত
২০০৮ সালে নাটোরের সিংড়া উপজেলা থেকে প্রথমবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জুনাইদ আহমেদ পলক। সে সময় এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে নির্বাচন করেন তিনি। নির্বাচনী হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন তার ১৫ শতক কৃষি জমি, ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা এবং ৬০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে।
এরপর তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী হয়ে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান আইসিটি খাতের অন্যতম মাফিয়া জুনাইদ আহমেদ পলক।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা। তাই জয়ের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হওয়ার সুযোগ পান পলক। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হয়ে ওঠেন স্বেচ্ছাচারি।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে ধরা পড়ার পর, বার বার জনসম্মুখে ক্ষমা চাইছেন তিনি। আর তার অপকর্মের সবকিছুই জানতেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর পলকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও জয়ের সুপারিশে সব অভিযোগ থেকে বেঁচে যান তিনি। ফলে তিন মেয়াদে অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর চেয়ার বদল হলেও পলক একই পদে থেকে যান। টাকা দিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করেন।
তার দুর্নীতির অন্যতম উৎস ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি, এটুআই প্রকল্প, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, হাইকেট পার্ক, আইটি পার্ক ইত্যাদি। আইসিটি খাতে উন্নয়নের নামে এসব তৈরি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন পলক।
তথ্য ও প্রযুক্তিখাতের ২২ প্রকল্পের ২৫ হাজার কোটি টাকার অর্ধেকই লুটপাট হয়েছে। এ চিত্র দেখে বিস্মিত তদন্ত কমিটি। আর এসব লুটপাট হয়েছে সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নেতৃত্বে।
তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, প্রায় প্রতিটি প্রকল্পে পাওয়া গেছে লুটপাটের চিত্র। কেনাকাটা হয়েছে আকাশচুম্বী দামে। খরচও হয়েছে বেশুমার। কোন চাতুরিতে কত কোটি টাকা লোপাট হয়েছে এখন সে হিসাব কষছে তদন্ত কমিটি। শিগগিরই জমা হবে চূড়ান্ত রিপোর্ট।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, তদন্তে টাকার কোনো হদিস মিলছে না। ২২ প্রকল্পের প্রতিটির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতেন প্রতিমন্ত্রী। তার নির্দেশের বাইরে প্রকল্পের কোনো টাকা ছাড় হতো না। প্রকল্প পরিচালকদের নিয়মিত হাজিরা দিতে হতো প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে। সেখানে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের কোনো তথ্যই প্রকাশের সুযোগ ছিলো না। কিন্তু ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর, বের হয়ে আসছে থলের বিড়াল।
আইসিটিখাতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেয়া হয়েছিল ২২ প্রকল্প। এরমধ্যে ১৯ হাজার কোটি টাকার ১৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর। আর সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২২ প্রকল্পের বেশিরভাগ নেয়া হয় ২০১৬ সালে। যার কয়েকটি প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত। আবার কয়েকটি প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ কয়েক ধাপে বাড়ানো হয়। প্রতিটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তে। লুটপাটের জন্য এসব প্রকল্পের সরঞ্জাম সরবরাহের কাজ দেয়া হতো পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে।
দুর্নীতির জন্য তদন্তের মধ্যে থাকা প্রকল্পগুলোর অন্যতম হলো, ৩৩০ কোটি টাকার মোবাইল গেম ও অ্যাপ্লিকেশনের দক্ষতা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প; ৮৫৫ কোটি টাকার অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট প্রকল্প; ২৭ কোটি টাকার দীক্ষা-দক্ষতা উন্নয়ন ও শিক্ষা অনলাইন প্রকল্প; ৪৪২ কোটি টাকার উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প এবং ৩০ কোটি টাকার ডিজিটাল সিলেট সিটি শীর্ষক প্রকল্প।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে পলক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিয়েছেন এবং দ্বৈত নাগরিক হয়ে এমপি পদ নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।
ইতোমধ্যে পলক, তার স্ত্রী, পরিবার ও তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউ এ নির্দেশ দিয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি