News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:১৬, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
আপডেট: ১৮:৫৬, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

আইনজীবী হত্যা ও আন্দোলনে ইসকনের সম্পৃক্ততা নেই: চারু চন্দ্র

আইনজীবী হত্যা ও আন্দোলনে ইসকনের সম্পৃক্ততা নেই: চারু চন্দ্র

ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী। ছবি: সংগৃহীত

 
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা এবং সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের আন্দোলনের সঙ্গে ইসকনের কেনো ‘সম্পৃক্ততা নেই’ বলে দাবি করেছেন হিন্দু ধর্মীয় সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী।

বৃহস্পতিবার স্বামীবাগ আশ্রমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। 

সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন মহল থেকে যখন বাংলাদেশে ইসকন নিষিদ্ধ করার দাবি উঠতে শুরু করেছে, তখনই সংগঠনটির তরফে আনুষ্ঠানিক এ প্রতিক্রিয়া এলো।

চারু চন্দ্র দাস বলেন, চট্টগ্রামের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনার জন্য ইসকন বাংলাদেশকে ‘অন্যায়ভাবে দায়ী’ করার ‘অপচেষ্টা’ চলছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা এবং চলমান আন্দোলনের সঙ্গে ইসকন বাংলাদেশের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। এই মিথ্যাচার এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সড়ক দুর্ঘটনার মত বিষয়গুলোকেও ইসকনের চক্রান্ত বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”

ইসকনের সাধারণ সম্পদক বলেন, গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে কিছু মহল তাদের সংগঠনকে ‘বিতর্কিত করতে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ’ তুলে সমাজে ‘অস্থিতিশীলতা তৈরির অপচেষ্টা’ করছে। চট্টগ্রামের আইনজীবীর মৃত্যুর পর সে ‘অপচেষ্টা’ চরমে পৌঁছেছে।

“সম্প্রতি বংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইসকন বাংলাদেশকে নিয়ে মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেপ্রণোদিত অপপ্রচার ছাড়ানোর জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চলছে,” বলেন চারু চন্দ্র দাস।


তিনি বলেন, প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস, সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস এবং চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে অনেক মাস আগেই ‘সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে’ ইসকনের সাংগঠনিক পদ/পদবীসহ যাবতীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ফলে তাদের কার্যক্রম ইসকনের কার্যক্রম নয়।

এর আগে গত ৩ অক্টোবর ইসকনের আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে বলা হয়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ইসকন বাংলাদেশের মুখপাত্র না হওয়ায় তার বক্তব্য সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। এর ফলে লীলারাজ গৌর দাস, স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের বক্তব্য এবং কাজের জন্য ইসকন বাংলাদেশ ‘দায়ী না’।

ইসকনের সাধারণ সম্পদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, “ইসকন বাংলাদেশ কখনোই কোন ধরনের সাম্প্রদায়িক বা সংঘাতমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়। এবং ভবিষ্যতেও এর ব্যতিক্রম হবে না।”

ইসকনের সংবাদ সম্মেলনে চারু চন্দ্র দাস বলেন, “একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে এবং সরকারের প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি আমরা স্পষ্ট করেছি। কিন্তু কিছু বিশেষ মহল ইচ্ছাকৃতভাবে আমদের সংগঠনের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং ইসকনকে নিষিদ্ধ করার মত অযৌক্তিক দাবি তুলছে।”

চট্টগ্রামে ইসকন পরিচালিত মন্দির পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’ নামের একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অগাস্টে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধসহ আট দফা দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছেন ওই জোট।

জাতীয় পতাকার ওপর গেরুয়া পতাকা রাখার এক ঘটনায় গত ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামে চিন্ময় দাশসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। সেই মামলায় সোমবার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আদালতে তোলা হলে বিচারক জামিন নাকচ করে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর তার মুক্তির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন।

আড়াই ঘণ্টা বিক্ষোভের পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়। এসময় বিক্ষোভকারী এবং আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এক আইনজীবীকে হত্যা করা হয়।

ওই ঘটনায় বাংলাদেশে ইসকন নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক। একই দাবি নিয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন একজন আইনজীবী, যদিও উচ্চ আদালত সেরকম কোনো আদেশ দেয়নি।

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের ইংরেজি নাম ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস এর সংক্ষিপ্ত রূপ হল ইসকন। হিন্দু ধর্মগুরু অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ ১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্কে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

ইসকন মূলত গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদের অনুসারী। বর্তমানে বিশ্বে ইসকনের ৫০ হাজারের বেশি মন্দির ও কেন্দ্র রয়েছে। গত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও পূর্ব ইউরোপ, মধ্য এশিয়া এবং ভারত উপমহাদেশে এ সংগঠনের সদস্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়